ক্যাম্পাস এ আমার ১৬ বছর অথচ মনে হয় এইতো সেদিন..
মোহাম্মদ মোস্তফা,
কন্ট্রিবিউটর, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা ৪ দশকে পা রেখেছে। পত্রিকা প্রকাশনার বাইরেও গড়ে তুলেছে ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিএসডিসি); ডালপালা মেলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এর কর্মপরিধি। জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনে নিবেদিত এ প্রতিষ্ঠানের বহুমুখী কর্মসূচি শুধু যে চমৎকার তা নয় এর পাশাপাশি বলিষ্ঠ প্রত্যয়ে সমাজকে এগিয়ে নেয়া, চিন্তার পরিবর্তন ঘটিয়ে Superior Human Being তথা উচ্চ গুণসম্পন্ন আলোকিত মানুষ গড়ে তোলাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য। দেশ উন্নয়ন ও জাতি জাগরণের লক্ষ্যে ক্যাম্পাস’র বহুমুখী কর্মসূচির মাঝে নিজেকে এমনভাবে মিশিয়ে নিয়েছি যে, এখন আর দশজন থেকে আমরা বহু বিষয়েই আলাদা; এগিয়ে চলেছি সুদূরপ্রসারী অগ্রযাত্রায়। টেনশন নেই, দুর্ভাবনা নেই যেন ভিন্ন জগতের মানুষ। সমাজে ও জাতিতে ক্যাম্পাস’র এ পজিশন একদিনে গড়ে ওঠেনি। এর পেছনে রয়েছে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা, দুঃখ-কষ্ট বরণ, নিত্যনব পরিকল্পনা-সংস্কার-সংস্করণ। আজকের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে অতীতের সে দিনগুলোর কথা মনের ক্যানভাসে ভেসে ওঠে।
১৯৯৬ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর নতুন কিছু করার কথা ভাবছিলাম। সরকারি চাকুরে হিসেবে ২৬ বছর যে কাজ করেছি, তা আর করতে মন চাইছিল না। দেশ ও সমাজের জন্য কিছু করার ইচ্ছা হচ্ছিল। এতে একঘেয়েমি আসবে না, দেশ ও সমাজকেও কিছু দিতে পারব। স্ত্রীর সাথে আলাপ করলাম; সে বললো তুমি নোয়াখালী সংক্রান্ত বিষয়ে যখন আগ্রহী, তখন লক্ষ্মীপুর বার্তা অফিসে যোগাযোগ করো, তারা আঞ্চলিক উন্নয়নে কাজ করে। কথাটা আমার পছন্দ হলো।
আমার সরকারি চাকরির কর্মস্থল জীবন বীমার প্রধান অফিসে জনসংযোগ দপ্তরে লক্ষ্মীপুর বার্তা’র সৌজন্য কপি নিয়মিত যেত। সেই সূত্র ধরে একদিন লক্ষ্মীপুর বার্তা’র অফিসে আসি। অফিস ছিল মতিঝিলের মডার্ণ ম্যানসনে। এ অফিস থেকে শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন বিষয়ক পত্রিকা ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পা’ও প্রকাশিত হয়; একই সম্পাদকের সম্পাদনায়। প্রথম দিন সেখানে গিয়ে সম্পাদক সাহেবের দেখা পেলাম না।
এরপর আরেকদিন সন্ধ্যার পর মডার্ণ ম্যানসনে গেলাম, সেদিন সম্পাদক এম হেলাল সাহেবের সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে সাদরে গ্রহণ করলেন। সাক্ষাতের উদ্দেশ্য জানানোর পর বললেন, আপনি কাল থেকে লক্ষ্মীপুর বার্তা’র সহকারী সম্পাদক নুরুল আমিনের সাথে কাজ করবেন; নুরুল আমিন আপনার ফেনী জেলার লোক, বিদেশ চলে যাবে। কাজেই লক্ষ্মীপুর বার্তা আপনিই দেখবেন। এভাবেই মডার্ণ ম্যানসনে লক্ষ্মীপুর বার্তা’র ডেস্কে আমার কাজ শুরু হলো।
