ক্যাম্পাস হলো শান্তির প্রতীক আমার জীবনের আশার আলো
তানিয়া নূপুর
এক্সিকিউটিভ
ভূমিকা
একাডেমিক পড়াশোনা শেষ করে চাকরির সুবাদে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে গিয়েছি, বিভিন্ন কার্যক্রম দেখেছি; কিন্তু পাঠ্যপুস্তক থেকে অর্জিত জ্ঞান নিজের মধ্যে চর্চা করে এবং সবার মধ্যে ছড়িয়ে নিজেকে কীভাবে আলোকিত করা যায় -তা একমাত্র ক্যাম্পাস থেকে শিখেছি। আমার বিশ্বাস, ক্যাম্পাসই আমাদের সমাজকে আলোকিত করতে পারবে এবং জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ক্যাম্পাস এ আমার যেভাবে আসা
ক্যাম্পাস আমার জীবনে এসেছিল অলৈাকিকভাবে। একদিন এশার নামাজ পড়ে শুয়ে আছি, মনটা খুব খারাপ, মনে হতাশা কাজ করছিল এবং চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। আমি টিউশনি করে মাসে ১৩ হাজার টাকা ইনকাম করতাম। কিন্তু মনে কোনো শান্তি পাচ্ছিলাম না। রাতে এশার নামাজ পড়ে যখন মন খারাপ নিয়ে শুয়ে আছি, হঠাৎ ক্যাম্পাস থেকে ফোন আসে মন্ত্রিপাড়ায় ক্যাম্পেইন করার জন্য। কোনো কিছু চিন্তা না করে বলে দিয়েছি, আমি ক্যাম্পেইন করব। কারণ আমি একটু মনের শান্তি খুঁজছিলাম।
ক্যাম্পাস’র সাথে আমি জড়িত ২০১৭ সাল থেকে। আমি ক্যাম্পাস এ ফ্রি ইংলিশ কোর্স করতে আসি। তখন থেকে আমার মনে ইচ্ছা জেগেছিল, আমি ক্যাম্পাস এ কাজ করব। কারণ ক্যাম্পাস’র কার্যক্রম ও নিয়মনীতি আমাকে মুগ্ধ করেছিল। মনে হয়েছিল, এখান থেকে আমার জীবন পরিবর্তন হবে। ইংলিশ স্যারের মোটিভেশন ও ক্যাম্পাস’র সবার আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। তাই ক্যাম্পাস থেকে আমাকে যখন ডাকা হয়, তখন আমাদের সম্পাদক স্যার বলেনÑ তুমি যদি ক্যাম্পেইনে ভালো করো, তাহলে অফিসে তোমাকে পারমানেন্ট করব। কিন্তু আমি ৪ দিন কাজ করার পর শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে যাই। তারপরও স্যার আমাকে ক্যাম্পাস এ যোগদানের সুযোগ দেন। মানুষ মনে যা চায়, আল্লাহতায়ালা তার মনের আশা পূরণ করেন কোনো না কোনোভাবে। আমি ভাবিনি আমার রিজিক শেষ পর্যন্ত ক্যাম্পাস থেকে আল্লাহতায়ালা ব্যবস্থা করবেন। ক্যাম্পাস আমার জীবনের প্রেরণা, ক্যাম্পাস আমার আত্মা। ক্যাম্পাস’র সবাই যেন আমার আত্মার সাথে জড়িয়ে গেছে। ক্যাম্পাস আমার একটি পরিবার। আমি আমার পরিবারকে ছেড়ে আছি ৩ বছর। ক্যাম্পাস আমাকে দিয়েছে নতুন জীবন। আমার মনে হয়, রাতদিন ক্যাম্পাস’র সবার সাথে কাজ করলেও ক্লান্তিবোধ করব না।
অফিসের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা
আমি অফিসের কাজ সম্পর্কে কিছু জানতাম না, তবে আমি জব করেছি ২০০৯ সালে মেটাল ই-াস্ট্রি আর আর ক্যাবল’স এ স্টোর অফিসার হিসেবে। ওখানে সবাই আমাকে ভালো জানত। কিন্তু সেখানে নিয়মনীতি ছিল না, বিপদে পড়ার ভয় ছিল। কারণ ওখানে স্টোরের দায়িত্ব ছিল আমার ও সিনিয়র অফিসার নুরুজ্জামান ভাইয়ের। আমার সামনে একজনকে বিনা অপরাধে শাস্তি পেতে হয়েছে। যেখানে অন্যায়ের কোনো প্রতিবাদ ও বিচার হয় না। তাই ৯ মাস জব করার পর ছেড়ে দেই। এরপর থেকে আমার আর ঐভাবে জব করা হয়নি। জব পেয়েছি, কিন্তু পরিবেশ ভালো পাইনি। তাই অফিসের নিয়মনীতিও জানা ছিল না। মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি, কিন্তু একাডেমিক পড়াশোনার সাথে অফিসের কার্যক্রমের কোনো মিল না পাওয়ায় মনে হতাশা কাজ করছিল।
ক্যাম্পাস’র নিয়মনীতি দেখে আমার মনে আশা জেগেছিল, ক্যাম্পাস’র সাথে আমি জড়িত হবো। ক্যাম্পাস’র সাথে জড়িত হওয়ার পর মনের হতাশা দূর হয়ে যায়। ক্যাম্পাস’র উপ-পরিচালক মনির ভাইয়ের কাছ থেকে অফিসের হাতে-খড়ি শেখা। মনির ভাইয়া এত ধৈর্য্যশীল যেÑ আমি অনেক ভুল করি, কিন্তু তিনি রাগ না করে সুন্দর করে বুঝিয়ে দেন। আমি চাই, মনির ভাইয়ের মতো ধৈর্য্য ধরে কাজ করতে। আমি যেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে কম্পাসকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। ব্যক্তিগত অজ্ঞতা ও রাগী মেজাজের কারণে আমি কিছুক্ষেত্রে কয়েকবার ভুল করে ফেলেছি, যা পরে ক্ষমা চেয়ে ও ক্ষমা পেয়ে নিজকে শুধরিয়ে নিয়েছি। আমাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে শুধরানোর পথ ও সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে এবং এভাবে উন্নত সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে ক্যাম্পাস একেবারে অতুলনীয়। এভাবেই ক্যাম্পাস’র আলোয় আলোকিত হয়েছে বহুজনের জীবন-পরিবার-সমাজ; উন্নত হয়ে উঠছে আমাদের জাতি।
জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠন ক্যাম্পাস’র অভিষ্ট লক্ষ্য। আমি সেই লক্ষ্য পূরণের একজন সহযাত্রী হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। ক্যাম্পাস হলো শান্তির প্রতীক, আমার জীবনের আশার আলো। তাইতো আমার স্লোগান-
জীবনকে আলোকিত করতে হলে
চলো যাই ক্যাম্পাসে
(মতামত লেখকের নিজস্ব)