ক্যাম্পাস সততা পুরস্কার (নীতিমালা )

পটভূমিঃ জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনের মাধ্যমে ব-হু-মুখী সম্ভাবনার বাংলাদেশকে বিশ্বশীর্ষ দেশে পরিণত করাই ক্যাম্পাস’র লক্ষ্য। এরূপ সমাজ ও জাতি গঠনে অন্তরায় হচ্ছে দুর্নীতি ও অসততা। তাই নীতি-নৈতিকতা চর্চার মাধ্যমে দুর্নীতি ও অসততারোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অভিপ্রায়েই প্রবর্তিত হয়েছে ‘ক্যাম্পাস সততা পুরস্কার’। বাংলাদেশে সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন স্তরে ব্যাপক ঘুষ-দুর্নীতি ও অসততার ব্যাপকতা এখন আন্তর্জাতিক পরিসরেও বহুল প্রচারিত। এ অবস্থা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। কিছু মানুষের কারণেই বাংলাদেশকে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হতে হচ্ছে বছরের পর বছর। উৎকোচ-সুখী এবং উৎকোচ-স্ফীত মানুষের দাপটে সমাজে সৎ ও নিষ্ঠাবানরা অসহায়বোধ করছেন, এমনকি নিগৃহীতও হচ্ছেন। সততা এখন যেন বোকামি ও বৈষয়িক জ্ঞান-বুদ্ধিহীনতার অপর নাম।
তাই এ মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে যাঁরা সৎ অথচ উপেক্ষিত তাঁদের প্রাপ্য ও হৃত সম্মান ফিরিয়ে দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় এবং সম্ভাব্যক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি প্রদান করা। এতে একদিকে যেমন সৎ ও নিষ্ঠাবানদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে সামাজিক দায়বদ্ধতা পালিত হবে, অন্যদিকে সৎ মানুষের আদর্শ ও উদাহরণ তুলে ধরে আগামী প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হবে। এমন উদ্দীপ্ত মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসেই সমাজে ইতিবাচক চেতনাসমৃদ্ধ একটি সৎ ও কল্যাণকর পরিমন্ডল পুনর্গঠিত হবে। এই বিবেচনা থেকেই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, দপ্তর এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সৎ ও নীতিবান ব্যক্তিদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ষান্মাসিক অথবা বাৎসরিক পুরস্কার প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ক্যাম্পাস।
‘সততা পুরস্কার’ প্রদানের ক্ষেত্রে তাদেরকেই ‘সৎ বলা হবে’, যারা কর্মক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করেন, ব্যক্তিগতভাবে ন্যায়-নিষ্ঠ ও সৎ জীবনযাপন করেন। এই পুরস্কারের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সৎ-ন্যায়নিষ্ঠদেরকে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে চিহ্নিত করা হবে এবং বৈরী পরিবেশের মধ্যেও বিবেক ও সমাজের কাছে সৎ থাকার স্বীকৃতিস্বরূপ তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে। প্রাথমিকভাবে ক্যাম্পাস’র পক্ষ থেকে ‘সততা পুরস্কার’-এর দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পরবর্তীতে এরূপ পুরস্কার জাতীয়ভাবে প্রদানের জন্য রাষ্ট্র প্রধান ও সরকার প্রধানসহ নীতি-নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বা সরকারি পর্যায়ের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রপতি সততা পুরস্কার, প্রধানমন্ত্রী সততা পুরস্কার, একুশে সততা পুরস্কার, স্বাধীনতা সততা পুরস্কার, বিজয় দিবস সততা পুরস্কার, মে দিবস সততা পুরস্কার ইত্যাদি সম্মাননা নিয়মিতভাবে প্রদান করা যেতে পারে।
সততা পুরস্কার কর্মসূচির প্রাথমিক রূপরেখাঃ
১। পুরস্কারের নামঃ ক্যাম্পাস সততা পুরস্কার।
২। যাদেরকে পুরস্কার দেয়া হবেঃ কর্মক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতি ও অসততার ঊর্ধ্বে থেকে যাঁরা দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
৩। মেয়াদঃ প্রতিবছর অন্ততঃ একবার এ পুরস্কার প্রদান করা হবে। সম্ভাব্যক্ষেত্রে ষান্মাষিকভিত্তিতেও পুরস্কার প্রদান করা যেতে পারে।
৪। পুরস্কারের সংখ্যা ও মূল্যমানঃ প্রতিবছর পুরস্কারের সংখ্যা ও মূল্যমান নির্ভর করবে দেশী-বিদেশী সংস্থাসহ অত্র পুরস্কার কর্মসূচির স্পন্সরদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণের ওপর।
৫। পুরস্কার নির্বাচন কমিটির সম্ভাব্য সদস্যঃ
একজন বিচারপতি বা শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী, একজন নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা এমপি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ভাইস-চ্যান্সেলর, সরকারের বর্তমান/সাবেক সচিব বা যুগ্ম-সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের সদস্য বা প্রতিনিধি, বাংলাদেশ পুলিশ প্রতিনিধি, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সরকার প্রধানের প্রতিনিধি, শিক্ষক সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেসক্লাব’র সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক, রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক, এফবিসিসিআই’র সভাপতি বা প্রতিনিধি, এসোসিয়েশন অব ব্যাংকস্-এর সভাপতি বা ব্যাংকার ব্যক্তিত্ব, ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন’র সভাপতি বা বীমা ব্যক্তিত্ব, ঢাকা চেম্বার/মেট্রোপলিটন চেম্বার’র সভাপতি, জাতীয় পর্যায়ের কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক, সিএসডিসি’র চেয়ারম্যান/সভাপতি এবং সততা পুরস্কার কর্মসূচির স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা প্রতিনিধি।
