www.bdjobs.com এ চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রে আবেদন করি। ক্যাম্পাস থেকে প্রথম যেদিন আমার কাছে ফোন করা হয়, সেদিন ফোনে স্যারের (সম্পাদক মহোদয়) সাথে কথা বলে বুঝতে পারি স্যার এবং ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠান সমাজের অন্য আর দশটা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আলাদা। সাধারণত যে কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হলে প্রতিষ্ঠানের সুবিধা মতো একটা সময়ে চাকরিপ্রার্থীকে আসতে বলা হয়, চাকরিপ্রার্থীর সুবিধা-অসুবিধা তারা ভাবেন না বা চিন্তায়ই আনেন না। কিন্তু ক্যাম্পাস এমন একটি প্রতিষ্ঠান, তারা চাকরিপ্রার্থীর সুবিধার কথা চিন্তা করে এবং তার সাথে কথা বলে তারপর সময় নির্ধারণ করে। সময়ের মূল্য সম্পর্কে তারা যথেষ্ট সচেতন এবং সব মানুষকে তারা সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকে; এটা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।
প্রথম দিন ক্যাম্পাস এ এসে বুঝতে পারলাম, এ প্রতিষ্ঠানটি অন্যসব প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যতিক্রম। এখানে ন্যায়নিষ্ঠা ও সময়ের মূল্য সম্পর্কে সবাই সর্বদা সচেতন। প্রথম যেদিন ক্যাম্পাস এ যোগদান করি, সকালে সম্পাদক মহোদয়ের সাথে দেখা হওয়া মাত্র স্যার জিজ্ঞেস করলেন ফজর নামাজ পড়েছি কিনা। আমি বললাম পড়ি নাই, যোহরের নামাজের সময় কা’যা পড়ব। শুনে স্যার বললেন নামাজ পরে পড়ার জন্য রাখতে হয় না, যথাশীঘ্র কা’যা পড়ে ফেলা উচিত। সকল ভালো কাজ, গঠনমূলক কাজ সর্বাগ্রে করে ফেলবে। স্যার আমাকে ওযু করে আসতে বললেন এবং তখনি নামাজ আদায় করার জন্য বললেন। প্রথমদিন তাঁর আচরণ দেখে মনে হলো তিনি শুধু কর্মজীবনের গাইড নন, ব্যক্তিগত জীবনেরও তিনি একজন সুযোগ্য গার্ডিয়ান বটে।
ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাসচিব এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক জনাব এম হেলাল স্যার আমাদের সকলের জন্য একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। আমাদের কর্মজীবনের পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনে তিনি গার্ডিয়ানের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাঁর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও পরিচালনায় এখানকার কর্মপরিবেশ খুবই চমৎকার। এখানে ভালো কাজের জন্য যেমন পুরস্কার প্রদান করা হয়, তেমনি মন্দ কাজের জন্য তিরস্কার পেতে হয়। স্যারের কাছে উন্নততর মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ার জন্য যেসব টিপ্স পাওয়া যায়, সেসব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যাম্পাস’র সঙ্গে আমার এ স্বল্প পরিচয় থেকে আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যে প্রকৃতপক্ষেই এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মহৎ ও কল্যাণকর। এই প্রতিষ্ঠানের মহাসচিব এম হেলাল স্যার থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে স্বচ্ছতা, দায়িত্ববোধ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও সময়ানুবর্তিতা সম্পর্কে রয়েছে যথেষ্ট সচেতনতা। এখানে কাউকে ছোট করে দেখা হয় না, সবাই পায় সমান গুরুত্ব।
সমাজের অন্যায়-অনাচার, ঘুষ-দুর্নীতি, ভালো-মন্দ নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সেমিনারে যেরকম আলোচনা এবং প্রচারের যে উদ্যোগ নেয়া হয়, তা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় না। আসলে শুধুমাত্র জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও আলোকিত জাতি গঠন তথা উন্নত মনের মানুষ তৈরি এবং অনিয়ম-অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার জন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে, ক্যাম্পাসকে না দেখলে তা বিশ্বাস করা যায় না। এই প্রতিষ্ঠান দেশের যুবসমাজকে সুযোগ করে দিয়েছে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি মানবীয় গুণাবলির বিকাশ সাধনের মাধ্যমে প্রকৃত সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার।
