ক্যাম্পাসঃ মানুষ গড়ার কারখানা

মাহফুজুল ইসলাম
ক্যাম্পাস’র শিক্ষানবিশ

ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র (সিএসডিসি) এর জন্ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, কেবল পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রনেতা এম হেলাল’র সম্পাদনায় ১৯৮৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার যাত্রা শুরু। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ছাত্র হিসেবে জাতিকে ভালো কিছু দেয়াই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। নৈতিক সে দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি শুরু করেন সমাজসেবা ও দেশসেবার নিরন্তর সংগ্রাম। সফলভাবে পত্রিকা প্রকাশের পাশাপাশি শুরু হয় মানুষের মানসিকতা ও জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নের কার্যক্রম; যা আস্তে আস্তে মানুষের হৃদয়ে স্থান লাভ করে, আত্মপ্রকাশ করে ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার হিসেবে। সমস্যা জর্জরিত বাংলাদেশের বুকে একটি উজ্জ্বল আলোক শিখার মতো আজ জ্বলজ্বল করছে ক্যাম্পাস এবং এর আলোয় আলোকিত হচ্ছে বাংলার সোনার সন্তানরা। বর্তমান সময়ে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সবক্ষেত্রেই দেখা যায় এরাব Give & take দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু ক্যাম্পাস’র বেলায় তা নয়। ক্যাম্পাস তার কাজের মাধ্যমে বলছে “ভোগে সুখ নেই, ত্যাগেই সুখ”। মানুষকে বিনিময়হীন তথা নিঃস্বার্থভাবে কিছু দেয়ার এ স্বর্গীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই ক্যাম্পাস আজ পূর্ণভাবে প্রস্ফুটিত, গড়ে যাচ্ছে একের পর এক মাইলফলক। তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লবের এ যুগে কম্পিউটার জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই। অনেক দেরিতে হলেও সরকার এটা উপলব্ধি করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছে। অথচ ক্যাম্পাস ২০০৪ সাল থেকেই ছাত্র-যুবকদেরকে ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিং প্রদানের মাধ্যমে বিজ্ঞান মনস্কতার পরিচয় দিয়ে আসছে। যাঁর সাহসী উদ্যোগ এবং প্রত্যক্ষ সহায়তায় এই ব্যয়বহুল প্রশিক্ষণের শুরু, তিনি ক্যাম্পাস’র অনারারী রিসার্চ ডিরেক্টর ড. নাজনীন আহমেদ।  ক্যাম্পাস কার্যক্রমের ওপর তাঁর সহজ সরল বিজ্ঞানভিত্তিক বক্তৃতার মাধ্যমে ছাত্র-যুবকদেরকে জাগিয়ে তোলার সম্মোহনী শক্তি আমার জ্ঞান-তৃষ্ণা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। Honorable Salute i.e. Hat’s off to ড. নাজনীন আহমেদ। ক্যাম্পাস’র যে বিষয়টি আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে তা হলো, সামনাসামনি গঠনমূলক সমালোচনা। ভালো কাজের জন্য বাহবা যেমন আরও ভালো কাজের উৎসাহ জোগায়, তেমনি মন্দ কাজের সমালোচনায় আমার দুর্বলতা সম্পর্কে আমি জানতে পারি এবং নিজেকে সংশোধনের সুযোগ পাই। যদিও প্রথমে বিষয়টি আমার ভালো লাগেনি এবং সরাসরি আক্রমণ বলে বন্ধুর কাছে মন্তব্য করেছিলাম, সেই আমি এখন বলছি সামনাসামনি সমালোচনাই হলো প্রকৃত মানুষ হওয়ার, বড় হওয়ার সুন্দর পদ্ধতি। আমি নিজেও যখন অন্যের সামনাসামনি সমালোচনা করতে গেলাম, দেখলাম আমার সে সাহস নেই। এমনকি আমার দেখা অনেক উচ্চ শিক্ষিত মানুষেরও সে সাহস নেই। তাহলে কাদের দ্বারা এ সাহস দেখানো সম্ভব? যারা সত্যবাদিতা, নৈতিকতা, মানবিকতা, দায়িত্ববোধ, গঠনমূলক সমালোচনা ইত্যাদি বিষয় দীর্ঘদিন চর্চার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে এসকল গুণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন তারাই পারেন ভালোকে ভালো ও মন্দকে মন্দ বলতে। ক্যাম্পাস কার্যক্রম দেশ ও জাতির উন্নয়ন নিয়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্নীতি, যানজট, দেশের প্রতি দায়িত্ব, প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা ইত্যাদি বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে ক্যাম্পাস তার কার্যক্রম প্রসারিত করে চলেছে। সদ্য শুরু করা ক্যাম্পাস সততা পুরস্কার রাষ্ট্রীয় কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। এছাড়াও ক্যাম্পাস ছাত্র-যুবকদের আত্মোন্নয়নের জন্য নিয়মিতভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যেমন প্রোএকটিভ সেমিনার, মেডিটেশন, আকুপ্রেশার, ইয়োগা, হেলথ্্ সার্ভিস, ডিজিটাল সোসাইটি ওয়ার্কশপ ইত্যাদি। রয়েছে ক্যাম্পাস লাইব্রেরি, ডিজিটাল ইয়াং-স্টার এওয়ার্ড কর্মসূচি প্রভৃতি।  স্বার্থপরতা ও মিথ্যার চাদরে ঢাকা বিক্ষুব্ধ সমাজের উত্তপ্ত পরিবেশে ক্যাম্পাস যেন এক ফোঁটা প্রশান্তির জল। ক্যাম্পাস’র সংস্পর্শে আসলে যে কেউ এই জলে সিক্ত হতে বাধ্য। ক্যাম্পাস সম্পর্কে মন্তব্য করার যোগ্যতা আমি রাখি না, তবে এতটুকু উপলব্ধি করি যে আসলেই ক্যাম্পাস খাঁটি মানুষ গড়ার এক কারখানা। এখানে প্রতিটি মূহুর্ত ব্যয় হয় শান্তির সমাজ বিনির্মাণে। আমি ক্যাম্পাস’র ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের ৯৭তম ব্যাচের ছাত্র। সকল প্রশিক্ষণার্থীর পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের কোর্স ট্রেইনার শামছুন্নাহার নাবিলা ও স্বর্ণা শারমিন ম্যাডামকে। ধন্যবাদ জানাই ক্যাম্পাস পরিবারকে। গত মাস ছ’য়েক ধরে ক্যাম্পাস’র বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছি আমি। ক্যাম্পাস নিয়ে যা লিখলাম, তা একান্তই আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি। কোনো ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। সকলের প্রতি আহ্বান ক্যাম্পাস কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করুন, জীবন বদলে ফেলুন। দীর্ঘজীবী হোক “ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র”। প্রথম প্রকাশঃ এপ্রিল ২০১১