দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নিজেই তার আইন মানে না বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। সম্প্রতি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক’র প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা ২০১৬-২০২১-এর ওপর সুশীলসমাজের ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্টজনরা।
তিনি বলেন, আপনারা হয়তো জানেন না, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানেই আইন মানা হয় না। আইনগতভাবে কোনো অভিযোগ ৩০ দিনে অনুসন্ধান করার কথা, সেই অনুসন্ধান চলে চার বছর, আবার কখনো ১০ বছর। একই অনুষ্ঠানে দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। যাতে করে কমিশন তার ক্ষমতা স্বাধীনতাভাবে প্রয়োগ করতে পারে। একই সঙ্গে আরো কার্যকর করতে দুদক’র ভেতরে সংস্কারের দাবিও জানানো হয়।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ জমির, সাবেক মন্ত্রী ড. মিজানুর রহমান শেলী, সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব আলী ইমাম মজুমদার, সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, এমআরডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান মুকুল, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, সিপিডি’র ফাতেমা ইউসুফ প্রমুখ।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা অনেকেই দুদক’র বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। যেমন- বড় কিছু ধরা হচ্ছে না। আমরা সেই অভিযোগ মাথা পেতে নিচ্ছি। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের পরিবেশ, সমস্যা ও সময় সব কিছুই আপনাদের বিবেচনা করতে হবে। তবে একদিন সবকিছু ভালো হবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
দুদক’র সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, দুদক’র করা মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক বড় অপরাধী পার পেয়ে যাচ্ছে। তিনি কমিশনের চেয়ারম্যান থাকাকালে তাঁর নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার দায়ে এক অভিযুক্তের বিচার পাঁচ বছরেও শুরু না হওয়ায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন। এভাবেই দুদক’র প্রতিটি মামলার বিচারে ধীরগতি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ জমির ও সুজন এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার দুর্নীতির মামলা বিচারে একটি বিশেষ আদালত গঠনের প্রস্তাব দেন।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে যে ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছে, এ রকম একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারলেই দুর্নীতি কমে আসবে বলে তাঁরা মন্তব্য করেন। দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সরকারের কাছে দাবি জানান মিজানুর রহমান শেলী ও আলী ইমাম মজুমদার।
মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন দুদক কমিশনার ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন অপর কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম ও দুদক’র খসড়া কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন দুদকের মহাপরিচালক ড. শামসুল আরেফিন।