বেশ কিছুদিন থেকেই কম্পিউটার শেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলাম। হঠাৎ একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ক্যাম্পাস ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিং -এর একটি লিফলেট চোখে পড়ে। ক্যাম্পাস অফিসে যোগাযোগ করে জানতে পারলাম ঢাকার প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের পাশে তোপখানা রোডে অবস্থিত একটি শিক্ষা ও সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস’, যেখানে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
প্রথম দিনের পরিদর্শনেই বুঝতে পারলাম, ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠানটি অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যতিক্রম। এখানে ন্যায়-নিষ্ঠা ও সময়ের মূল্য সম্পর্কে সবাই সর্বদা সচেতন। ধীরে ধীরে এই প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কার্যক্রমের সাথে পরিচিত হলাম; যেমন- ফ্রি জয়েন্ট মেডিটেশন, ইয়োগা, বাৎসরিক ক্যাম্পেইন ও শিক্ষানবিশ কর্মসূচি, সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রম, ক্যাম্পাস সততা পুরস্কার, ক্যাম্পাস হেলথ্ সার্ভিস ইত্যাদি। তাছাড়া এখান থেকে নিয়মিত দু’টি পত্রিকা প্রকাশিত হয়- শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনভিত্তিক পাক্ষিক ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস’ ও আঞ্চলিক উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নের চেতনা সঞ্চারী পত্রিকা মাসিক ‘লক্ষ্মীপুর বার্তা’। শিক্ষার্থী হিসেবে স্বভাবতই ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস’ পত্রিকাটি আমাকে খুব আকৃষ্ট করে।
জীবনে একজন বড়মাপের মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন সেই ছেলেবেলা থেকেই। কিন্তু এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে বড় মনের মানুষ হওয়া, যার খোরাক পেয়েছি আমি ক্যাম্পাস থেকে। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা জীবনেই অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যলাভ করছি, যা হয়তো অন্য কোনভাবে বা অনেক কিছুর বিনিময়েও সম্ভব হতো না।
মন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অভ্যাস পরিবর্তন তথা আত্মনিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন বিষয়। একমাত্র মেডিটেশনের মাধ্যমে তা সহজে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কম্পিউটার ট্রেনিংকালে একদিন ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এম হেলাল স্যারের বক্তৃতা থেকে মেডিটেশন বা ধ্যানচর্চার কথা জানতে পারলাম। আরও জানলাম, কিভাবে এ চর্চার মাধ্যমে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, মন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কিভাবে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। তিনি সবাইকে কমপক্ষে দশটি সেশনে অংশগ্রহণ করতে বললেন। স্যারের অনুপ্রেরণায় সেই থেকে মেডিটেশনের প্রতিটি সেশনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে চিন্তা-চেতনায় উন্নততর সংস্কৃতিবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং বলতে দ্বিধা নেই যে, অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়েছি।
অনার্সে পড়ালেখার পাশাপাশি আমি খণ্ডকালীন কাজ করছি ক্যাম্পাস অফিসে। এতে একদিকে earn while I learn তথা জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি অর্থ উপার্জন এবং অন্যদিকে ছাত্রজীবনেই কর্মজীবনের অনেক অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হচ্ছে আমার।
বর্তমান যুব সম্প্রদায়ের একটি বিশাল অংশ পথভ্রষ্ট হয় শুধুমাত্র যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে। কিন্তু উপযুক্ত দিক-নির্দেশনা পেলে ছাত্ররাই দেশের সম্পদে পরিণত হতে পারে। আমি মনে করি, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা এবং ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিএসডিসি) অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ক্যাম্পাস আয়োজিত বিভিন্ন সেমিনার ও অফিস সভায় ঘুষ-দুর্নীতি, পরীক্ষায় নকল, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ইত্যাদি বন্ধের আন্দোলনের পাশাপাশি উপযুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার শিক্ষা দেয়া হয়। এছাড়া নিজের ও সমাজের কাছে স্বচ্ছ থাকা, অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়া, ভালকে ‘হ্যাঁ’ এবং মন্দকে ‘না’ বলার ব্যাপারেও যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, তা সত্যিই অনুকরণীয় ও প্রশংসনীয়।
মোদ্দাকথা হলো, কোন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য বা প্রচারের জন্য নয়, বরং সমাজের কুসংস্কার ও অন্ধকারকে দূরীভূত করে জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনে ক্যাম্পাস পত্রিকা ও ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার অবিরাম কাজ করে চলেছে। ছাত্র-যুব সমাজে দেশপ্রেম ও মানবপ্রেম জাগ্রত করার মহৎ উদ্দেশ্যের সাথে একাত্ম হয়ে ক্যাম্পাস পরিবারের একজন হতে পেরে আমি আনন্দিত ও গর্বিত। ভালোবাসায় সিক্ত ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস’ -লক্ষ্যে পৌঁছতে তোমার জন্য রইল অনেক প্রার্থনা ও শুভ কামনা।
সৈয়দা শামছুন্নাহার নাবিলা
সিনিয়র এক্সিকিউটিভ