ক্যাম্পাস এবং আমার স্বপ্ন পূরণ

উম্মে সালমা নিপু
সিনিয়র এক্সিকিউটিভ

আমার প্রথম Corporate job ক্যাম্পাস এ; Just wow. আমি ২০০৬ এ মাস্টার্স শেষ করে একদম বেকারই বসেছিলাম। কেবল মনযোগ দিয়ে সংসারধর্ম পালনই ছিল আমার একমাত্র কাজ। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে হঠাৎ একটি স্কুলে নার্সারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। তখন মনে হয়েছিল, এটাই মেয়েদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত পেশা; মহৎ পেশাতো বটেই। জুলাই ২০০৯ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত শিক্ষকতাই করছিলাম।  যদিও এর মাঝে ক্লাস বদলেছি, স্কুলও বদলেছি। ভালোই লাগছিল; কিন্তু কোথায় যেন একটা অপূর্ণতা, হাহাকার; যদিও ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল, শিক্ষকতায় থেকে নিজেকে প্রমাণ বা প্রকাশ করার সুযোগ কতটুকু? কতদূর যেতে পারব? কেবল প্রশ্ন আর প্রশ্ন। এবার উত্তর খোঁজার পালা।
একদিন হঠাৎ করেই Jobsite এ Search দিলাম। চোখে পড়লো Senior Executive পদের জন্য The University Campus যোগ্য প্রার্থী খুঁজছে। ৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। দুঃসাহসের কাজটি করেই ফেললাম। কোনো অভিজ্ঞতা নেই আমার, তবু বায়োডাটা দিয়ে এলাম নিজেই। প্রচন্ড বৃষ্টি ছিল সেদিন; একদম ভিজে একসা হয়ে গিয়েছিলাম। 
যাই হোক, এবার অপেক্ষার পালা। দেখি আমাকে যোগ্য মনে করে কিনা। ২/৩ দিন পর ফোন এলো এবং সাক্ষাতের জন্য ডাকল। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ঠিক ঐ দিনই আরও তিন জায়গায় আমার ইন্টারভিউ ছিল। কেন জানি আমি কেবল ক্যাম্পাস অফিসেই চলে এলাম। 
প্রথম দিনেই ক্যাম্পাস’র আপ্যায়ন আমাকে মুগ্ধ করেছে। কোথাও যে বাদাম দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়, এটা এখানেই প্রথম দেখলাম। পরে জেনেছি, ক্যাম্পাস হারবাল খাদ্য গ্রহণে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে। আরও কয়েকজন এসেছিলেন সেদিন ইন্টারভিউ দিতে। তাদের সাথে আমিও অপেক্ষা করছি; কিছুক্ষণ পরে আমার ডাক এলো। ভয় পাচ্ছিলাম; মনে হচ্ছিল হয়ত কিছুই বলতে পারব না। ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এম হেলাল স্যার এবং ক্যাম্পাস’র অনারারী রিসার্চ ডিরেক্টর ড. নাজনীন আহমেদ ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন। তাঁদেরকে সহযোগিতা করেছিলেন উপ-সহকারী পরিচালক মনিরুজ্জামান এবং এক্সিকিউটিভ সোমা। ইন্টারভিউ রুমে ঢুকে নাজনীন ম্যাডামকে দেখেই মনে হলো, কোথায় যেন দেখেছি। ঠিকইতো! উনাকে আমি টেলিভিশনে দেখেছি। যে ভয় নিয়ে রুমে ঢুকেছিলাম, কেন জানি উনাদের দেখে তা কেটে গেল। খুব আন্তরিকতা নিয়ে আমার সাথে উনারা কথা বললেন। যে কাজের কথা বলা হলো, আমার সেই কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তারপরেও আমাকে উনাদের ভালো লেগেছে; আমি বুঝতে পারছিলাম বিষয়টা। মৌখিক সাক্ষাতের পর আমার লিখিত পরীক্ষা হলো। সেখানে যেসব প্রশ্ন ছিল, আমি তার কোনোটিরই মিথ্যা বা বানানো উত্তর দেইনি। মনে হয়, আমার এই সততা উনাদের ভালো লেগেছে।
লিখিত পরীক্ষার পর আবার অপেক্ষা। কিছুক্ষণ পরে স্যার ও ম্যাডাম আমাকে ডেকে বললেন, তোমার সাথে আরেকদিন কথা বলব। মনে মনে ভাবলাম আমার অভিজ্ঞতা নেইতো, তাই হয়ত আর ডাকবে না। এমনি বলার জন্য বলা!
কিন্তু দু’দিন পর ক্যাম্পাস থেকে ফোন করে আবার সাক্ষাৎ করতে বললো। ১৩ অক্টোবর আবার এলাম ক্যাম্পাস এ। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর স্যারের রুমে আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো। স্যার পত্রিকা ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছু কথা বললেন; আমাকেও কিছু জিজ্ঞাসা করলেন। এক পর্যায়ে বললেন, তুমি ২০ অক্টোবর জয়েন কর। আমিতো অবাক! স্যার বললেন, কাজ জানো না তাতে অসুবিধা নেই; কিন্তু কাজ জানার ও কাজ করার যে প্রচন্ড ইচ্ছার কথা তুমি লিখিতভাবে ও মৌখিকভাবে বলেছ, সে অদম্য ইচ্ছা বজায় থাকলেই চলবে। শেখার এবং করার যে ইচ্ছে আছে তোমার, তা দিয়েই তুমি সফল হবার চেষ্টা করতে থাকো। তোমাকে কাজ শেখানোর দায়িত্ব আমাদের। স্যারের এরূপ কথা শুনে সত্যি অনেক সাহস পেয়েছিলাম সেদিন। যথারীতি ২০ তারিখে অফিসে এলাম। এসে দেখি সবাই এত মন দিয়ে কাজ করছে যেন আর কিছুই নেই দুনিয়ায়; অনেক ভালো লাগলো। আমাকে সবাই সাহায্য করছিল এবং এখনও করছে। নতুন নতুন অনেক কিছুই শিখতে লাগলাম।
সেদিন একটা প্রোগ্রামও ছিল অফিসে, বিকালের দিকে। স্যার বলেছিলেন প্রথম দিনতো, তুমি ইচ্ছা করলে চলে যেতে পারো। তবে আমি যাইনি, ভাগ্যিস যাইনি। আর তাইতো সুযোগ হলো অনেক কিছু দেখার, শেখার। সে এক নতুন অভিজ্ঞতা। চলে গেলে এসব কীভাবে পেতাম! সেদিন থেকে শিখছি আর শিখছি। ভালোও লাগছে। আমাকে এত্ত বড় একটা সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমার স্যারকে ধন্যবাদ; ক্যাম্পাস’র প্রতি কৃতজ্ঞতা।
প্রথম প্রকাশঃ ডিসেম্বর ২০১৫