ক্যাম্পাস এক অবিনশ্বর লাইটহাউজ

সাইফুল হক
উপ-পরিচালক, সিএসডিসি



আমার জীবনের পড়ন্ত বেলায় আমি ক্যাম্পাস এ যোগদান করি। কোনো অফিস যে এতো সুন্দর হতে পারে, তা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। অফিসের চারদিকে গাছ-লতা-পাতা আর ফুলের সমারোহ। মনে হয়, যেন এক টুকরো সবুজ-শ্যামল নিসর্গের ভেতর ঢুকে পড়েছি। পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা অফিস। উত্তর-পশ্চিম কোণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক মহোদয়ের কক্ষ; মাঝে কম্পিউটার ল্যাব; প্রবেশ দরজার পাশেই সারি সারি বইয়ে সাজানো চমৎকার লাইব্রেরি; আর দক্ষিণের পুরোটাই ক্যাম্পাস’র সুদৃশ্য অডিটোরিয়াম।

গাছ-লতা-পাতা আর ফুলে-ফুলে সাজানো, সজীব-সতেজ; দখিনের জানালা দিয়ে সারাক্ষণ আসছে নির্মল বাতাস। ক্লান্ত-অবসন্ন মন সুন্দর করার চমৎকার পরিবেশ এটি। বার বার মনে হলো, আরো আগে কেন আসিনি এখানে! তবে সান্ত¡না এটাই যে, জীবনের পড়ন্ত বেলায় হলেও ক্যাম্পাস’র সান্নিধ্যে এসেছি। কেননা, যারা ক্যাম্পাস’র সান্নিধ্যে এসেছে, তাদের জীবন পাল্টে হিরন্ময় হয়েছে। ক্যাম্পাস’র সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকে আমার জীবনেও অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এখানে এসে প্রতিনিয়তই কিছু না কিছু শিখছি। ক্যাম্পাস’র কর্ণধার ড. এম হেলাল স্যার আমাদের কাজের বিভিন্ন দুর্বল দিকগুলো ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়ে আমাদেরকে সমৃদ্ধ করছেন প্রতিনিয়ত।

ক্যাম্পাস এক স্বর্ণমণি, এক জাদুর চেরাগ, এক পরশপাথর; যার স্পর্শে পাল্টে গেছে আমার জীবন। কী নেই ক্যাম্পাস’র? ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিএসডিসি) এর আছে জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনের ২৪টি মাল্টিডায়মেনশনাল কর্মসূচি। এর কিছু কর্মসূচি তরুণ ছাত্র ও যুব সমাজের আতেœান্নয়নে তাদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। তন্মধ্যে ডিজিটাল স্টার এওয়ার্ড, শিক্ষানবিশ কর্মসূচি, ইংলিশ এন্ড স্মার্টনেস কোর্স ফর লিডারশিপ, ডায়নামিক কম্পিউটার ট্রেনিং, ফ্রি সেমিনার অন প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড, ফ্রি মেডিটেশন-ইয়োগা-আকুপ্রেশার-রিফ্লেক্সোলজি অন্যতম। এসব ডায়নামিক ও যুগোপযোগী কার্যক্রমগুলো সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পরিচালনা করছে ক্যাম্পাস। এসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফাইড ছাত্র-যুবকরা কোয়ালিফাইড হয়ে গড়ে উঠছে।

ক্যাম্পাস’র অডিটোরিয়াম যেমন সুন্দর, তেমনি এ অডিটোরিয়ামে প্রায়ই অনুষ্ঠান লেগে থাকে। আর এসব অনুষ্ঠানে আসেন জাতির বিবেক ও জীবন্ত কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্বগণ। তাঁদের আলোকিত সংস্পর্শে উজ্জীবিত হয় তরুণ যুব প্রশিক্ষণার্থীরা। বহুবর্ণিল ব্যক্তিত্ব, কিংবদন্তী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত কিংবা জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার থেকে শুরু করে বহু মন্ত্রী, সচিব, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সরকারের সচিব, বীমা ব্যক্তিত্ব, শিল্প ব্যক্তিত্বসহ শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য-অর্থনীতি ইত্যাকার নানা ক্ষেত্রের প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বগণ আসেন ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে।