মডার্ণ ম্যানসনে লক্ষ্মীপুর বার্তার সাথে দিনগুলো আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে কেটেছে। আমি এবং অনুজপ্রতিম সহকর্মী গিয়াস উদ্দিন লক্ষ্মীপুর বার্তা’র বিশেষ সংখ্যার বিজ্ঞাপন সংগ্রহের জন্য বৃহত্তর নোয়াখালীর শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের অফিসে অফিসে গিয়েছি। রাজধানীর রাস্তার রুটগুলো দু’জনে ভাগ করে নিয়ে আমরা কাজে নামতাম। পত্রিকার বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাদের বিচিত্র অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হয়েছে, যা আবার পরবর্তী কর্মধারায় প্রতিফলিত হয়েছে।
মডার্ণ ম্যানসনের স্মৃতি এখনও সমুজ্জ্বল। দুপুরে অফিসে ফিরে অনুজপ্রতিম সহকর্মী ইউসুফ আলী রানার তৈরি খাবার খেতাম। প্রচন্ড ক্ষুধার মধ্যে সে খাবার ছিল অমৃতের মতো। রান্নায় পটু না হলেও তার আন্তরিকতাপূর্ণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি খাবারের স্বাদ অন্যরকম মনে হতো। সে সময়ে সম্পাদক সাহেবসহ অফিসের সবাই সে খাবার খেতেন। দুপুরের খাবার এবং বিকাল ও সন্ধ্যার নাস্তা তখন সবার জন্য ছিল ফ্রি।
মডার্ণ ম্যানসন থেকে আমার যাত্রা শুরু হলেও ক্যাম্পাস পত্রিকা এবং লক্ষ্মীপুর বার্তা’র অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকার আজিমপুরের ছাপড়া মসজিদ সংলগ্ন ইউনিভার্সিটি প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স (UPP) প্রেসের অফিস থেকে। সেখান থেকে ঠাঁই হয় মতিঝিলের মডার্ণ ম্যানসনে। তবে ক্যাম্পাস এখানেই থেমে থাকেনি, তার দৃষ্টি সুদূরে প্রসারিত। অন্যকেও যেমন বড় স্বপ্ন দেখায় উদ্বুদ্ধ করে ক্যাম্পাস, তেমনি নিজের জন্যও রয়েছে বড় স্বপ্ন, বৃহৎ পরিকল্পনা।
এ স্পিরিটে একদিন শুনলাম তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজার ১৩ তলায় আমাদের অফিস ক্রয় করা হয়েছে। এবার আর ভাড়াটে নয়, আমরা নিজেরাই অফিস মালিক, সেজন্য সবাই আনন্দিত। ২০০০ সালের এক শুভদিনে মডার্ণ ম্যানসন থেকে আসবাবপত্র ও প্রচুর কাগজপত্র ৩৬টি ঠেলাগাড়িতে করে নিয়ে আমাদের নতুন ঠিকানা মেহেরবা প্লাজায় আগমন। দক্ষিণের খোলা জানালা, মন ভরে গেল; এখানকার কর্মপরিবেশে সবাই নতুনভাবে নবোদ্যমে কাজকর্ম শুরু করলেন। বিকশিত হয়ে উঠতে থাকল ক্যাম্পাস; সে সাথে স্টাফরাও। অফিসের নতুন নিয়ম-নীতি প্রবর্তিত হলো। ক্যাম্পাস অডিটোরিয়াম গড়ে তোলা হলো, জানালার পাশটা নানারকম ফুলের গাছে ভরে তোলা হলো; বাইরের প্রকৃতিকে নিয়ে আসা হলো অফিসের ভেতরে, আমাদের একান্ত কাছে। Be natural এ বাণী ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে থাকল ক্যাম্পাস’র