সারাদেশে ক্যাম্পাস’র বার্ষিক ক্যাম্পেইন এবং আমাদের ব্যতিক্রমী বিপুল অভিজ্ঞতা
সুইট কুমার মন্ডল
অফিস সেক্রেটারি
জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনে নিবেদিত এক অনন্য ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠানের নাম ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা। এ প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় বাৎসরিক ক্যাম্পেইন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষানবিশ হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ৫ থেকে ৬টি ওর্য়াকশপের মাধ্যমে নিবিড় প্রশিক্ষণ ও মহড়া দিয়ে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে এবং দৈনিক পকেটমানি প্রদানক্রমে এ ক্যাম্পেইন পরিচালিত হয়।
এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অফিস আচরণ, নিয়মানুবর্তিতা ও ন্যায়নিষ্ঠা; নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন; দলভিত্তিক কার্যক্রম; কথায় ও কাজে দ্রুততা; সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ; স্মার্টনেস, শেয়ারিং-কেয়ারিং, এডজাস্টমেন্ট ও ম্যাচিং ক্যাপাসিটি; গঠনমূলক সম্মুখ সমালোচনা; সম্পাদিত কাজের রিপোর্টিং ও মূল্যায়ন; সর্বোপরি নিজের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা-সৃজনশীলতা বৃদ্ধি সম্পর্কে ছাত্র-যুবকরা সম্মক জ্ঞান অর্জনের সুযোগলাভ করে থাকে।
ক্যাম্পাস’র জনসচেতনতা কার্যক্রমের আওতায় সকল অফিস-আদালতে ব্যবহার উপযোগী মানসম্পন্ন ক্যালেন্ডার প্রতিবছর প্রকাশ করা হয়; যা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, জাতীয় সংসদ ভবন, বাংলাদেশ সচিবালয়সহ সকল মন্ত্রণালয়-বিভাগ-অধিদপ্তর, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, হাইকোর্টসহ দেশের বিভিন্ন কোর্ট-কাছারি; জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, এসপি, সিভিল সার্জন, এলজিইডি ও পৌরভবন থেকে শুরু করে সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের দেয়ালে দেয়ালে ক্যাম্পাস কর্মীরা স্বহস্তে লাগিয়ে দিয়ে থাকে, যা এরূপ প্রচারের ক্ষেত্রে বিরল দৃষ্টান্ত। জাতীয় সমস্যা ও সম্ভাবনার বার্তাবাহী এ ক্যালেন্ডার বহুবছর থেকে দেশে সর্বাধিক প্রচারিত ক্যালেন্ডার হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত ও সমাদৃত।
ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হয় ক্যালেন্ডার ক্যাম্পেইন। এ সময় শিক্ষানবিশরা সকাল ৭টায় ক্যাম্পাস অফিস-অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হয় এবং তাদের জন্য নির্ধারিত (ক্যাম্পাস প্রদত্ত) লাল-সবুজ টি-শার্ট ও ক্যাপ পরিধান করে সারিবদ্ধভাবে বসে। তারপর বিভিন্ন বিষয়ে তাদের ব্রিফিং করেন ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দের মহাসচিব ড. এম হেলাল স্যার। অতপর তাদের টিম গঠন করে দেয়া হয়। প্রত্যেক টিমে থাকে অন্তত ৪ জন করে সদস্য এবং প্রতিষ্ঠান ভেদে ৮ জনও হয়। প্রত্যেক টিমে থাকে ১জন লিডার ও ১ জন কো-লিডার। লিডার ক্যাম্পেইন স্পটে গিয়ে সদস্যদের সবকিছু বুঝিয়ে দেন।
দৈনিক ক্যাম্পেইন শেষে ক্যাম্পাস অফিসে ফিরে সবাই নিজের ও টিম সদস্যদের সমালোচনা সম্বলিত রিপোর্ট করে। নির্ধারিত রিপোর্ট ফরমে রিপোর্ট করার মাধ্যমে ফুটে ওঠে প্রত্যেক সদস্যের সফলতা ও দুর্বলতা। সেসব দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষ নানাভাবে সহায়তা করে থাকে। এভাবে একজন শিক্ষানবিশকে ভবিষ্যতের লিডার ও কর্মযোগী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হয়। ক্যাম্পাস’র স্লোগান হলো সার্টিফাইড ছাত্র-যুবকদেরকে কোয়ালিফাইড হিসেবে গড়ে তোলা। এসব মহৎ উদ্যোগ একমাত্র ক্যাম্পাসই নিতে পারে, অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান পারে বলে আমার জানা নেই।
ক্যাম্পাস’র ব্যানারে দেশ ভ্রমন
ক্যাম্পাস’র বার্ষিক ক্যাম্পেইনের সময় এবার সৌভাগ্যক্রমে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালিত হয়। তাই আমাদের ক্যাম্পেইন শুধু ক্যালেন্ডার লাগানোতে সীমাবদ্ধ না রেখে আমরা বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের বিশিষ্ঠজনের মুজিববর্ষ সংক্রান্ত মতামত সংগ্রহ করারও ক্যাম্পেইন করি।
