যেভাবে ক্যাম্পাস’র সাথে জড়িয়ে পড়লাম

লুৎফুন নাহার কনিকা
উপ-সহকারী পরিচালক

ছোটবেলা থেকেই চাকরি করার ব্যাপারে আমার ছিল খুবই অনীহা। আমার পাশের বাসার নীলা আপু, উনি সব সময়ই খুব তাচ্ছিল্য করে আমাকে বলতেন চাকরি করবে না তাহলে একাউন্টিং এর মতো এত কঠিন একটা Subject নিয়ে পড়ছ কেন, তোমার উচিৎ ছিল ডিগ্রি (পাস) পড়া। আমি বলতাম, আমি জ্ঞানার্জনের জন্য পড়াশুনা করছি, চাকরির জন্য নয়। ২০০৬ সালে মূলত কম্পিউটার শেখার জন্যই আমি ক্যাম্পাস এ আসি। কম্পিউটার শেখার পাশাপাশি ক্যাম্পাস’র বিভিন্ন কার্যক্রম আমাকে মুগ্ধ করে, বিশেষ করে শিক্ষানবিশ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ক্যালেন্ডারিং ক্যাম্পেইন। আমার গন্ডিটা ছিল খুব ছোট কলেজ, বাসা, নিউমার্কেট, আত্মীয়-স্বজনের বাসা, দু’একটা ফ্রেন্ডের বাসা, এতটুকুই। ক্যাম্পাস’র ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে সম্পাদক এম হেলাল স্যারের কথায় মুগ্ধ হয়েই আমি ক্যালেন্ডারিং ক্যাম্পেইনে নাম দেই। ঢাকা শহরের বেশিরভাগ জায়গায় যেখানে আমি কোনোদিন যাইনি এবং যাওয়ার চিন্তাও করিনি প্রায় সব জায়গায়ই যাওয়া হলো। এখন আমি বলতে পারি যে, ঢাকার বেশিরভাগ জায়গাই আমি চিনি। সেই থেকে ক্যাম্পাস’র সাথে জড়িয়ে পড়লাম। একটা সময় আমি ক্যাম্পাস’র পারমানেন্ট স্টাফ হিসেবে জয়েন করলাম। যে আমি কখনো চাকরি করব না বলে ভেবেছিলাম সেই আমিই ক্যাম্পাস’র কার্যক্রমে মুগ্ধ হয়ে চাকরিকে পেশা হিসেবে নিয়েছি। পারিবারিক ঝামেলার কারণে এখন কখনো চাকরি ছাড়ার কথা উঠলে, যুক্তিতর্কের খাতিরে চাকরি ছাড়ার বিষয়ে কম্প্রোমাইজ করতে চাইলেও ক্যাম্পাসকে ছেড়ে যাবার বিষয়টি ভাবতেই কষ্ট হয়। দেখতে দেখতে ৩টা বছর পার হয়ে গেছে। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে আমি এখন ক্যাম্পাস’র উপ-সহকারী পরিচালক, আমার দায়িত্ব হচ্ছে মূলত ক্যাম্পাস’র একাউন্টস নিরীক্ষণ করা। কিন্তু ব্যক্তিগত ধান-ধারণার পরিবর্তন ও দক্ষতা উন্নয়নের দিক থেকে এখন এরূপ আত্মবিশ্বাসে আমি বলীয়ান হয়েছি যে খুব গর্বের সাথেই বলতে পারি, যেকোনো কাজই আমি সফলতার সাথে করতে পারব। ক্যাম্পাস ছাত্র-যুব সমাজের চিন্তায় যে আতশবাজি জ্বালিয়ে দেয়ার কাজ করছে তা দেশ ও জাতির উন্নয়নে এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণে বিরাট ভূমিকা রাখবে।  আর এ জন্য প্রশংসার দাবিদার ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক হেলাল স্যার। উনি সব সময়ই আমাদেরকে আধুনিক ও উন্নততর ধ্যান-ধারণায় এবং নতুন নতুন কাজে উদ্ধুদ্ধ করেন। প্রথম প্রথম নতুন কোনো কাজ দিলে খুব ভয় পেতাম, ভাবতাম আমি বোধহয় পারব না। শুধু ভয়ই না, মাঝে মাঝে বিরক্তও হতাম। কিন্তু কাজটা যখন শেষ করতে পারতাম তখন বুঝতাম একটা নতুন কাজ আমার শেখা হয়েছে। সব সময়ই যে সফল হতাম তা কিন্তু নয়, অনেক সময়ই ভুল করতাম। কিন্তু স্যার কখনই এর জন্য বকা দেননি, বরং অনেক উৎসাহ যুগিয়েছেন, যেটা হয়ত অন্য কোথাও চাকরি করলে সম্ভব হতো না। একদিনের একটা উদাহরণ দেই, ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ই বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে এবং এ অনুষ্ঠানগুলোর শুরুতে উপস্থাপনাপত্র পাঠ করতে হয়। স্যার অনেকদিন আমাকে বললেন কনিকা, তুমি উপস্থাপনাপত্র পড়ার চেষ্টা কর। আমি কখনো ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি নেইনি। আসলে আমি খুব ভয় পেতাম। একদিন স্যার আমাকে বাধ্য করলেন আজকে তোমাকেই পড়তে হবে। কি আর করা, খুব ভয়ে ভয়ে স্যারকে বললাম স্যার, আমি সবার সামনে পড়তে পারব না, আমি ভেতরের কোনো রুম থেকে বা নেপথ্য থেকে পড়ব। স্যার বললেন, ঠিক আছে। যা হবার তাই হলো, ভেতরের রুম থেকে পড়ার ফলে অডিটোরিয়ামের কোনো কিছুই আমাকে দেখতে হলো না এবং দর্শক-শ্রোতা বা সহকর্মী কারো চোখে চোখ পড়ল না। ফলে অনেক উল্টা-পাল্টা পড়েছি। অনুষ্ঠান শেষে খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম, স্যারতো এখন বকা দিবেন। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো স্যার কিছুই বললেন না বরং বললেন, খুব ভালো হয়েছে। তবে ঐ ঐ বাক্য ঐ ঐ ভাবে পড়লে আরও ভালো হত। আস্তে আস্তে আমার জড়তা ও ভয়টা কেটে গেল। এখন শুধু ক্যাম্পাস’র অনুষ্ঠানই নয়, বিভিন্ন সেমিনারেও আমি উপস্থাপনা করে থাকি, এজন্য স্যারকে অনেক ধন্যবাদ। সেদিন আমাকে বাধ্য না করলে হয়ত কখনই আমি উপস্থাপনা করা শিখতে পারতাম না। এভাবে কারুর ‘না পারা’ এর মানসিকতাকে ‘পারা’ এ রূপান্তর করা এবং মানুষের ভেতরের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে ক্যাম্পাস’র কৌশল ও ভূমিকা অতুলনীয়।  ক্যাম্পাস’র যে জিনিসটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে তা হচ্ছে ক্যাম্পাস এ কাজ করার পরিবেশ, আমাদের সহকর্মী সবাই খুব সহযোগিতামূলক আচরণ করে এবং সবাই সবাইকে সাহায্য করার চেষ্টা করে। প্রথম প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ২০০৯