আঙ্গিনায়। নতুন চেয়ার-টেবিল ছাড়াও খাবারের অত্যাধুনিক সরঞ্জাম যোগাড় হলো, দেড়শ-দু’শ লোকের আপ্যায়নে কোনো অসুবিধা হয় না। ইনফ্রা-রে চুলা, বারবিকিউ মেশিন, ফুড ওয়ার্মার, বড় বড় হটপট এবং লেটেস্ট প্রযুক্তির ড্রিমপটসহ অত্যাধুনিক তৈজষপত্রের বড় সংগ্রহ গড়ে উঠল। নিজস্ব রান্না ও বিশেষভাবে খাবার পরিবেশনের এ ব্যবস্থা ক্যাম্পাস-কিচেন নামে সুপরিচিত হয়ে উঠল। প্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা এতটাই লেটেস্ট হয়ে উঠলাম যে, রুটি মেকারে তাৎক্ষণিক বানানো গরম গরম রুটি দিয়ে সকাল-বিকাল নাশতা পরিবেশিত হতে থাকল প্রায়ই আমাদের জন্য।
ক্যাম্পাস’র নতুন অফিসে শুধু ঠাটবাটই বাড়ল না, কর্মযজ্ঞেও আসল নতুন স্পিরিট। ২০০৪ সাল থেকে শুরু হলো বিনামূল্যে কম্পিউটার ট্রেনিং কর্মসূচি, প্রথম ব্যাচে আমিসহ অফিসের মাত্র ৬ জন ছাত্র। সেই যে শুরু, বর্তমানে ডায়নামিক কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের এ কর্মসূচির ১৩৫টি ব্যাচে ৫ হাজারের ওপর ছাত্র-তরুণ কম্পিউটার প্রশিক্ষণ লাভ করেছে; ১১ বছর আগে শুরু হওয়া সেই কোর্স সিলেবাসেও এসেছে ব্যাপ্তি ও আধুনিকতা। এছাড়াও যুক্ত হয়েছে মাল্টি ডায়মেনশনাল আরও বহু কর্মসূচি।
ক্যাম্পাস’র নতুন অফিসে এসে লক্ষ্মীপুর বার্তা’র পাশাপাশি আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস’র কাজও করতে হয়। ক্যাম্পাস’র কর্মধারায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। নিয়ম-নীতি তৈরি হয়েছে, অফিস-শৃংখলা গড়ে উঠেছে, কাজকর্মে বরকত হচ্ছে। ক্যাম্পাস’র আবেদন ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। ২০২০ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে ক্যাম্পাস তার কর্মসূচি এগিয়ে নিচ্ছে; গড়ে তুলছে সুদক্ষ, চৌকস ও কর্মযোগী কর্মীবাহিনী। ক্যাম্পাস তার কর্মসূচির মাধ্যমে গড়ে তুলছে ডিজিটাল ইয়াং স্টার। এরাই হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার এবং আধুনিক প্রতিভাবান জাতি গঠন কর্মযজ্ঞের সহায়ক শক্তি।
ক্যাম্পাস অফিসের ব্যানার-ফেস্টুনে অনেক মূল্যবান বাণী শোভা পায়। যেমন
Our country is not poor. But we, the people are poor.
মন উন্নত হয়ে লাভ কি, যদি সে মন অন্য মনকে উন্নত করতে না পারে। জগতের সঙ্গে সম্পর্কশূন্য এরূপ উন্নত মন দিয়ে পৃথিবীর উপকার হয় না।
জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন, চিন্তা ও মননের দারিদ্র্য দূর করুন। জ্ঞানের মশালে বিদূরিত করুন দেশ ও জাতির সকল অন্ধকার।
দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধির স্বার্থেই আমাদের প্রত্যেককে এখন শুধু সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য অহর্নিশি সংগ্রাম করতে হবে; সে সংগ্রাম যত দীর্ঘস্থায়ী বা ক্ষণস্থায়ী হোক না কেন!
