ক্যাম্পাস অফিসে মিটিং থেকে যা শিখলাম

মাহীর হেলাল
ক্যাম্পাস’র শিক্ষানবিশ

যারা চাকরি করেন কিংবা অফিসিয়াল কর্মকান্ডে জড়িত, তাদেরকে বিভিন্ন অফিসিয়াল মিটিং করতে হয়। সাধারণত এরূপ মিটিংয়ে বড়রা অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু আমি একেবারে ছোটবেলা থেকে পারিবারিক মিটিংয়ে এবং পঞ্চম শ্রেণি থেকেই অফিসিয়াল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করি। ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র, যার প্রধান কর্ণধার আমার বাবা এম হেলাল; সেখানে সাধারণত প্রতি শনিবার সাপ্তাহিক অফিস মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। আমি ও আমার বড় বোন ক্যাম্পাস’র শিক্ষানবিশ হওয়ার কারণে এসকল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতে হয়।
এসব মিটিংয়ে অফিসের বিভিন্ন অর্জন, নতুন নতুন কর্মসূচি, অফিসের ও স্টাফদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উপায়, অফিসের প্রতিটি স্টাফের ভালো-মন্দ, তাদের দক্ষতা ও আচার-আচরণ ভালো করার উপায় ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়। এই মিটিংয়ে প্রধান বক্তা থাকেন বাবা, যিনি ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাসচিব এবং ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক। তবে উপস্থিত যেকোনো স্টাফ যেকোনো বিষয়ে মতামত রাখতে পারেন এবং খোলামেলা আলোচনা করতে পারেন। প্রতিটি মিটিংয়ের আলোচ্যসূচি থাকে। সিরিয়াল অনুযায়ি একটি বিষয়ের পর আরেকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
এসব মিটিংয়ের অন্যতম একটি বিষয় হলো অফিস স্টাফদের মূল্যায়ন বা Evaluation. এক্ষেত্রে স্টাফরা একে অন্যের মূল্যায়ন করে। সেজন্য ছককাটা কাগজ আছে, যাতে কী কী বিষয়ের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হবে সেগুলো লেখা থাকে। পাঠকের জানার সুবিধার্থে সে বিষয়গুলো ক্যাম্পাস অফিস থেকে সংগ্রহ করেছি।
১। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সংরক্ষণে আন্তরিকতা ও তৎপরতা- ৯ নম্বর, ২। অফিসের কাজে মনোযোগ, একাগ্রতা ও দায়িত্ববোধ- ৮ নম্বর, ৩। কাজকর্মে স্বউদ্যোগী ও স্বপ্রণোদিত হওয়া- ৭ নম্বর, ৪। সত্য বলা ও কাজকর্মে সততার অভ্যাস- ৮ নম্বর, ৫। ঊর্ধ্বতনের অনুপস্থিতিতে বা আড়ালে সমালোচনায় নিরুৎসাহবোধ- ৭ নম্বর, ৬। অফিসের নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা- ৬ নম্বর, ৭। কাজের গুণগত মান ও পরিমাণ- ৬ নম্বর, ৮। একই ভুল বারবার করার প্রবণতা কম- ৬ নম্বর, ৯। কথা ও কাজে এক থাকা/কমিটমেন্ট ঠিক রাখা-৬ নম্বর, ১০। হাস্যোজ্জ্বল সহজ-সরল অভ্যাস, কথাবার্তায় জটিলতা না করা- ৫ নম্বর, ১১। দ্রুততাঃ কাজকর্মে, উত্তরদানে, নির্দেশপালনে- ৪ নম্বর, ১২। কোনো কিছু দ্রুত বোঝার ক্ষমতা- ৪ নম্বর, ১৩। গুছিয়ে কথা বলার ক্ষমতা ও অভ্যাস- ৪ নম্বর, ১৪। ঊর্ধ্বতনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বা আনুগত্য- ৪ নম্বর, ১৫। অধীনস্তের তদারকি ও পরিচালন ক্ষমতা- ৪ নম্বর, ১৬। অফিস উপযোগী পোশাক ও ব্যাজ পরা- ৩ নম্বর, ১৭। এক কাজে একাধিক জনকে অযথা জড়ানোর অভ্যাস- ৩ নম্বর, ১৮। শারীরিক সুস্থতা ও সক্ষমতা- ৩ নম্বর, ১৯। ধর্ম-কর্ম (ধর্মের প্রতি অনুরাগ)- ৩ নম্বর; মোট ১০০ নম্বর।
অন্যের ভালো ও খারাপ দিক নির্ণয় করার জন্য এই মূল্যায়নে প্রত্যেকে সততার সাথে নাম্বারিং করে। সবাই গোপনে এই মূল্যায়ন করে; অর্থাৎ কেউ কারোটা দেখতে পারবে না। কাজটি করা শেষ হলে সম্পাদক মহোদয়ের কাছে জমা দেয় এবং পরবর্তী মিটিংয়ে এ নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনার সময় উল্লেখ করা হয় কে সবচেয়ে ভালো করেছে এবং কেন, সাধারণভাবে অন্যরা কোন্ কোন্ কারণে কম পেয়েছে, কীভাবে আরো ভালোভাবে কাজ করা যায়, সবার সাথে মিলে অফিসের ও নিজের অগ্রগতি সাধন করা যায়, শারীরিক ও মানসিকভাবে উন্নতি করা যায় ইত্যাদি।
এর ফলে সকলে বুঝতে পারে, তার কী কী কাজ ভুল হচ্ছে এবং কীভাবে তা সংশোধন করা যায়। এই মূল্যায়নে গুণের দিক দিয়ে যিনি সবচেয়ে বেশি নম্বর পাবেন এবং দোষ ত্রুটির সীটে সবচেয়ে কম নম্বর পাবেন, সেরূপ স্টাফকে পুরস্কৃত করা হয়। আবার তাকে দেখে অন্যরা শিখে কীভাবে নিজের ভালো করা যায়। তাছাড়া প্রতি মিটিংয়ে আমাদের ব্যক্তিগত জীবন কীভবে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। আমি এই অফিস-মিটিং থেকে আত্ম-উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয় শিখেছি, যা এর আগে আমার জানা ছিল না। তাই এসব মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে আমি উপকৃত হয়েছি এবং হচ্ছি।
প্রথম প্রকাশঃ আগস্ট ২০১৪