ক্যাম্পাস একদিকে দেশ ও সমাজের অন্যায় অসঙ্গতিগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে যুবসমাজকে প্রতিষ্ঠিত করতে উৎসাহিত করছে নানারকম কল্যাণকর প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে।
ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র এর অডিটোরিয়ামে ৬-১১-২০১৪ তারিখ অনুষ্ঠিত হয় ইংলিশ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং ৯-১১-২০১৪ তারিখ অনুষ্ঠিত হয় ফ্রী কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ১৩০তম ব্যাচের সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠান। স্যার আমাকে বললেন এ দু’টি অনুষ্ঠানের কোনো ত্রুটি থাকলে সে সম্পর্কে সমালোচনার দৃষ্টিতে লিখিতভাবে রিপোর্ট করার জন্য। আমি অনেক চেষ্টা করেও দু’টি অনুষ্ঠানের কোনো ত্রুটি খুঁজে বের করতে পারিনি। আসলে অনুষ্ঠানগুলো এমনভাবে সেট করা এবং অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য যাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সবাই তার দায়িত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন; কোনো ত্রুটি হবার সুযোগ নেই। এটি হলো ক্যাম্পাস’র অনন্য বৈশিষ্ট্য।
বর্তমান যুব-সমাজের একটি বিরাট অংশ পথভ্রষ্ট হয় শুধুমাত্র যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে। কিন্তু উপযুক্ত দিকনির্দেশনা পেলে ছাত্র-যুবকরাই দেশের সম্পদে পরিণত হতে পারে। সেক্ষেত্রে ক্যাম্পাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি শিখেছি মানুষ যে কাজ করুক না কেন সেটা যদি মন দিয়ে করে এবং তার লক্ষ্য যদি অটুট থাকে, তাহলে সে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছাতে পারবে।
সব মানুষের মনে বড় মাপের মানুষ হবার স্বপ্ন থাকে, আমারও বড় মাপের মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন সেই ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু এটাও জেনেছি এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে বড় মনের মানুষ হওয়া, যার খোরাক পেয়েছি আমি ক্যাম্পাস থেকে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যলাভ সম্ভব, যা হয়তো অন্য কোথাও অন্য কোনোভাবে বা কোনো কিছুর বিনিময়েও সম্ভব হবে না।
পরিবার ও সমাজ থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখা হয় না। ক্যাম্পাস এ এসে আমি যা শিখেছি এবং উপলব্ধি করেছি, তা হবে আমার জীবন চলার পথের পাথেয়। আমরা অনেক কিছু আশা করি, তার কোনোটি পূরণ হয়, কোনোটি হয় না। ক্যাম্পাস আমাকে শিখিয়েছে পাওয়া বা অর্জনের প্রকৃত অর্থ। ক্যাম্পাস মনে করে মানুষ জীবনে যা কিছু ভালো কাজ করে তা-ই তার পাওয়া, তা-ই তার অর্জন। আর এই ভালো কিছু অর্জন করতে হলে চাই মহান সৃষ্টিকর্তার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস, মনের একাগ্রতা আর অদম্য ইচ্ছা।
ক্যাম্পাস এ কাজের সুযোগ পেয়ে এখন নিজেকে অনেক সমৃদ্ধ মনে হয়। এই প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে সাফল্যে পৌঁছাতে আমাকে সঠিক পথ দেখিয়েছে, যার ফলে আমি অনেক সাহস পেয়েছি। আমি প্রার্থনা করি, পৃথিবীর স্থায়িত্বকাল অবধি ক্যাম্পাস নিজ পরিচয়ে কাজ করে যাক। যে স্বপ্ন ক্যাম্পাস লালন করে, ‘২০২০ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও আলোকিত জাতি গঠন’ এর হোক সার্থক রূপায়ন।
আল-আমিন
সিনিয়র এক্সিকিউটিভ, অর্থ ও হিসাব বিভাগ