এরূপ নানা সেøাগানের সাথে ক্যাম্পাস অফিসে আরও দেখা যায়, বিগত দিনের ঐতিহাসিক মুহুর্তের ছবি। এর মধ্যে সাবেক সব রাষ্ট্রপতির সাথে ক্যাম্পাস পরিবারের ছবি। বিশেষত বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে ক্যাম্পাস’র সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন তরুণ ছাত্রনেতা এম হেলালের ছবিটি ক্যাম্পাস’র ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত করে রেখেছে। এছাড়া নিজস্ব দর্শনতত্ত্ব সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুনে সুশোভিত রয়েছে ক্যাম্পাস অফিস।
অফিস ও কার্যক্রমে পরিবর্তন আসার পাশাপাশি আমার কাজের ধারায়ও এসেছে পরিবর্তন। এখন আর আগের মতো বাইরে যেতে হয় না। খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রোগ্রাম থাকলে তার কভারেজ করতে যাই। এছাড়া ক্যাম্পাস অফিসে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়া-ওয়ার্কশপের প্রতিবেদন তৈরি করি; আগে ক্যাসেটে গৃহীত সাক্ষাৎকার ক্যাসেট প্লেয়ার থেকে শুনে লিখতাম। এখন ধারা পাল্টেছে; মোবাইলের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়, সেই রেকর্ডিং কপি কম্পিউটারে নিয়ে তা শুনে শুনে প্রতিবেদন তৈরি করি। এর ফলে কোনো না কোনোভাবে আমিও কম্পিউটারের কাজে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি আমার তরুণ কলিগদের সাথে। এছাড়াও বাইরে থেকে লেখা এলে এডিট করি, প্রুফ-এডিটিং করি। আমার সহকর্মী সিনিয়র উপ-সহকারী পরিচালক মনিরুজ্জামান এবং ওয়েব ডেভেলপার ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার রিমেল বড়–য়া থেকে কম্পোজ ম্যাটার পেলে সেগুলো সংশোধন করে দেই। বানানের ব্যাপারে আমি নিজ থেকে সচেতন, ভুল শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করি, মাঝে মধ্যে এর ব্যত্যয় হয়। সম্পাদক সাহেব আমাকে সর্বদিক দিয়ে সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করলেও এডিটিংয়ে ভুল হলে একটু ভ্রু-কুঁচকে ফেলেন। ভুল-ত্রুটি কমিয়ে দক্ষ ও চৌকস রূপে নিজকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে ক্যাম্পাস’র সদস্যরা অত্যন্ত সচেতন; এক্ষেত্রে পুরস্কার ও তিরস্কারের বিরল রীতি ক্যাম্পাস পরিবারের সদস্যদের অবিরাম উৎকর্ষ সাধনে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং লক্ষ্মীপুর বার্তা পত্রিকা নির্ভুলভাবে প্রকাশিত হয়ে চলেছে।
ক্যাম্পাস’র বহুমুখী কর্মসূচির মধ্যে প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড সেমিনার আমাকে বেশ আকর্ষণ করে। আমি এ সেমিনারের কভারেজ করতে করতে অন্য শ্রোতা-দর্শকদের মতো ক্ষণে ক্ষণে আন্দোলিত হই, উদ্বেলিত হই। এ প্রোএকটিভ আন্দোলন দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়–ক, ছাত্র-তরুণসহ সকল স্তরের মানুষকে উদ্বেলিত করুক, উজ্জীবিত করুক, নেতিবাচক চিন্তাধারা পরিহার করে তারা নতুন পরিবর্তিত মানুষ হিসেবে দাঁড়াক এটিই কামনা।