ক্যাম্পাস এ এসে শিখেছি, টাইম ম্যানেজমেন্ট কীভাবে করতে হয়। আমাদের সম্পাদক মহোদয় ড. হেলাল স্যার প্রত্যেক মিটিংয়ে এবং ওয়ার্কশপে বার বার এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে শিখিয়ে থাকেন। প্রিয় পাঠক, ভাবছেন কেন এই প্রসঙ্গ এখানে আনলাম? তার কারণ হলো, টাইম ম্যানেজমেন্ট একজন ক্যাম্পাস স্টাফ কীভাবে করেন সেটা বুঝানোর জন্য। ক্যাম্পেইনের সময়ে আমরা সারাদিন অফিস করার পর সারারাত জার্নি করে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছাই ভোর ৫টায়। তারপর হোটেলে গিয়ে বিশ্রাম নেয়ার পর সকাল ৮ টায় নাস্তা করে আমরা প্লানমতো কাজ শুরু করি।
এবারের ক্যাম্পেইনে আমি বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে গিয়েছি। বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও আমি ক্যাম্পেইন করেছি। চট্টগ্রাম শহরে প্রত্যেকটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, ডিসি অফিস এবং প্রত্যেকটি কোর্ট-কাচারিতে গিয়ে ক্যাম্পাস’র ব্যাপক প্রশংসা শুনেছি। প্রত্যেক শ্রেণি-পেশার মানুষের মুখ থেকে ক্যাম্পাস’র প্রশংসা ও গুণগান শুনে ক্যাম্পাস’র সাথে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।
আমার জীবনে আর একটা অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার না করলেই নয়। আর তা হলো আমার মতো একজন সাধারণ মানুষকে ক্যাম্পাস সুযোগ করে দিয়েছে সমাজের বিশিষ্ট মানুষদের সাথে দেখা করার। আমি এর আগে যাঁদের কথা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে দেখতাম, তাঁদের সাথে বিনা দ্বিধায় দেখা করতে পেরেছি। যার কারণে নিজের আত্মবিশ্বাস ও মননে এক অভূতপূর্ব ভালো লাগার জায়গা তৈরি করে দিয়েছে ক্যাম্পাস। আমার বিশ্বাস, দেশের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে দেখা করা ও কথা বলার একমাত্র প্লাটফর্ম হচ্ছে ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস’র কর্ণধার ড. হেলাল স্যার এবং ক্যাম্পাস’র নিবেদিত কর্মীবাহিনীর ৩ যুগ অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল, যা ঢাকা শহরের গন্ডি পেরিয়ে আজ সারা দেশে বিস্তৃত। সেই সাথে দেশ-বিদেশেও এর ব্যাপকতা লাভ করেছে।
ক্যাম্পেইনের আরেকটি ঘটনার কথা শেয়ার করছি। আমরা ক্যাম্পেইনে রংপুরে গিয়েছি। রংপুরে বিভিন্ন দপ্তরের মতো বিভাগীয় পুলিশ কমিশনারের অফিসে গিয়েছি। সেখানে গেটে আমাদের সিকিউরিটি চেকের জন্য আটকানো হয়। চেক করার পর আমাদের জিজ্ঞাসা করা হয় আমরা কোথায় যাব। আমরা বললাম, কমিশনার স্যারের সাথে দেখা করতে চাই। দেখা করার কথা শুনে গেটে কর্তব্যরত পুলিশ বলল, এমপি-মন্ত্রী ছাড়া স্যারের সাথে দেখা করার নিয়ম নেই। আমরা বললাম আমরা ক্যাম্পাস থেকে এসেছি, এই কথাটি শুধু কমিশনার স্যারকে বলুন; স্যার দেখা না করলে আমরা চলে যাব। তখন তারা অনেক ভয়ে ভয়ে কমিশনারের রুমে গেল এবং আমাদের কথা বলল। কিছুক্ষণ পর লোকটি অবাক হয়ে আমাদের বলল, যান স্যার আপনাদের ডেকেছেন। আমরা কমিশনারের রুমে গেলাম। কমিশনার স্যার বললেন আসুন আসুন, ক্যাম্পাস’র ক্যালেন্ডারের জন্যই অপেক্ষা করছি। আমি অনেক দিন যাবত ক্যাম্পাস সম্পর্কে জানি, ক্যাম্পাস’র কার্যক্রম আমার অনেক ভালো লাগে; এ রকম ব্যতিক্রমী চিন্তা-ভাবনা কোনো প্রতিষ্ঠান করতে পারে, ক্যাম্পাস না থাকলে আমরা চিন্তাও করতে পারতাম না। এভাবে তিনি ক্যাম্পাস’র ভূয়শী প্রশংসা করেন।
সুদূর রংপুরে গিয়ে বিভাগীয় পুলিশ কমিশনারের মুখ থেকে এমন কথা শুনে ক্যাম্পাস’র সামান্য একজন স্টাফ হিসেবে আমার বুক সেদিন আনন্দে ভরে উঠেছিল। সেইসাথে আমার অনেক গর্ব হচ্ছিল এরূপ ব্যতিক্রমী একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হতে পেরে।
ক্যাম্পাস এইরকম ব্যতিক্রমী কার্যক্রমের দ্বারা দেশ-বিদেশে তার তেজস্বী আলো ছড়িয়ে দিয়ে সবাইকে আলোকিত করে তুলুক, এই মঙ্গল কামনা আমাদের সকলের অঙ্গীকার হোক; আর ক্যাম্পাস’র আলোকিত শক্তিই হোক আমাদের আগামী দিনের পথ চলা। সেই সাথে ক্যাম্পাস’র আলোয় আলোকিত হোক আমাদের দেশ ও জাতি। শুভ হোক সকল মঙ্গল প্রয়াস।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)