মানব উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

আব্দুল্লাহ আল মামুন
কনসালটেন্ট, ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা ছিল আমার জন্য এক বিশেষ ক্রেজ। সরকারি কাজে বিভিন্ন অফিসে কর্মরত থাকাকালে এ পত্রিকার সাথে আমার পরিচয়। অবসরে গিয়ে কৌতুহলবশত এর সম্পাদক শ্রদ্ধেয় হেলাল ভাই এর সাথে দেখা করতে এসে তাঁর যাদুকরী আকর্ষণে সম্মোহিত হই। সে থেকে ক্যাম্পাস এর সাথে আছি।  ক্যাম্পাস’র পারিপার্শ্বিক অবস্থা আমার ভালো লাগে। নতুন আঙ্গিকের ব্যবস্থাপনা মন কেড়ে নেয়। এখানে যেন আমি মনের খোরাক পাই। ক্যাম্পাস’র অনেকগুলো নিয়মিত কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো স্টাফদের সাপ্তাহিক মত বিনিময় সভা। এই সভার অনেক আকর্ষণীয় ও শিক্ষামূলক দিক আমাকে বিমুগ্ধ করে। অনুরূপ একদিনের কথা। স্টাফ-সভায় উপস্থিত সবাইকে নিয়মানুবর্তিতা সম্পর্কে বলছিলেন সম্পাদক সাহেব। এমনভাবে বিষয়টাকে উনি তুলে ধরলেন, সুফল বোঝা গেল পরের সভায়। সবাই উপস্থিত সময়মতো। ফলাফল বিস্ময়কর।  হেলাল ভাইয়ের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় সারাক্ষণ কর্মচঞ্চল ক্যাম্পাস অঙ্গন, প্রাণচঞ্চল ক্যাম্পাস কর্মীগণ। কাজের প্রতি Commitment ও দায়িত্বশীলতা সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে এখানে। সবাই চেষ্টা করেন নিজেকে বদলাতে। সমাজকে, জাতিকে বদলাতে হলে আগে নিজেকে বদলাতে হবে।  অন্যদিনের কথা। ক্যাম্পাস’র একটি জরুরি কাজ আমাকে শেষ করতে হবে। ভাবলাম এ লক্ষ্যে ধ্যানের সেশন থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায় কিনা। আমার প্রস্তাবনা সম্পাদক মার্জিতভাবে এড়িয়ে গেলেন। তার মানে, আমাকে ধ্যানও করতে হলো, কর্মযজ্ঞেও থাকতে হলো। অপূর্ব ব্যবস্থাপনা, Commitment রক্ষার কি অপূর্ব কৌশল! ক্যাম্পাস’র সাপ্তাহিক ঐ সভায় হেলাল ভাই ধ্যানের গুরুত্ব ও কল্যাণকর দিক সম্পর্কে আলোকপাত করেন। ধ্যান মানুষের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তোলে এবং Superior human being হিসেবে সমাজে স্থান করিয়ে দেয় এই মর্মে প্রায়শই সবাইকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (দঃ) হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থেকে অর্জন করেছেন মহামানবের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী। গৌতম বুদ্ধ ধ্যানমগ্ন হয়ে মানবকূলকে মানবিক সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি হিংসা-প্রতিহিংসার মূলোৎপাটন করে বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করতে সচেষ্ট ছিলেন। শুরুতে আমি নিজেও এর কল্যাণকর দিক সম্পর্কে দ্বিধান্বিত ছিলাম। বর্তমানে দ্বিধা কেটে গেছে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, এটা আত্মোন্নয়নের টনিকস্বরূপ। ধ্যান মানুষকে ঘোরাচ্ছন্ন করে না, জাগিয়ে তোলে। সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করে। ধ্যান মানুষের আত্মোন্নয়নের ঊর্ধ্ব সোপান অর্জনে সহায়ক। ধ্যান নিজেকে চিনতে, প্রশান্তি প্রাপ্তিতে অব্যর্থ। ধ্যান মনরোগ সারাতেও এক অমোঘ মনোচিকিৎসা।  