এছাড়া ক্যাম্পাস’র অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে মেডিটেশন, ইয়োগা, আকুপ্রেশার, রিফ্লেক্সোলজি, রেইকি ইত্যাদিতে আমি আগ্রহ সহকারে অংশগ্রহণ করি; ভালো ফলও পাই। সুস্থতা ও শতায়ু লাভের উপায় সম্পর্কিত ক্যাম্পাস সম্পাদকের নিজস্ব উদ্ভাবন ও ব্যতিক্রমী পরামর্শ আমরা সবসময় মনে রাখি। তিনি কেবল ক্যাম্পাস’র প্রতিষ্ঠান প্রধানই নন, তিনি আমাদের ক্যাম্পাস পরিবারেরও প্রধান। স্বাস্থ্যসুরক্ষা, মেডিটেশন ও হারবাল খাদ্য গ্রহণের জন্য তাঁর সতর্কবার্তা আমাদেরকে সবসময় অনুপ্রাণিত করে। উন্নত ও মহৎ জীবন গঠনে ক্যাম্পাস’র স্টাফ ও শিক্ষানবিশসহ সবাইকে তিনি যেভাবে উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন, তাতে আমরা কর্মক্ষেত্রে উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যক্তিগত-পারিবারিক জীবনেও অনেক সফল ও প্রতিষ্ঠিত হতে পারছি।
ক্যাম্পাস’র আরেকটি জমজমাট কর্মসূচি English & Smartness Course for Leadership। এম জি কিবরিয়া এর রিসোর্স পার্সন। ইংরেজি ভাষাকে দুমড়ে-মুচড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য সহজে বোধগম্য করে তিনি লেসন দিয়ে যাচ্ছেন। ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামের যে অংশে তিনি ক্লাস নেন, তার পাশেই আমার কাজের টেবিল। আমি তাঁর পাঠশালার একজন অনিবন্ধিত ও নিয়মিত ছাত্র। নিজেরই অজান্তে মাঝে মাঝে তাঁর কথা তন্ময় হয়ে শুনি। তিনি বৈচিত্রময় স্বরে, বিভিন্ন ভঙ্গিমায় ছাত্র-ছাত্রীদের লেসন দেন।
ক্যাম্পাস অফিস যাঁরা ভিজিট করতে আসেন, তাঁরা কিবরিয়া স্যারের ক্যারিশমাটিক পঠন পদ্ধতি দেখে বলেন নতুন করে এই ইংরেজি ক্লাসে ভর্তি হবার ইচ্ছা জাগে। ক্যাম্পাস’র প্রোএকটিভ সেমিনারের মতো স্মার্ট ইংলিশ ক্লাসও এরই মধ্যে আলোড়ন তুলেছে।
ক্যাম্পাস’র আরও যে একজন আমাকে বেশি আকৃষ্ট করে, তিনি সাইকিক মাহমুদুল হাসান মেডিটেশন কোর্সের প্রাণপুরুষ। হাসান ভাইয়ের কাছ থেকে মাঝে মধ্যে পরামর্শ গ্রহণ করি, তিনি সমস্যা বুঝে সানন্দে পরামর্শ দেন। মেডিটেশন আন্দোলনে মাহমুদুল হাসানের সাফল্য সম্পর্কে আমি খুব আশাবাদী।
ক্যাম্পাস অফিসে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপিত হয়েছে ২০০১ সালে। ফলে ক্যাম্পাস অফিসে কাজের পরিবেশ নিরাপদ। এছাড়াও মেডিটেশনের মাধ্যমে অদৃশ্য পিরামিড দ্বারা সুরক্ষিত রয়েছে এ অফিস। এখানে যেমন বাইরের নেগেটিভ বিষয় প্রভাব ফেলে না, তেমনি এখান থেকেও কেউ কোনো নেগেটিভ কাজ করতে পারে না। প্রকৃতি অটোমেটিক্যালি এতে বাধা দেয়।
