ক্যাম্পাস’র ক্যাম্পেইন ২০১০

দেওয়ান মামুনুর রশিদ
ক্যাম্পাস’র শিক্ষানবিশ

সৎকর্ম চিরদিন মানুষকে কল্যাণের পথে চালিত করে, আর মন্দকর্ম সাময়িক আনন্দ দিলেও তার পরিণতি ধ্বংসের দিকে উপনীত হয়। এ মহাসত্য আমি বাস্তবে অনুভব করেছি এবং প্রমাণ পেয়েছি ক্যাম্পাস পরিচালিত সামাজিক সচেতনতা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে, মাসব্যাপী দেশজুড়ে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে। দুর্নীতিবিরোধী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধের এ ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়ে যা দেখেছি, বুঝেছি ও শিখেছি তা লিখলে ৮০ পাতায়ও শেষ হবে না। তাই এখানে সামান্য কিছু স্মৃতিচারণ করব, যা কারুর জন্য শিক্ষণীয়ও হতে পারে।  ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্যে ১২ জানুয়ারি গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম। সারাদিন কাজ করে রাত্রি যাপন করলাম চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজে। পরদিন চট্টগ্রাম বন্দর ভবনের নিরাপত্তা বিভাগের অনুমতি নিয়ে আমরা বন্দরের ভিতরে অবস্থানরত বঙ্গোপসাগরে ভাসমান মাদার ভ্যাসেল (সর্বাপেক্ষা বড় ধরনের শিপ) এমভি তাইওয়ান-এ যাই। সে শিপে প্রায় ১,৫০০ কন্টেইনার ছিল; এটি এসেছে সিংগাপুর থেকে। সাগরের বুকে বিদেশী নাবিকদের নিকট ক্যাম্পাস’র সমাজ কল্যাণমূলক কার্যক্রম তুলে ধরি এবং তাদেরকে ক্যাম্পাস’র ক্যালেন্ডার, পত্রিকা, স্টিকার প্রভৃতি উপহার দেই।  মজার বিষয় হলো জাহাজের প্রধান নাবিক মি. তংচ এরাং বাংলা বোঝেন, কিছুটা বলতেও পারেন। তাই আমাদের কথা তিনি বুঝলেন এবং আগ্রহ করে ক্যালেন্ডার ও স্টিকারের লেখাগুলো পড়লেন, এমনকি যতœ করে এগুলো তার রুমে লাগালেনও। এ জাতীয় কল্যাণময় কর্মের আলো সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে তার হৃদয়ের সে আবেগ আমাদের দারুণ আশান্বিত ও উদ্দীপ্ত করেছে। এর মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশীরা নয়, সমগ্র বিশ্বের মানুষ সমাজ জাগরণে আমাদের এ আন্দোলনকে সাধুবাদ জানাবে। এরপর নাবিক মি. তংচ শিপের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আমাদের বুকে জড়িয়ে ক্যামেরায় ছবি তুললেন, যা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ ঘটনা থেকে একজন বিদেশীর বড় মনের পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু দেশে যখন কাউকে আমরা ক্যাম্পাস’র সৌজন্য উপহার সামগ্রী (ক্যালেন্ডার, ডেস্কসিøপ, গ্রিটিংস কার্ড, পত্রিকা, স্টিকার ইত্যাদি) দিতে যাই, তখন অনেকে এমন অনীহা করে যেন টাকা-পয়সা বা অন্য কিছু দিতে হবে। কবি নজরুল বলেছিলেন, “তুমি নিজেকে ছোট ভাব, তাই সব ক্ষেত্রে হার”। সত্যিই আমরা মনের দিক থেকে অনেক দরিদ্র; কল্যাণময় কাজ নিজেরা করি না বলে অন্যকে করতেও সহায়তা করি না, উৎসাহ দেই না। ক্যাম্পাস’র ব্যানারে ২০০২ সালে ধূমপানের বিরুদ্ধে যে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলাম, তা আজ আইনে পরিণত হয়েছে। ডিজিটাল দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ক্যাম্পাস ২০০৪ সালে শুরু করে ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিং। আজ সে কর্মযজ্ঞ সরকার জোরালভাবে করছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে দেশব্যাপী প্রচারণা চালিয়েছি। পরবর্তীতে দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়, যা অনেকটা সফলও হয়েছে। ক্যাম্পাস তুলে ধরছে যানজট নিরসনে এলাকাভিত্তিক স্কুলিং কনসেপ্ট। ইতোমধ্যে ঢাকায় এলাকাভিত্তিক স্কুলিং এর বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে বলে শোনা যায়। শুরুর কথাটি দিয়ে শেষ করছি। আমাদের কর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সৎ, তাই আমরা সফল হয়েছি এবং হব। ক্যাম্পাস পরিচালিত সমাজ কল্যাণমূলক কাজে যারা ঈর্ষান্বিত হয়ে তিরষ্কার কিংবা অবজ্ঞা করেছেন, তাদের এবং অন্য সকলের মঙ্গলময় জীবন ও শান্তিময় ভবিষ্যত কামনা করি। ক্যাম্পাস’র কল্যাণময় কাজে পরম করুণাময়ের বরকতময় রহমত কামনা করছি।