ক্যাম্পাস আয়োজিত প্রাকৃতিক চিকিৎসা বিষয়ক সেমিনারে বিশিষ্ট এপি থেরাপিস্ট ও গবেষক আবদুর রাজ্জাক
এপি থেরাপী রোগ নিরাময়ই করে না, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়
সুস্থ-সবল-আলোকিত জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ক্যাম্পাস অন্যান্য কর্মসূচির পাশাপাশি নিয়মিত পরিচালনা করছে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচি, ওয়ার্কশপ ও সেমিনার। সে ধারাবাহিকতায় ৩০ এপ্রিল ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হল প্রাকৃতিক চিকিৎসা এপি থেরাপীর ওপর এক বিশেষ সেমিনার। এতে বক্তব্য রাখেন এপি থেরাপী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা জনাব আবদুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক জনাব জিল্লুর রহমান, সহ-সভাপতি জনাব আবিদ হোসেন প্রমুখ। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এবং ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র -এর মহাসচিব এম হেলাল। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট এপি থেরাপিস্ট জনাব মোঃ খায়রুল বাশার, আকুপ্রেশার থেরাপিস্ট সিরাজুল মনির, কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার উপদেষ্টা জনাব মোহাম্মদ মোস্তফা প্রমুখ।
আবদুর রাজ্জাক
মৌ-গবেষণার জন্য ১৯৮৭ সালে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত জনাব রাজ্জাক বলেন মৌমাছির সাহায্যে রোগ নিরাময়ের বিজ্ঞান ভিত্তিক চিকিৎসা এপি থেরাপি। আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি এপি থেরাপি চলছে, এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানকে পাশ কাটিয়ে বা ছাড়িয়ে যাবার কোন বিষয় নয়। Globally এপি থেরাপি চিকিৎসায় যা হচ্ছে, তা বিজ্ঞান ভিত্তিতেই হচ্ছে।
দু’টি শব্দ এপি এবং থেরাপি; এপি অর্থ মৌমাছি আর থেরাপি মানে চিকিৎসা পদ্ধতি। ঔষধ ও পুষ্টির উৎস হিসেবে মৌমাছির যে যে উপাদান মানব কল্যাণে ব্যবহৃত হয়, তা হল মধু, বী-ভেনম বা মৌমাছির হুলের বিষ, রয়েল জেলী বা রানী মৌমাছির খাবার, পোলেন বা পরাগরেণু, প্রপোলিস বা মোম আঠা, মোম, এপিনালিন প্রভৃতি। এসব উপাদান মৌমাছির বাসা থেকে উদ্ধার করা যায়।
স্বাস্থ্য গবেষক এবং এপি থেরাপির প্রতিষ্ঠাতা আবদুর রাজ্জাক বলেন এপি থেরাপিতে স্বপ্নে-পাওয়া ঔষধের স্থান নেই। এখানে যা কিছু হয়, বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতেই হয়। বিজ্ঞানের একটা শাখা নিয়ে আমরা কাজ করি, আমরা প্রাকৃতিক চিকিৎসা পরিচালনা করি।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রার এ যুগে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঔষধ শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটছে, ধাপে ধাপে পৌঁছে যাচ্ছে উন্নতির উচ্চশিখরে। তবে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে ভুল চিকিৎসার নজিরও কম নয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞান কোন গোপনীয় বিষয় নয়। এটি বহুমাত্রিকতা লাভ করেছে। ব্যথা নিরাময়ে এপি থেরাপী খুবই কার্যকর। এপি থেরাপীতে ক্যান্সার রোধের প্রসেস বের করেছেন গবেষকরা এ পদ্ধতিতে বেশ কিছু ক্যান্সার রোগী সুস্থও হয়েছেন। ভীমরুল-বোলতার ঞড়ীরহ থেকে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা হচ্ছে। বিষয়টি অনেকটা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার ন্যায়, বিষ দিয়ে ক্যান্সার-বিষ থেকে উপসম লাভের উপায়। এখানে গোঁজামিল দিয়ে চিকিৎসার সুযোগ নেই।
এপি থেরাপীর ঔষধ শুধু রোগ নিরাময় করে না, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও বাড়ায়। মৌমাছি নিয়ে যা কাজ হচ্ছে, তা একটি লাগসই প্রযুক্তি। এপি থেরাপি রোগ প্রতিরোধী, আকুয়া ইমিউনাইজেশন। এটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা পদ্ধতি নয়। এ চিকিৎসার চিকিৎসক সর্বদা জবাবদিহি থাকবে।
জিল্লুর রহমান
এপি থেরাপি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান বলেন আমাদেরকে প্রাকৃতিক চিকিৎসা, হার্বাল খাদ্য ও পথ্য ব্যবহার করতে হবে; একাত্ম হতে হবে প্রকৃতির সাথে। আমি অর্গানিক আন্দোলনের সাথে জড়িত। চাল-ডাল-গম-লবণ সবকিছু উৎপাদন করি কেমিক্যাল সার ছাড়া। শাক-সব্জি, ফলমূল, মৌসুমী বিভিন্ন ফল খাই। বিদেশী আঙ্গুর, আপেল খাই না। সিলেটে আমার খামারে দেশীয় ফলের চাষ হয়। ৪০ বছর অনাবাদী থাকা হাওরে শস্য উৎপাদন করেছি। জৈব সার দিয়ে আমি যে চাষাবাদ করেছি, তাতে উৎপন্ন ফসল রাসায়নিক সারের চেয়ে বেশি হয়েছে। সকলের কাছে অনুরোধ, কেমিক্যাল দিয়ে আপনারা এ সোনার মাটিকে নষ্ট করবেন না।
আবিদ হোসেন
আকুপ্রেশারিস্ট আবিদ হোসেন বলেন আমি আকুপ্রেশার নিয়ে কাজ করি, এ নিয়ে ক্যাম্পাস আয়োজিত নিয়মিত সেমিনারে আলোচনা করি। রাজ্জাক সাহেবের শিষ্যত্ব নিয়ে এপি থেরাপী নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করছি। এপি থেরাপীতে কম খরচায় চমৎকার সাফল্য পাওয়া যায়। এর কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াও নেই।
এম হেলাল
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এবং ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের মহাসচিব এম হেলাল বলেন, এপি থেরাপীর ওপর আলোচনা আমাদেরকে প্রাকৃতিক চিকিৎসার আরও একটি পথ দেখাল। প্রাকৃতিক চর্চা এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসার ওপর এখানে অনেক প্রোগাম হয়, ছাত্র-যুবকরা অনেক উপকৃত হয়। আমরা সমাজ পরিবর্তন, মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনের ওপর কাজ করি।
বক্তব্য প্রদান শেষে এপি থেরাপি ফাউন্ডেশনের সভাপতি জনাব আবদুর রাজ্জাক উপস্থিত সাংবাদিকসহ অন্যান্যের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। ক্যাম্পাস পরিবারসহ অন্যান্য সকলকে তিনি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় নিজস্ব মৌমাছির খামার পরিদর্শনেরও আহ্বান জানান।