হেলাল ভাইসহ ক্যাম্পাস পরিবারের সব সদস্য সকলকে কম্পিউটার শিখানো এবং কম্পিউটার শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করার ক্ষেত্রে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। আসলেই Computer technology আমাদেরকে বিস্মিত করে। আরও অত্যাশ্চর্য মস্তিষ্কের কম্পিউটার। এর দর্শন হলো ভালো, পজিটিভ তথ্য ইনসার্ট করা এবং মন্দ, নেগেটিভ তথ্য ডিলিট করা। নেগেটিভ চিন্তা-চেতনা মস্তিষ্ককে স্থবির করে, জরাগ্রস্ত করে, ইচ্ছাশক্তির মৃত্যু ঘটায়, দেহ-মনকে প্রভাবিত করে। মস্তিষ্ক থেকে নেগেটিভ ধ্যান-ধারণা ডিলিট করতে পারলে আমরা হতে পারব সফল, সার্থক ও আলোকিত মানুষ। হেলাল ভাই মতবিনিময় সভায় বারবার করে Negativism নির্বাসন দিয়ে সুস্থ দেহ-মন অধিকারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেন। কল্যাণমুখী সমাজ গঠনে এটি নিঃসন্দেহে সহায়ক। Crisis Management এ হেলাল ভাইয়ের পারদর্শিতার জুড়ি নেই। একদিনের ঘটনা। এখানকার পরিচালিত ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বয়ং প্রধান অতিথিই অনুপস্থিত। সম্পাদক পুরো সময়টা উপস্থিত প্রশিক্ষণার্থীদের এমনভাবে নানান বিষয়ে সম্পৃক্ত করে সম্মোহিত করে রাখলেন যে, মনে হলো প্রধান অতিথির অনুপস্থিতির জন্য তাদের কোনো মাথা-ব্যথা নেই। ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত হলেও প্রশিক্ষণার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করল না, নানা ধরনের শিক্ষণীয় আলাপের মধ্য দিয়ে সময় পার হয়ে গেল। এটা হেলাল ভাইয়ের দক্ষতা ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের একটি অনুপম নিদর্শন।  ক্যাম্পাস থেকে আমরা শিখেছি Be Natural, Be Positive. আমিও Natural হওয়ার চেষ্টা করলাম। অন্যরাও চেষ্টা করে চলেছে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে তথা উত্তরণের পথে এগিয়ে যেতে। Honest labour never goes unrewarded কথাটি শ্বাশ্বত, চিরন্তন। মতবিনিময় সভায় তিনি বার বার সবাইকে তা স্মরণ করিয়ে দেন। সৎ উদ্যোগের প্রতি সবাই হয় আকৃষ্ট। এখানে কাউকে পদোন্নতি দানের বিষয়ে মতবিনিময় সভায় উন্মুক্ত আলোচনা করে সর্ব সম্মতিক্রমে পদোন্নতির ঘোষণা প্রদান করা হয়। সুদীর্ঘকাল সরকারি চাকরি করেছি। প্রতিটি অফিসের প্রধান শুধু কাজই করতে বলেছেন, ভালো অফিসার হতে বলেছেন, কিন্তু Superior human being হওয়ার কোনো কলাকৌশল শেখাননি। ক্যাম্পাস’র সাপ্তাহিক সভায় আমরা আত্মোন্নয়নের জন্য উন্মুক্ত মতবিনিময়ের যে সুযোগ পেয়ে থাকি, তা এক বিরল দৃষ্টান্ত।  Superior human being হওয়া যদিও সহজ নয়, তবে তার জন্য সাধনা করতে ক্ষতি কি! লক্ষ্য থাকবে বদলে যাও, বদলে দাও। ক্যাম্পাস’র শিক্ষাই উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবন গড়ার মহোত্তম হাতিয়ার। ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনে ক্যাম্পাস’র গতিশীল অগ্রযাত্রার সাথে একাত্ম হয়ে আমি নিজকে ধন্য মনে করছি।  প্রথম প্রকাশঃ জুন ২০০৯