গেল সপ্তাহে ক্যাম্পাস’র অডিটোরিয়ামে এসেছিলেন সরকারের চৌকস সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাউন্টিং এলামনাই এসোসিয়েশনের যুগশ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট লায়ন স্বদেশ রঞ্জন সাহা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও স্টক একচেঞ্জ এর সুযোগ্য চেয়ারম্যান ড. আবুল হাশেম। এরকম উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্ঞানী-গুণীরা সবসময় আলোকিত করে রাখেন ক্যাম্পাস’র অডিটোরিয়াম। শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাছ থেকে পায় ভবিষ্যৎ গড়ার আলোকিত দিকনির্দেশনা। ক্যাম্পাস’র অডিটোরিয়ামে জ্ঞানী-গুণীরা বলেনÑ ক্যাম্পাস’র জাতি জাগরণমূলক এসব কর্মসূচি দেখে তাঁরা মুগ্ধ। তাঁরা ক্যাম্পাস’র বহুমুখী কর্মসূচির ভূঁয়সী প্রশংসা করেন। অনেকে ক্যাম্পাস’র কার্যক্রম সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলেন। ক্যাম্পাস’র কল্যাণ কর্মসূচিতে তাঁরা সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন এবং সমাজের উদারপ্রাণ বিত্তশালীগণকে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণের আহ্বান জানান।

অতিথিগণ আরও বলেন, ক্যাম্পাস ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. এম হেলালের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে আজ ৩৬ বছরে এই উচ্চতায় এসে পৌঁছেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস’র যে বীজ বপন করা হয়েছিল, আজ ৩৬ বছরে তা অঙ্কুর থেকে বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। আর এই বিশাল বৃক্ষের ছায়ায় তরুণ ছাত্র ও যুবসমাজের ঠাঁই হয়েছে। ড. হেলাল ক্যাম্পাস’র যুগোপযোগী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সবাইকে অতিক্রম করে গেছেন।

ক্যাম্পাস’র কিছু ঘনিষ্ঠ শুভানুধ্যায়ী আছেন। যাঁরা স্ব-মহিমার উদ্ভাসিত ডায়নামিক মানুষ। এঁরা ক্যাম্পাস’র যেকোনো অনুষ্ঠানে ছুটে আসেন। অনুষ্ঠান করে তোলেন উজ্জীবিত, প্রাণবন্ত। তরুণ ছাত্র ও যুব শিক্ষার্থীরা তাঁদের সান্নিধ্যে উজ্জ্বল-উচ্ছ্বল ও প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে। এঁরা ক’জন হলেন- বাংলাদেশ আইন সমিতির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আইন উপদেষ্টা এডভোকেট আবদুন নূর দুলাল; সরকারের সাবেক সচিব ইঞ্জিনিয়ার একেএম এনায়েত উল্লাহ; দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার সম্পাদক কে এম বেলায়েত হোসেন; সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও রাজউক’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোকন উদদৌলা; কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাকির হোসেন; বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রথম নির্বাহী পরিচালক ও সরকারের সাবেক যুগ্মসচিব এম এ রশিদ খান; দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার সম্পাদক, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের পরিচালক ড. খান আসাদুজ্জামান; প্রোএকটিভ ও পজিটিভ এটিচিউডের প্রবক্তা ড. আলমাসুর রহমান; সরকারের সাবেক যুগ্মসচিব ও সাহিত্যিক হাজেরা নজরুল; সরকারের উপসচিব আব্দুল্লাহ মাসুদ; সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিশ্বব্যাংক বিষয়ক কনসালটেন্ট এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফ্যামিলি লাভ মুভমেন্ট এর চেয়ারপার্সন মিসেস তাজকেরা খায়ের; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর নাজমা বেগম; এনএসআই’র পরিচালক এম সামছুল আমিন; ক্যাম্পাস’র ইংলিশ এন্ড স্মার্টনেস কোর্স এর রিসোর্স পার্সন এডভোকেট গোলাম কিবরিয়া। এঁরা সবাই খুব প্রাণবন্ত মানুষ। ক্যাম্পাস’র অনুষ্ঠানে তাঁরা শত ব্যস্ততার মাঝেও চলে আসেন। তাঁদের উপস্থিতি ও মূল্যবান বক্তৃতায় ছাত্র-যুবকরা হয় উজ্জ্বীবিত ও অনুপ্রাণিত। সবাই মিলে অনুষ্ঠানকে উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত করে তোলেন। ক্যাম্পাস’র অডিটোরিয়ামটা যেন হয়ে যায় আলোকিত এক লাইটহাউজ।

