ক্যাম্পাস’র সূচিত একুশ শতাব্দীর যুদ্ধ

ফারুক হোসেন
ক্যাম্পাস’র শিক্ষানবিশ

স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও আমাদের আশানুরূপ উন্নতি হয়নি কৃষক থেকে রাজনীতিবিদ সবাই এ কথা এক বাক্যে স্বীকার করেন; কিন্তু কেন? উন্নয়নের জন্য আমাদের কী কী করতে হবে তা কেউ বলছেন না। বাস্তবিক অর্থে আমরা সবাই অলস ও বাকপটু। সব দায়িত্ব কেবল অন্যের, যেন আমার করার কিছু নেই এমন মনোভাব আমরা পোষণ করি। আমরা বেশি বেশি কথা বললেও কাজ কিছু করি না বললেই চলে। ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র এর সাথে জড়িত হয়ে আমি নানাভাবে এমনই উপলব্ধি করেছি। 
ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত মডেল ‘বিদ্যুৎ, যানজট, দুর্যোগ, বেকারত্ব, দারিদ্র্যসহ জাতীয় সকল সমস্যার স্থায়ী সমাধানঃ ইউনিয়নভিত্তিক উন্নয়নের অত্যাধুনিক মডেল’। দেশ গঠন ও উন্নয়নে জনমত তৈরিতে ক্যাম্পাস কর্মীদের পাশাপাশি কিছু ছাত্র-ছাত্রীও এ মডেল নিয়ে কাজ করে; যার মধ্যে আমিও একজন।
দেশ ও জাতির সমস্যা সমাধানে নিজেকে সম্পৃক্ত করার ফলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সাথে আমাদের কথা হয়। আমরা মডেলটি তাদের কাছে উপস্থাপন করি। তাদের নানা অংশের নানান মত এটা দিয়ে আমি কী করব, এটা মন্ত্রী/এমপিদের দেন;/এদেশের সমস্যা কেয়ামত পর্যন্তও শেষ হবে না;/নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ান কেন? ...ইত্যাদি। এছাড়াও কিছু মানুষ এমন ভাব করেন যেন পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কাজ করছি। এ মানুষগুলোর কথা শুনলে প্রায়ই মন খারাপ হয়ে যায়, মাঝে মাঝে রেগে যাই নিজের অজান্তে। কিন্তু আমি ক্যাম্পাস’র সাথে জড়িত। ক্যাম্পাস আমাকে প্রোএকটিভ এটিচিউডের লালন শিখিয়েছে, শিখিয়েছে How to control anger. তাই সকল প্রতিকূলতা ভ্রুক্ষেপ করে মডেলের পক্ষে জনমত তৈরির কাজে নিয়োজিত থাকি। এমনই একদিন মডেল নিয়ে গেলাম টিএসসি চত্বরে। আমি প্রত্যেকটি মানুষের কাছে যাই, তাদেরকে মডেল সম্পর্কে বলি, তারা আমায় প্রত্যাখ্যান করে। এতে আমার মন খারাপ হয়নি। টিএসসি থেকে ফেরার পথে কিছু মানুষকে আমি মডেল সম্পর্কে বলতে যাই। তারা কথা শুরু করার আগেই এখান থেকে যান, দেখছেন না কথা বলছি, খেয়ে আর কাজ নেই.. ইত্যাদি বলতে থাকে। এতে আমার মন খারাপ হয় এবং প্রচন্ড রাগ হয়।  ঐ দিনই রাত ৯টায় একজন মানুষ আমাদের স্টলের কাছে আসেন। কথার এক পর্যায়ে বলেন হে ক্যাম্পাস কর্মী, তোমরা ৭১ দেখনি, ৭১ এ যারা প্রাণ দিয়েছে তারা মহান; কিন্তু তোমরা আরো মহৎ কাজ করছো। তোমরা হলে একুশ শতাব্দীর মুক্তিযোদ্ধা। যে যুদ্ধ গোলা-বারুদ ছাড়া হয়। তোমাদের এই যুদ্ধ সবাই দেখে না, দেখবে না; কিন্তু তোমরাই আসল যোদ্ধা।
তার এই কথাগুলো শুনে মনে হলো, আমি অনেক বড় হয়ে গিয়েছি। ছোটবেলা থেকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী আরও কত কী হব! এক পর্যায়ে সেসব হওয়ার ইচ্ছা বিলীন হলেও বড় হওয়ার স্বপ্ন কিন্তু আজও দেখি। আর তা যদি হয় দেশমাতার সেরা সন্তানদের তালিকায়, তাহলে...। এখন আর তাদের কথায় কর্ণপাত করি না যারা শুধু পথে কাঁটা দিতে পারে, সরাতে পারে না; যারা শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবতে পছন্দ করে, অন্যকে নিয়ে নয়। কিন্তু এই মানুষগুলোকে নিয়ে আমাদের ভাবতে হয়, যখন দেখি সমাজের এক বিশাল অংশ এরাই; এদেরকে বাদ দিয়ে আমরা বেশি দূর যেতে পারব না। তাদের চিন্তার পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন প্রোএকটিভ সেমিনারে অংশগ্রহণ।
তাই আমি সবাইকে অনুরোধ করব আপনারা ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রে আসুন, প্রোএকটিভ সেমিনারসহ আত্মোন্নয়নমূলক বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিন; চিন্তার পরিবর্তন করুন, অন্যের তরে তথা দেশের জন্য কাজ করুন। তাহলেই জাতীয় উন্নতির পাশাপাশি আপনার সমস্যাও কেটে যাবে।
প্রথম প্রকাশঃ নভেম্বর ২০১১