ক্যাম্পাস’র কর্ণধার এম হেলাল সাহেব অফিস প্রশাসন, পত্রিকার আধুনিক প্রকাশনা, সমাজ উন্নয়ন এবং দেশ ও জাতি জাগরণমূলক বহুমুখী কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। সাথে সাথে সময়োপযোগী, চেতনা-উদ্দীপক বিভিন্ন কলাম লিখে চলেছেন। তাঁর গবেষণালব্ধ দু’টি মডেল এলাকাভিত্তিক স্কুলিং এবং অন্যটি ইউনিয়নভিত্তিক উন্নয়ন মডেল। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এ দু’টি বিষয় সুধী সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ক্যাম্পাস’র জ্ঞানমেলা সিরিজে উন্নতমানের বই প্রকাশের ব্যবস্থা করেছেন এম হেলাল। ইতোমধ্যে ক্যাম্পাস পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে ১৩টি বই।
ক্যাম্পাস’র স্টাফ-মিটিংগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আয়োজিত হয়। এখানে বিভিন্ন স্টাফের ভুল-ত্রুটি চিহ্নিত করে স্টাফদের সামগ্রিক উন্নয়নের ওপর জোর দেয়া হয়। ত্রৈমাসিক মূল্যায়ন, বাৎসরিক মূল্যায়নের মাধ্যমে স্টাফদের কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয় যা পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিবেচনার সময় কাজে লাগে।
এভাবেই বিভিন্ন ব্যতিক্রমী পরিকল্পনা-পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে ক্যাম্পাস। নিজের কাছেই অবাক লাগে এত দীর্ঘকাল ক্যাম্পাস’র সাথে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে। দেখতে দেখতে কীভাবে ১৬ বছর পেরিয়ে গেল, টেরই পেলাম না! তবে কি আমার অবসর গ্রহণের সময় হয়েছে? সরকারি চাকরিতে একবার অবসর গ্রহণ করেছি, কিন্তু অবসরে যেতে পারিনি; নতুন করে কাজে নেমে পড়লাম। এবার কী হবে! আমার ১ ছেলে, ১ মেয়ে; তারা দু’জনই বলে তুমি পত্রিকা থেকে যা পাও আমরা তার চেয়ে বেশি দেব, তুমি বিশ্রামে কাটাও, লেখালেখি করো। আমি তাদের বলি কয়েকটি বেসরকারি বীমা কোম্পানিতে ভালো বেতনের অফার পেয়েও যাইনি; টাকা এখানে মুখ্য নয়, আমি আমার কর্তৃপক্ষ, সহকর্মীদের যে স্নেহ-ভালোবাসা-সম্মান-মর্যাদা পাই তা কী কোনো ভালো বেতনের প্রাইভেট কোম্পানিতে পাওয়া যেত? এগুলো আমার উপরি পাওনা! স্বয়ং সম্পাদক সাহেব আলাপ প্রসঙ্গে আমাকে বলেছেন, আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্যাম্পাস স্টাডি সেন্টার ভবন নির্মিত হলে আপনার জন্য বিশ্রাম-উপযোগী একটি রুম রাখা হবে। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করবেন। সম্পাদক সাহেবের এ আশার বাণী আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে; তাঁর কথা তাৎপর্যপূর্ণ এবং আন্তরিক।
পারিবারিকভাবেও আমি নিশ্চিত হয়েছি যে, আমার ছেলে-মেয়েরা তাদের বুড়ো বাবা কিংবা বুড়ি মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবে না! আমার বয়স ৭৭ চলছে; এখনও রোজ সকাল ১০টার দিকে অফিসে আসি এবং রাত ৮টা বা ৯টা পর্যন্ত কাজ করি। যতদিন বেঁচে থাকি, পারিবারিক স্নেহ-ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বাঁচতে চাই। যদি কোনো কারণে ক্যাম্পাস এ নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যেতে না পারি, সেক্ষেত্রেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও লক্ষ্মীপুর বার্তা’র সাথে আমার যোগাযোগ থাকবে এবং আমৃত্যু এ চেতনা লালন করব!
