ক্যাম্পাস গড়ছে ডিজিটাল মানুষ
মো: ইউসুফে শোভন
ক্যাম্পাস’র শিক্ষানবিশ
আমি মোঃ ইউসুফ শোভন, সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। এসএসসি পরীক্ষার পর ক্যাম্পাস’র ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিংয়ে আমি অংশগ্রহণ করি। শুরু হয় ক্যাম্পাস’র সাথে আমার হৃদ্যতা।
ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রে নিয়মিত আসা-যাওয়ার মাধ্যমে খুব কাছে থেকে এই প্রতিষ্ঠানের সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হই; ‘ন্যায়ভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠন আমাদের লক্ষ্য’ ক্যাম্পাস’র এ স্লোগানটির প্রতি আস্থা ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। বুঝতে পারি আলোকিত জাতি গঠনে নিবেদিত এই ক্যাম্পাস। একথা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, ছাত্রদের জন্য ক্যাম্পাস বিনামূল্যে তথা ফ্রি কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ তথা ডিজিটাল মানুষ গড়ার কারিগর যেন এই ক্যাম্পাস!
ক্যাম্পাসকে আমি ডিজিটাল মানুষ গড়ার কারিগর বলছি শুধু ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিং প্রদানের জন্য নয়; এখানে ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি সময়নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা, সততা, উন্নত চরিত্র, উন্নত চিন্তা-ভাবনা করা তথা উন্নত মানুষ হবার ট্রেনিংও দেয়া হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ডিজিটাল জনগণ তথা ডিজিটাল মানুষ প্রয়োজন। আর একজন মানুষ তখনই ডিজিটাল হয় যখন সে কম্পিউটার জ্ঞানের পাশাপাশি সময়নিষ্ঠা, উন্নত চরিত্র, নিয়মানুবর্তিতা, সততা, উন্নত চিন্তা-ভাবনা নিজের মধ্যে খুঁজে পায়। আর সেসব গুণের চর্চাই করা হয় ক্যাম্পাস এ।
ডিজিটাল মানুষ গড়ার কথা বলতে গিয়ে বিশ্বখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস’র সেই বাণীর কথা মনে পড়ে মানুষ জন্মলাভ করে তার মর্মে নয়, কর্মে। আর তার সেই কর্মের মাধ্যমেই সে নিজেকে ডিজিটালভাবে উপস্থাপন করতে পারে। অর্থাৎ মানুষ জন্মগতভাবে কেউ ডিজিটাল নয়; সে যখন তার কর্ম দিয়ে সোনার ফসল ফলাতে পারবে, তখনই সে প্রতিষ্ঠালাভ করবে। আর সেই সোনার ফসল তখনই ফলবে, যখন সে উন্নত চিন্তা তথা ডিজিটাল চিন্তাশীল হবে। আর সেই ডিজিটাল চিন্তাই করতে শেখায় ক্যাম্পাস।
ক্যাম্পাস’র সাথে অনেকগুলো স্মরণীয় ঘটনার মধ্যে বিশেষ একটি হলো, এখানে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা। আমাদের কার্যক্রম ছিল ন্যায়ভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক তথা উন্নত মানুষ গঠনের হ্যান্ড লিফলেট বিভিন্ন স্তরের সুধীজন ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিস-আদালতে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নিকট বিতরণ। এই লিফলেটকে পরবর্তীতে কেউ কেউ দিনবদলের বার্তা হিসেবে অভিহিত করেন।
সাধারণত আমরা দেখি, রাস্তাঘাটে যাদের লিফলেট দেয়া হয় তা তারা তৎক্ষণাৎ ফেলে দেয়; কিন্তু আমাদের এই দিনবদলের লিফলেট আমার পর্যবেক্ষণ অনুসারে কেউ ফেলে দেয়নি বরং তা সযতেœ পকেটে রেখে দিয়েছে। কেউ কেউ প্রথমে এটি নিতে প্রচন্ড বিরক্তি প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে তা পড়ে আমাদের এ ধরনের কাজ করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে, যা আমাদের যথেষ্ট উৎসাহ যুগিয়েছে। আবার কেউ কেউ তা নিজ অফিস ডেস্কের গ্লাসের নিচে অথবা দেয়ালে স্কচটেপ দিয়ে লাগিয়েছে। এর মাধ্যমে আমার মাঝে ভালো কাজ করার উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে এবং ভালো কাজ করলে প্রশংসা করার মতো মানুষ যে সমাজে আছে, তা দেখে হৃদয় আরও উদ্দীপ্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের জন্য ক্যাম্পাস’র ন্যায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র কত যে প্রয়োজন, তা বলে প্রকাশ করার নয়। যদি এরকম মানসম্পন্ন আরও কিছু নিবেদিতপ্রাণ সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা যায়, তবে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, তা বাস্তবরূপ লাভ করবে সহজেই। প্রয়োজন শুধু সৎ সাহস আর উদ্যোগ। এ সকল প্রতিষ্ঠান দেশের জনসংখ্যা সমস্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।
শুধু একজন ছাত্র হিসেবে নয়, দেশের একজন নাগরিক হিসেবে ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র এর স্বপ্নদ্রষ্টা এবং প্রতিষ্ঠাতা এম হেলাল স্যারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, কারণ তিনি নিঃস্বার্থভাবে শুধুমাত্র দেশের এবং দেশের মানুষের কল্যাণে এমন একটি জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়েছেন।
প্রথম প্রকাশঃ ফ্রেব্রুয়ারি ২০১১