সমাজ উন্নয়নে ক্যাম্পাস
মোঃ মনিরুজ্জামান
সিনিয়র উপ-সহকারী পরিচালক
ছাত্র-যুবকদের চিন্তার পরিবর্তনে এবং সমাজ জাগরণের এক বিস্ময়কর প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘ক্যাম্পাস’। এ প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত হওয়ার আগে এর সম্পর্কে অতটা ধারণা করতে পারিনি। কিন্তু চাকরির সুবাদে সংশ্লিষ্ট হয়ে এখন বুঝতে পারছি পত্র-পত্রিকায় বা টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন প্রচার না করায় এ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বাইরে থেকে সম্যক ধারণা করা সত্যি মুশকিল। কিন্তু ভেতরে এলে অল্প দিনেই যে কারুর চিন্তা ও মননে সত্য ও ন্যায়ের কর্মস্পৃহা জাগাতে এ প্রতিষ্ঠানের পদ্ধতিগত কারিশমা অভূতপূর্ব। মানব মুক্তিতে এবং মানুষের চিন্তার জাগরণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা এবং ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র (সিএসডিসি) একে অপরের পরিপূরক।
২০০৯ সালের ১ ডিসেম্বর গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে আমি ক্যাম্পাস এ যোগ দিয়েছি। সে হিসেবে ক্যাম্পাস’র সাথে আমার সম্পর্ক বেশি দিনের নয়, কিন্তু এ অল্প সময়ের মধ্যে এখান থেকে যা শিখেছি, যা পেয়েছি তা ব্যাখ্যার ভাষা আমার নেই। এ প্রতিষ্ঠানের অনাড়ম্বর সাজ-সজ্জা, আতিথেয়তা, কাজের পরিবেশ, সহকর্মীদের সহযোগিতা বিশেষ করে গাছ দিয়ে সাজানো নির্মল পরিবেশ আমাকেতো বটেই, এখানে আসা যে কাউকে মুগ্ধ করে এবং তা তারা প্রকাশ্যেই বলে থাকেন।
এখন যে বিষয়টি নিয়ে আমি বলব, সেটি আমার লেখার শুরুতেই বলা উচিত ছিল। কারণ আমাদের দেশের হাতে গোনা কিছু লোক ছাড়া প্রায় সকলেই এ ব্যাপারে অসচেতন। বিষয়টি হল সময়ের মূল্য। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে ‘সময় মূল্যবান’; ‘সময় নদীর স্রোতের মতই বহমান, যা একবার চলে গেলে ফেরত আসে না’; ‘সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না’; ‘সময়ের কাজ সময়ে করো’ এ জাতীয় অনেক কথা শুনে আসছি। কিন্তু এ কথাটি মানতে বা সময় সচেতন লোক আমি নিজেও ছিলাম না এবং কাউকে দেখিওনি। জীবনের বেশ কিছু সময় ব্যয় করে যে মূল্য পাবার কথা ছিল, তার লক্ষ ভাগের এক ভাগও পেয়েছি কিনা সন্দেহ। তবে জীবনের বাকিটা সময়ের প্রাপ্য মূল্য একটুকুও হাতছাড়া হবে না, এটা আমার বিশ্বাস। এত জোর দিয়ে বলার কারণ ক্যাম্পাস-এ এসে শুনলাম, জানলাম, দেখলাম, বুঝলাম কীভাবে সময় ব্যয় করে তার প্রাপ্যমূল্য আদায় করে নিতে হয়।
ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এবং ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র এর মহাসচিব আমাদের প্রিয় হেলাল স্যার নানা গুণে গুণান্বিত। যেমন ক্ষমা করার গুণাবলী, দায়িত্ব সচেতনতা, স্টাফদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের প্রতি খেয়াল রাখা, আরো অনেক...। তবে স্যারের যে গুণটি নিয়ে আমার পরিবার ও বন্ধুমহলে আমি আলোচনা করি, সেটা হলো তিনি অত্যন্ত সময় সচেতন। ক্যাম্পাস এ আমি যে সহকর্মীদের পেয়েছি, তারাও খুব সময় সচেতন। তাই আমিও এখন সময় ব্যয়ের ব্যাপারে সচেতন হচ্ছি।
ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠানটি সমাজ উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছে। এসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষও বিশেষ মানুষ হয়ে উঠতে পারে। দেশের মানুষ, সমাজ সর্বোপরি দেশের সকল সমস্যার সমাধান নিয়ে চিন্তা করে ক্যাম্পাস। আসলে শুধু চিন্তা করে তা নয়; প্রতিটি সমস্যা যেমন দুর্নীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সন্ত্রাস, নকল, মাদক, যানজট এসবের বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই সোচ্চার ক্যাম্পাস। জনগণকে সচেতন করার জন্য লিফলেট, পত্রিকা, স্টিকার, ক্যালেন্ডার এবং পত্রিকায় লেখালেখি করে আসছে। জাতীয় সকল সমস্যা যেমন বিদ্যুৎ, যানজট, দুর্যোগ, বেকারত্ব, দারিদ্র্য প্রভৃতির স্থায়ী সমাধানকল্পে বাংলাদেশে ইউনিয়নভিত্তিক উন্নয়নের অত্যাধুনিক মডেল; যানজট নিরসনে এলাকাভিত্তিক স্কুলিং এসবের ওপর যুগোপযোগী মডেল প্রণয়ন করেছে এবং লিফলেট-হ্যান্ডবিল প্রচার করে আসছে।
এরকম অনেক কিছুই আছে, যা বলে শেষ করা যাবে না। সবশেষে এ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার এম হেলাল স্যার ও তার পরিবারের সকল সদস্য এবং আমার সকল সহকর্মীর সুস্বাস্থ ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি; এ প্রতিষ্ঠানের উত্তরোত্তর উন্নতি কামনা করছি।
আমি লেখক নই, এটিই আমার জীবনের প্রথম লেখা। তাই আমার এ লেখায় কোনো ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে শেষ করছি।
প্রথম প্রকাশঃ আগস্ট ২০১০