গ্রেডিং পদ্ধতির প্রথম বছর ২০০৩ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাঁচ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছিল মাত্র ২০ জন। পাসের হার ছিল ৩৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ১৪ বছরের মাথায় এবার অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় পাসের হার যেমন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, তেমনি জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা চলে এসেছে ৫৮ হাজার ২৭৬ জনে। ১৪ বছরের ব্যবধানে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা বেড়েছে ৫৮ হাজার ২৫৬ জন। এই চিত্রই বলে দিচ্ছে দেশের দশ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে যথারীতি সাফল্যের বিস্ফোরণ ঘটেছে। পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিসহ সকল সূচকেই আগের সাফল্যকে ম্লান করে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
আটটি সাধারণ, একটি কারিগরি ও একটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে এবার ১২ লাখ তিন হাজার ৬৪০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে আট লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ জন। এবার শতভাগ পাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি কমেছে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। সাধারণ বোর্ডের মধ্যে পাসের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে যশোর বোর্ড, যেখানে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। ৬৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ নিয়ে সবচেয়ে কম পাস করেছে কুমিল্লা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে বরাবরের মতো এগিয়ে ঢাকা। যেখানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮ হাজার ১১০ জন। তবে পাসের হারে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে মাদ্রাসা বোর্ড। যেখানে পাস করেছে ৮৮ দশমিক ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী।
এদিকে ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিতের মতো বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে চ্যালেঞ্জিং হলেও এবার এসব বিষয়ে ভাল করেছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও ভাল ফলের পেছনে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি ভালভাবে আয়ত্ত করা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ জোরদার করাসহ আছে আরও বেশ কিছু কারণ।
ঢাকা বোর্ড
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল তিন লাখ ৩৭ হাজার ১৯ ছাত্রছাত্রী। উত্তীর্ণ হয়েছে দুই লাখ ৪৭ হাজার ৮০৬ জন। পাসের হার ৭৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৬৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। এবার ঢাকা বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮ হাজার ১১০ জন, গত বছর যা ছিল ১৮ হাজার ৮৯৩ শিক্ষার্থী। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজ (ডিআইবিএস) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল চার হাজার ৭৩৬ ছাত্রছাত্রী। পাসের হার ৮১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২৫ জন।
রাজশাহী বোর্ড
রাজশাহী বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ ১৫ হাজার ৭৮০ ছাত্রছাত্রী। উত্তীর্ণ হয়েছে ৮৭ হাজার ৩০১ জন। পাসের হার ৭৫ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৭৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৭৩ জন, যা গত বছর ছিল পাঁচ হাজার ২৫০ জন।
কুমিল্লা বোর্ড
পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ আট হাজার ৩৭৩ ছাত্রছাত্রী। পাস করেছে ৬৯ হাজার ৮৯৫ জন। পাসের হার ৬৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৫৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। কুমিল্লা বোর্ড থেকে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৯১২ জন, যা গত বছর পেয়েছিল এক হাজার ৪৫২ জন।
যশোর বোর্ড
যশোর বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ ৩০ হাজার ৫৭২ ছাত্রছাত্রী। পাস করেছে এক লাখ আট হাজার ৯২৯ জন। পাসের হার ৮৩ দশমিক ৪২ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৪৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। যশোর বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৫৮৬ জন, গত বছর যা ছিল এক হাজার ৯২৭ জন।
চট্টগ্রাম বোর্ড
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৮৬ হাজার ৭১৬ ছাত্রছাত্রী। পাস করেছে ৫৬ হাজার ১৬ জন। গড় পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬০ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৬৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ২৫৩ জন, যা গত বছর পেয়েছিল দুই হাজার ১২৯ জন।
বরিশাল বোর্ড
বরিশাল শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৬১ হাজার ৫৩৮ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৪৩ হাজার ১৫৭ জন। গড় পাসের হার ৭০ দশমিক ১৩ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৭০ দশমিক ০৬ শতাংশ। এবার বরিশাল বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৮৭ জন, গত বছর যা পেয়েছিল এক হাজার ৩১৯ জন।
সিলেট বোর্ড
সিলেট বোর্ড থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৬৩ হাজার ৯৫৯ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৪৩ হাজার ৮৭০ জন। গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৭৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সিলেট থেকে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৩৩০ জন, গত বছর যা পেয়েছিল এক হাজার ৩৫৬ জন।
দিনাজপুর বোর্ড
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ তিন হাজার ৯৬ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৭২ হাজার ৮২৯ জন। গড় পাসের হার ৭০ দশমিক ৬৪ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৭০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। দিনাজপুর থেকে এবার এ জিপিএ-৫ পেয়েছে তিন হাজার ৮৯৯ জন, গত বছর তা পেয়েছিল দুই হাজার ৩৯৫ জন।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৮৯ হাজার ৬০৩ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৭৯ হাজার ২০ জন। গড় পাসের হার ৮৮ দশমিক ১৯ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ। আলিম পরীক্ষায় এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৪১৪ জন, গত বছর তা পেয়েছিল এক হাজার ৪৩৫ জন।
কারিগরি বোর্ড
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ দুই হাজার ২৪৮ ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৮৬ হাজার ৪৬৯ জন। গড় পাসের হার ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৮৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। কারিগরি থেকে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৫৮৭ জন, গত বছর তা পেয়েছিল ছয় হাজার ৪৩০ শিক্ষার্থী।