ক্যাম্পাস’র প্রাতিষ্ঠানিক অনুশীলন | উন্নততর মানুষ হওয়ার মন্ত্র
স্বর্না শারমিন
উপ-সহকারী পরিচালক
মন্ত্র! শব্দটি শুনেই মনে হয় কোন কালো যাদু-টাদু হবে হয়ত। কিন্তু না, এগুলো যাদু ঠিকই তবে কালো নয়- দুধের মত সাদা অর্থাৎ ভাল। ক্যাম্পাস’র ৬টি মন্ত্র আছে, যা আমরা ক্যাম্পাস কর্মীরা নিজেদের মধ্যে লালন করি এবং পরিবার-পরিজনদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। মন্ত্রগুলো হল-
১। যুক্তিভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক আচার-আচরণ করা;
২। অন্যের অধিকার ও নিজ দায়িত্বের প্রতি সচেতন হওয়া; ৩। ন্যাচারাল হওয়া তথা সহজ-সরল ও স্বাভাবিক থাকা;
৪। ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল হওয়া;
৫। Thankful & Grateful হওয়া;
৬। ধর্ম-কর্ম পালন ও অন্যের ধর্মকে সম্মান করা।
উপরোল্লিখিত ৬টি বিষয় আত্মস্থ ও অনুশীলনের মাধ্যমে সমাজে superior human being হওয়ার সহজ সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়গুলোর প্রণেতা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এম হেলাল স্যার। ক্যাম্পাস’র নিয়মিত স্টাফ সভায় একদিন স্যার এ বিষয়গুলো আলোচনা করলেন। বললেন- যে যত বেশি সহজ-সরল, তার জন্য এগুলো আত্মস্থ করা এবং এর সুফল ভোগ করা তত সহজ। তারপর থেকে স্যার মাঝে-মধ্যেই এ বিষয়গুলোতে স্টাফদের কার কতটুকু অগ্রগতি হল, কে কত শতাংশ রপ্ত করতে পারল -তা মনিটরিং করেন।
প্রিয় পাঠক, আরও সহজভাবে বোঝার জন্য এবার চলুন বিষয়গুলোর গভীরে যাই।
যুক্তিভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক আচার-আচরণ করা
অযৌক্তিক কথা বা কাজ কিংবা অযৌক্তিক আচার-আচরণ আমাদের কারুর কাম্য হতে পারে না। কথায় ও কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকলে যুক্তিহীনতা বা অন্যায়-অনাচার সেখানে দানা বাঁধতে পারে না; ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা সেখানে হবেই হবে। সৃষ্টিকর্তা বিবেক-বুদ্ধি সবার মধ্যেই দিয়েছেন। কিন্তু পার্থক্য এই যে- কেউ সঠিক ব্যবহার করে, আর কেউ অপব্যবহার করে। আবার কারও কারও বিবেক চিরকাল সুপ্তই থেকে যায়। আমরা প্রত্যেকে যদি নিজেদের মধ্যে যুক্তিভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক আচরণ লালন করতে পারি, পালন করতে পারি; তবে যুক্তিভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক অর্থাৎ ভারসাম্যময় সম্প্রীতির সমাজ বা বিশ্ব গড়ে তোলা কঠিন কিছু নয়।
অন্যের অধিকার ও নিজ দায়িত্বের প্রতি সচেতন হওয়াঃ
দায়িত্বশীল হতে হবে- নিজ কর্তব্যের প্রতি এবং অন্যের অধিকারের প্রতি। আমরা কেউ কেউ হয়ত দায়িত্বশীল ঠিকই। কিন্তু তা শুধু ‘আমি’ স্বত্তা বা আমিত্বের গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ। অর্থাৎ শুধু নিজের স্বার্থ বোঝা; এক কথায় স্বার্থপরতা। কিন্তু আমিত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির যে অধিকার আমার প্রতি রয়েছে -এটা যেন আমরা ভুলেই থাকি। এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। একজন ডাক্তার ওযু করে এসেছেন, নামাজের ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে। এমন সময় খবর এল- তার চিকিৎসাধীন মুমূর্ষু রোগীর অবস্থা হঠাৎই বেশি খারাপ হয়ে মারা যাওয়ার উপক্রম। সে মুহূর্তে কোন্ কাজটি আগে করা ডাক্তারের দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক হবে? ধর্মকর্মের দায়িত্ব না কি রোগীর প্রতি দায়িত্ব? এর সঠিক উত্তর বুঝতে পারলে, দায়িত্বশীলতার মর্মার্থ বুঝতে কোন অসুবিধা হবে না। আমরা যারা নিজ দায়িত্বের প্রতি অবহেলা বা অন্যের অধিকার হরণ করার চেষ্টা করি, তাদের জানা উচিৎ- প্রকৃতির প্রতিশোধ বড়ই নির্মম। দায়িত্বহীনতা, অন্যের অধিকারের প্রতি দাসীনতার বিচারে প্রকৃতি কিন্তু ভুল করে না।
ন্যাচারাল হওয়া তথা সহজ-সরল ও স্বাভাবিক থাকা
এর অর্থ হল প্রকৃতির স্বাভাবিকতার সাথে নিজেকে align করা। অর্থাৎ মেকী বা কৃত্রিমতা পরিহার করে সহজ-সরল তথা সৎ থাকা। যে যেমন, তার কথায় ও কাজে তথা সার্বিক আচরণে ঠিক তেমনটিই ফুটিয়ে তোলা। এক কথায়, সাধু না সাজা বরং সাধু হওয়া। যেমনটি স্যার প্রায়ই বলেন- সাধু হওয়া ভাল, সাধু সাজা ভাল নয় অর্থাৎ আর্টিফিশিয়ালিটি বাদ দিয়ে স্রেফ ন্যাচারালিটি। যেমন- বুদ্ধিমান হওয়া ভাল, অতি বুদ্ধিমান বা চালাক হওয়া ভাল নয় Because excess of anything is bad.
ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল হওয়া
ক্ষমা মহৎ গুণ। আমরা সবাই জানি ও বুঝি ক্ষমার মহত্ব, কিন্তু সমস্যা একটাই- ক্ষমা করতে জানি না। এটা খুবই কষ্টসাধ্য, তাই না? কিন্তু না। আপনি চাইলে এটাও আপনার দ্বারা খুব সহজেই সম্ভব। রবী ঠাকুর কিংবা মাইকেল জ্যাকসন না হয়েও আপনি হতে পারেন চিরঞ্জীব। কেউ আপনার সাথে যত বেশি গরম, আপনি তার সাথে ততই নরম অর্থাৎ স্বাভাবিক। আপনি সহজ, স্বাভাবিক ও ব্যালেন্সড্ থাকলে যেকোন মানুষ বা পরিবেশকে জয় করা কোন ব্যাপারই নয়। একসময় অন্যরা আপনার প্রশংসা করবেই।
Thankful & Grateful হওয়া
আর কিছু কাউকে দিতে না পারি, কারও জন্য কোন উপকার করতে না পারি; কেউ যদি আমার জন্য কিছু করে, তাকে অন্ততঃ একটা ধন্যবাদতো দেয়াই যায়, তাই নয় কী? কিন্তু না। আমাদের এমন একটা ভাব- যেন ধন্যবাদ দিলে ছোট হয়ে যাব, নয়তো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। কারও কারও ধন্যবাদ দেয়ার মানসিকতা থাকলেও সেটা আবার রিক্সাওয়ালা, লিফট্ম্যান, বাসার কাজের লোককে বাদ দিয়ে। অথচ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এরাই সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে বা উপকারে আসে। আমি একবার এক রিক্সাচালককে ভাড়া দিতে দিতে ‘ধন্যবাদ’ বললাম। সে যেন আমার কাছ থেকে এ শব্দ আশা করেনি। তাই আমার ধন্যবাদ শুনে ভাষাহীন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার চোখে যে খুশির ঝলক দেখেছিলাম, তাতে আমার মনে হয়েছে- আমার প্রতিও যেন তার ভাষাহীন শুভকামনা বিচ্ছূরিত হচ্ছে।
ধর্মকর্ম পালন ও অন্যের ধর্মকে সম্মান করা
কাজের পাশাপাশি নৈতিক চরিত্র গঠনে কতখানি নজর দেয় ক্যাম্পাস, তা এ আহ্বানে সুস্পষ্ট। ক্যাম্পাস-এ নামাজের জন্য রয়েছে অত্যন্ত সুন্দর ব্যবস্থা। ক্যাম্পাস’র পুরুষ স্টাফ ও কর্মীরা সেখানে নিয়মিত জামায়াতে নামাজ আদায় করেন। এর কোন ব্যতিক্রম আমি এখন পর্যন্ত দেখিনি। নারী কর্মীরাও নিয়মিত নামাজ পড়ার চেষ্টা করেন। ক্যাম্পাস’র সহকারী পরিচালক কামাল হোসেন অত্যন্ত সহি ও সুমধুর কণ্ঠে নামাজের ইমামতি করেন। প্রতি বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব স্টাফদের নিয়ে যেকের এবং দোয়া-মাহফিল করেন। এজন্য তিনি ক্যাম্পাস’র ইমাম সাহেব নামে পরিচিত।
অন্যান্য বিশেষ মন্ত্র
ক্যাম্পাস’র স্টাফদের মধ্যে কেউ ধূমপান করেন না; এমনকি নতুন কোন ধূমপায়ী স্টাফ এলে দেখা যায়, ক্যাম্পাস’র পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর প্রয়াসে বা ক্যাম্পাস’র মন্ত্রে পড়ে তিনিও আপনা থেকেই ধূমপান ছেড়ে দেন। এটি যেন ক্যাম্পাস’র ওপর সৃষ্টিকর্তার রহমত। সব যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মিলে যায়। আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে হওয়ারই কথা। কারণ, ক্যাম্পাস অফিস এবং ক্যাম্পাস পরিবার সুরক্ষিত আছে মেডিটেশনের মাধ্যমে সৃষ্ট স্পিরিচুয়াল পিরামিডের বলয়ে।
ক্যাম্পাস প্রণীত উপরোক্ত ৬টি বিষয় যদি একটি আলমারির ৬টি ড্রয়ার হয়, তবে আলমারিটির নাম হবে, প্রো-একটিভ এটিচিউড। আমরা ক্যাম্পাস কর্মীরা সকলে প্রো-একটিভ এটিচিউড প্র্যাকটিস করছি, আপনারাও করুন এবং অন্যদের উৎসাহিত করুন। ও হ্যাঁ.. ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় প্রো-একটিভ এটিচিউড বিষয়ক সেমিনার। ক্যাম্পাস আয়োজিত এ সেমিনারে আপনারা সকলে আমন্ত্রিত।