ক্যাম্পাস’র সব অনুষ্ঠানই শুরু হয় ডকুমেন্টারী প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। তারপর প্রধান অতিথিকে পুষ্পমাল্যে বরণ করে নেয়া হয়; সেই সাথে অন্যান্য অতিথিদেরকেও। প্রধান অতিথিকে ক্যাম্পাস’র জ্ঞানমালা সিরিজ প্রকাশিত সৃজনশীলতা বৃদ্ধি, আত্মোন্নয়ন ও জাতি জাগরণমূলক বইয়ের সেট উপহার দেয়া হয়। ক্যাম্পাস’র নিজস্ব গবেষণায় প্রকাশিত ২টি মডেল ও বিভিন্ন সিডির সেট অর্পণ করা হয়; স্যুভেনির দেয়া হয়। বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট ও ক্যাম্পাস’র পরিবেশ আন্দোলনের প্রতীক সবুজ ডেকোরেটিভ গাছ অর্পণ করা হয়। প্রধান অতিথির মাধ্যমে আশা-জাগানিয়া মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। মিউজিক ভিডিও পর্বে ক্যাম্পাস’র থিম সং এবং ক্যাম্পাস’র ডকুমেন্টারিতে সকল কর্মসূচির বাস্তবায়িত রূপ দেখানো হয়। ক্যাম্পাস অনুষ্ঠানের আরেকটি বিশেষ দিক হলো শিক্ষার্থীদেরকে বক্তৃতার সুযোগ দেয়া। শিক্ষার্থীরা অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ পেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে মাইক্রোফোনে তাদের মনের কথা বলে। বিনামূল্যে তাদেরকে এরূপ কোর্স করার সুযোগ দেয়ার জন্য তারা ক্যাম্পাস’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

এভাবে ক্যাম্পাস’র প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উজ্জ্বীবিত ও অনুপ্রাণিত হয়ে ওঠে ছাত্র ও যুবসমাজ। ক্যাম্পাস’র জাতি-জাগানিয়া কর্মসূচি তাদের উৎসাহী করে তোলে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার জন্য। ক্যাম্পাস’র সকল কর্মসূচিই জাতি জাগরণের কথা বলে। এখানে রয়েছে একঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। তাঁরা সবাই প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউডের মানসিকতা সম্পন্ন। ক্যাম্পাস’র সাথে থেকে তারা এই বিশেষ গুণাবলী অর্জন করেছে।

ক্যাম্পাস’র প্রাণপুরুষ ড. এম হেলাল একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন আলোকিত মানুষ। তাঁর অন্তর্নিহিত আলোয় আলোকিত ক্যাম্পাস’র সকল কিছু। তাঁর অফুরন্ত ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ক্যাম্পাস’র সবকিছুই ইতিবাচক। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা অতুলনীয়। অসীম ধৈর্যের সাথে ৩ যুগ ধরে ক্যাম্পাস কার্যক্রমের মাধ্যমে আলোকিত দেশ ও জাতি গঠনের কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে ক্যাম্পাস কার্যক্রম ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশ-দেশান্তরে। তিনি একাই একটি মহৎ সামাজিক সংস্কার আন্দোলনের স্বপ্নদ্রষ্টা ও বাস্তবে রূপায়নের অগ্রনায়ক। তিনি বহুবর্ণিল এক আলোকিত মানুষ। তাঁর আলোয় আজ বর্ণোজ্জ্বল ক্যাম্পাস। সেজন্যেই জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত মানুষ গড়ার কারখানা ক্যাম্পাস আজ দেশ ও জাতির এক অবিনশ্বর লাইটহাউজ।