ক্যাম্পাস সম্পর্কে আমি অত্যন্ত আশাবাদী, কারণ ক্যাম্পাস এখন আর পত্রিকাতে সীমাবদ্ধ নেই, এর কার্যক্রম সুদূর বিস্তৃত। ক্যাম্পাস একটি আন্দোলন; অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ক্যাম্পাস অফিস ভিজিট করেছেন, এর কার্যক্রম দেখে তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে ক্যাম্পাসকে ছায়া সরকার বলেও অভিহিত করেছেন। মানুষের চিন্তার পরিবর্তন ঘটিয়ে বিশেষ মানুষ তৈরির কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ক্যাম্পাস। মানুষের মস্তিষ্ক থেকে নেগেটিভ চিন্তা দূর করে তদস্থলে পজিটিভ চিন্তা স্থাপন ক্যাম্পাস কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য। ক্যাম্পাস নিত্য-নব আইডিয়া জেনারেট করে এবং মানুষকে বড় স্বপ্ন দেখায়।
ক্যাম্পাস’র আরেকজন অপরিহার্য ব্যক্তিত্ব অনারারি রিসার্চ ডিরেক্টর ড. নাজনীন আহমেদ। পেশায় তিনি একজন অর্থনীতিবিদ; নিজস্ব গবেষণাকাজ, ব্যক্তিগত-পারিবারিক-প্রাতিষ্ঠানিক-সামাজিক সকল দায়িত্ব ও কর্ম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের শত ব্যস্ততার মাঝেও ক্যাম্পাসকে দিয়ে চলেছেন অবিরত সময় ও সেবা। বিদেশে কম্পিউটার বিড়ম্বনার শিকার হয়ে এ বিরল মেধাবী, প্রতিশ্রুতিশীল অর্থনীতিবিদ ক্যাম্পাস এ কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছিলেন ২০০৪ সালে; নিজের কম্পিউটার দিয়ে। তাঁর এ দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ক্যাম্পাসকে আত্মবিশ্বাসী করেছে।
ক্যাম্পাস কর্মসূচিগুলোর চমৎকার আয়োজন, বিভিন্ন কোর্সের ব্যাচ-প্রতি উদ্বোধন ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ের জ্ঞানী-গুণীজনের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানগুলোকে সমৃদ্ধ ও প্রাণবন্ত করে তোলে। অতিথিগণকে ছাত্র-তরুণদের কাছে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরা হয়। এসব অনুষ্ঠান থেকে ছাত্র-যুবকরা পথের ঠিকানা পেয়ে যান।
ক্যাম্পাস’র হাতে বর্তমানে যে প্রকল্পটি রয়েছে, তা হলো ক্যাম্পাস স্টাডি সেন্টার ভবন নির্মাণ প্রকল্প। দেশের চিত্তশালী বিত্তশালীদের কাছে স্টাডি সেন্টার নির্মাণের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। এ সেন্টারটি এখন সময়ের দাবি। দানশীল সংস্কৃতিমনা ধনাঢ্য ব্যক্তিগণ উদার মন নিয়ে এগিয়ে আসলে এ স্টাডি সেন্টার গড়ে উঠতে বেশিদিন লাগবে না; সেই বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে স্বপ্নের বাস্তবরূপ দানে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি আমরা ক্যাম্পাস কর্মীরা।
আমি মেডিটেশনের মধ্যে দেখতে পাই নতুন স্টাডি সেন্টারে সকল সহকর্মী মিলে আনন্দ-উল্লাসের সাথে কাজ করছি; সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ক্যাম্পাস স্টাডি সেন্টার দেখছে বিস্ময় ও কৌতূহল নিয়ে। ক্যাম্পাস’র স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া, কিন্তু শিকড় মাটিতে প্রোথিত; ক্যাম্পাস স্বপ্ন ও বাস্তবের মেলবন্ধন। জয় হোক ক্যাম্পাস’র!
প্রথম প্রকাশঃ ডিসেম্বর ২০১৫