ক্যাম্পাস’র ক্যাম্পেইনে আমার অভিজ্ঞতা

নাদিয়া আফরোজ
ক্যাম্পাস’র শিক্ষানবিশ

আমি পিপলস ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যাম্পাস পত্রিকার একজন শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করছি। আমি প্রথম অংশগ্রহণ করি বাৎসরিক ক্যাম্পেইনে। ক্যাম্পাস’র সমাজ সচেতনতা কর্মসূচির আওতায় প্রতিবছরই কয়েকবার ক্যাম্পেইন হয়। এ বছরের জানুয়ারিতে আমি যখন ক্যাম্পেইন করতে শুরু করি, তখন থেকে আজ পর্যন্ত আমার অভিজ্ঞতা নানান রকম। আমার জীবনেও এসেছে অনেক পরিবর্তন।
যেমন আমি বেলা ১২টার আগে ঘুম থেকে উঠতে পারতাম না। সকালে ঘুম থেকে ওঠা আমি কোনোভাবেই রুটিনে আনতে পারছিলাম না। কিন্তু ক্যাম্পাস’র ক্যাম্পেইনের সময় আমি ঠিক সকাল সাড়ে ৮টায় অফিসে উপস্থিত থেকেছি। আর কাজের কথা যদি বলি, ক্যাম্পাস’র ক্যাম্পেইন সত্যি ভিন্নরকম। ক্যাম্পেইনে বের হবার আগে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টায় আমাদের ব্রিফিং সেশন ছিল। অফিস-আচরণ, নিয়ম-কানুন, টিম ওয়ার্ক, শেয়ারিং-কেয়ারিং, পারস্পরিক সমালোচনা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর গাইড করা হত। প্রথম প্রথম আমি অনেক কিছু বুঝতাম না; অনেক ভুল করতাম, তাই অনেকে আমাকে টিমে নিতে চাইত না, এভয়েড করত। তবুও হাল ছাড়িনি; চেষ্টা করে গেছি।
ক্যাম্পাসই একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যে আমাকে শিখিয়েছে মানুষের পক্ষে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, যে চেষ্টা করে স্বয়ং স্রষ্টা তাকে সাহায্য করেন। সেসময় ক্যাম্পাস’র অনারারী রিসার্চ ডিরেক্টর ড. নাজনীন ম্যাডাম আমাকে খুব সুন্দর একটি সাজেশন দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, তুমি প্রতিদিন ১০০বার করে এ কথাটা ১ মাস বলতে থাকবে আমি পারি, আমি পারি। কয়েকদিন মুখে মুখে বলার পর সত্যি আমার ভেতরে কাজ করতে লাগল যে আমি পারছি, আমি পারব।
এভাবে আমি একটু একটু করে এগুতে থাকি। ক্যাম্পাস’র সামাজিক সেবাকর্মের বদৌলতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সংসদ ভবন, হাইকোর্ট, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ সরকারের কত গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে যে গিয়েছি! এরূপ জায়গায় ঢুকতে পারা আমার কাছে ছিল অকল্পনীয়। এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্যাম্পাস কার্যক্রমের গ্রহণযোগ্যতা বিস্ময়কর।  আর একটা বিষয় না বললেই নয়। আমার বাবা একজন এডভোকেট, কিন্তু আমার কখনও আদালতে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। ক্যাম্পাস’র ক্যাম্পেইনের সুবাদে আমি বহু এজলাসে উঠে ক্যালেন্ডার ও স্টিকার লাগিয়েছি, সেসময় আমি ছিলাম ভীষণ আবেগাপ্লুত। 
ঢাকার বাইরেও সিলেট, চিটাগাং, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় কাজ করেছি। সবার মাঝে দেখেছি, ক্যাম্পাস’র জন্য অপেক্ষা। ক্যাম্পাস কর্মীদের কতখানি ভালবাসলে মানুষ তাদের জন্য অপেক্ষা করে! ক্যাম্পাস এ সব কাজ করা হয় খুব নিখুঁতভাবে, প্রতিটি বিষয় সূক্ষèভাবে বিচার করা হয়। কাজের প্রতি এঁদের এই সততা আমার ভালো লেগেছে। সৎভাবে কাজ করার মধ্যে যে একটা অন্যরকম আনন্দ আছে, সেটা উপলব্ধি করেছি ক্যাম্পাস’র সংস্পর্শে। ক্যাম্পাস’র কাছে আমি ঋণী সর্বক্ষণ, সারাজীবন। ক্যাম্পাস এ যারা আসে তাদের অধিকাংশই খুব মেধাবী বা চৌকস নয়। কিন্তু শিক্ষানবিস কর্মসূচীর মাধ্যমে তাদের এমন একটা স্ট্যান্ডার্ডে নিয়ে আসা হয় যে অল্পদিনেই তারা একটিভ, স্মার্ট, প্রোএকটিভ হয়ে ওঠে। এখানে মানুষের ভেতর থেকে গুণকে জাগিয়ে তোলা হয়। কীভাবে সাধারণরা সিস্টেমের মধ্য দিয়ে অসাধারণ হতে পারে, সেই ট্রেনিং দেয়া হয়।  ক্যাম্পাস’র এসব শিক্ষা ও অনুশীলন আমাকে জীবন ফিরে পেতে সাহায্য করেছে প্রতিমুহুর্তে। আর তাই আমি আজ এদেশকে ক্যাম্পাসরূপে গড়ার স্বপ্ন দেখি।
আমি সব সময় ক্যাম্পাস’র জন্য দোয়া করি। আপনারাও দোয়া করবেন, যেন ক্যাম্পাস’র দর্শন ও মডেল বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ দেশ ও জাতির সকল অন্ধকার অচিরেই দুরীভূত হয়।
প্রথম প্রকাশঃ ডিসেম্বর ২০১১