উপরোক্ত ব্যক্তিবর্গকে ক্যাম্পাস সততা পুরস্কার কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত করে পুরস্কার নির্বাচন কমিটিতে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হবে। সে আহ্বানে যাঁরা সম্মত হবেন, তাঁদের নিয়ে এক বছরের জন্য কমিটি গঠিত হবে। ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র (সিএসডিসি) -এর মহাসচিব কমিটির সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করবেন এবং ক্যাম্পাস কার্যালয় কমিটির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে। উক্ত কমিটি প্রয়োজনে যে কাউকে সদস্য হিসেবে কো-অপট্ করতে পারবে।
সততা পুরস্কার নির্বাচন কমিটিতে থাকার বিষয়ে ইতোমধ্যে লিখিত সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন বিচারপতি ফারুক আহমেদ, ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. বোরহান উদ্দিন, প্রফেসর ড. এম শমশের আলী ও প্রফেসর ড. এম উমার আলী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, স্যামসন এইচ চৌধুরী, ডাচ্বাংলা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন খান, ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক পারভিন হক সিকদার, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান এম মুস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কাজী আজহার আলী প্রমুখ। তাছাড়া স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের প্রধান/প্রতিনিধি এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ব্যক্তিত্ব পুরস্কার নির্বাচন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
৬। পুরস্কার নির্বাচন কমিটির সভা ও কোরামঃ
পুরস্কার নির্বাচন কমিটির সভা আহ্বানের ক্ষেত্রে কমিটির সভাপতি অথবা অন্ততঃ তিন সদস্যের সাথে আলোচনা করে সভার তারিখ ও সময় নির্ধারণপূর্বক সমন্বয়কারী কমিটির সভা ডাকবেন। ক্যাম্পাস’র চেয়ারম্যান কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অথবা কমিটির প্রথম সভায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে কোন সদস্য এক বছরের জন্য কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটির এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিতিতে সভার কোরাম হবে এবং উপস্থিত সদস্যগণের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
৭। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং এর অধীন অধিদপ্তর ও দপ্তরে পত্র প্রেরণ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কর্মরতদের মধ্য থেকে ঘুষ-দুর্নীতির নিরিখে সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনাযোগ্য অনধিক ৩ জনের নাম (জীবন বৃত্তান্ত ও ছবিসহ) এবং সুপারিশ প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হবে। বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে সংবাদ মাধ্যমে সৎ ব্যক্তির নাম ও তথ্য আহ্বান করা যেতে পারে।
৮। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর থেকে এবং বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত সৎ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে পুরস্কার নির্বাচন কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে পুরস্কারের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের নির্বাচন করা হবে। এ ব্যাপারে কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
৯। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী অথবা দেশে-বিদেশের প্রথিতযশা কোন ব্যক্তির মাধ্যমে সততা পুরস্কার প্রদান করা হবে।
১০। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করবে ক্যাম্পাস। সঙ্গতকারণেই অনুষ্ঠানের সভাপতি, প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিবৃন্দ নির্বাচনসহ ইত্যাকার কাজের দায়িত্ব পালন করবে ক্যাম্পাস।
১১। পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত প্রত্যেককে নির্ধারিত পরিমাণ নগদ অর্থ বা সমমূল্যের উপহার-সামগ্রী প্রদান করা হবে। তাছাড়া একটি করে সনদ, ব্যাজ বা ক্রেস্ট প্রদান করা যেতে পারে। দেশী বা বিদেশী কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে ঐ সংস্থা/প্রতিষ্ঠানের উপহারও বাড়তি পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হবে। পুরস্কারের সংখ্যা ও মূল্যমান নির্ধারণে ক্যাম্পাস’র সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
১২। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সততা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাঁদের বিশেষ নাগরিক সুবিধা প্রদানের (যেমনঃ বাস-রেল-বিমান ভ্রমণে বিশেষ সুবিধা দান, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও কার্যক্রমে তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো-সম্পৃক্ত করা) জন্য সরকার ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করা অত্র পুরস্কার কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত।
১৩। অত্র পুরস্কার প্রদান কর্মসূচিতে ক্যাম্পাস কেবল আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। একটি সেবাধর্মী, অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ক্যাম্পাস’র নিজস্ব আর্থিক সীমাবদ্ধতার প্রেক্ষিতে সমাজ হিতৈষী ও কল্যাণকামী ব্যক্তিত্বদের কো-স্পন্সর হিসেবে সম্পৃক্ত করে এই মহতী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
১৪। ক্যাম্পাস প্রণীত এটি একটি খসড়া নীতিমালা। এ নীতিমালার ৫ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত পুরস্কার নির্বাচনের জন্য গঠিতব্য কমিটিতে আলোচনার ভিত্তিতে এ নীতিমালা চূড়ান্তভাবে গৃহীত হবে। তাই যে কেউ ইচ্ছে করলে এতে মতামত পাঠাতে পারেন।