বিশেষ খবর



Upcoming Event

বাংলাদেশের হোটেল শিল্পে ফারস্ অনন্য হতে চায়

ক্যাম্পাস ডেস্ক প্রতিবেদন
img

বাংলাদেশের ক্রমবিকাশমান হোটেল শিল্প আর সম্ভাবনাময়ী পর্যটন শিল্প হাতে হাত ধরে এগিয়ে চলছে। দেশের অর্থনীতিতে এ দু’শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে, বিনিয়োগকারীরা এদেশে অধিক হারে আসবেন এটিই স্বাভাবিক। তাদের অবস্থান সাময়িক হলেও তা আরামপ্রদ হবে, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরা থাকবে; তারা দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্থানে ভ্রমণ করবেন, যা সারাবছরই বজায় থাকবে এটি প্রত্যাশিত। বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার্থে গড়ে উঠছে ফাইভ-স্টার হোটেলসহ উন্নতমানের বহু বুটিক হোটেল। এসব হোটেলের উন্নতমানের সার্ভিস হোটেল শিল্পের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে, যা পর্যটন শিল্পের বিকাশেও রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এমনি একটি প্রতিশ্রুতিশীল, বিকাশমান ও অত্যাধুনিক হোটেল ফারস্ হোটেল এন্ড রিসোর্টস যার জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তারুণ্যদীপ্ত ব্যক্তিত্ব মি. রিচার্ড পেরেইরা। সম্প্রতি তাঁর সাথে ক্যাম্পাস পত্রিকার প্রতিনিধি একান্ত আলাপচারিতায় মিলিত হন। তাঁদের আলাপচারিতার উল্লেখযোগ্য অংশ মোহাম্মদ মোস্তফার অনুলিখনে এখানে সন্নিবেশিত হলো।
ফারস্ হোটেল এন্ড রিসোর্টস কেমন চলছে জানতে চাইলে হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে অভিজ্ঞ রিচার্ড পেরেইরা বলেন, ফারস্ হোটেল এন্ড রিসোর্টস বেশ ভালোই চলছে। আমাদের হোটেলের বয়স মাত্র ৩ বছর। সে হিসেবে এর অগ্রগতিও বেশ ভালো। ১০টি বড় পরিসরের স্যুটসহ ১৫৪টি সুসজ্জিত কক্ষ রয়েছে আমাদের। এর প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশে নিয়মিত গেস্ট থাকছে। গত বছরের তুলনায় এবছর অনেক পজেটিভ দিকে আছি আমরা। আপনারা জানেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে ১ বছর আগে এ ব্যবসার খুব ক্ষতি হয়েছিল। এখন পুনরায় ভালোরদিকে যাচ্ছে। আশা করছি, ২০১৬ সালে আমরা একটা ভালো অবস্থানে যেতে পারব। বাংলাদেশের হোটেল শিল্পে ফারস্ অনন্য হতে চায়।
এক্ষেত্রে সেবা, পর্যটন এবং বাণিজ্যিক সাফল্য কতখানি এমন জিজ্ঞাসার জবাবে আশাবাদী কর্মকর্তা রিচার্ড পেরেইরা বলেন, পজিটিভ দিকে অগ্রসর হওয়াকে অবশ্যই আমাদের হোটেলের সেবার সাফল্য হিসেবেই দেখব আমি। আর পজেটিভ দিকে অগ্রসর হওয়া মানেইতো ব্যবসায় সাফল্যের দিকে অগ্রসর। সেবা এবং ব্যবসা উভয় ক্ষেত্রেই আমরা সফলতা অর্জনের বিষয়ে আশাবাদী।
হোটেল ব্যবসাতো একটি মানবিক সেবাধর্মী ব্যবসা। আপনি কীভাবে এর সেবার মান নিশ্চিত করে থাকেন এমন প্রশ্নের জবাবে দক্ষ হোটেল কর্মকর্তা রিচার্ড পেরেইরা বলেন, আমরা সবসময়ই হোটেলের সেবার মান বৃদ্ধির চেষ্টায় থাকি। যেমন রুমের ডেকোরেশনসহ এর লবিগুলো রি-নিউয়েশন করছি। গেস্টদের নেট ব্যবহারের সুবিধার জন্য ওয়াইফাই সংযোগসহ আধুনিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। ব্যাঙ্কুইট হলগুলো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন করেছি। আমাদের বিদেশি গেস্টদের জন্য পিকআপের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া ওয়েলকাম ড্রিংস আপ-এরাইভাল, ফারস্ রিক্রিয়েশন ক্লাব, ব্যায়ামাগার, ছাদের উপর সুইমিংপুল রয়েছে, শীতকালে এতে গরম পানির ব্যবস্থা থাকে। এছাড়া বাইরের গেস্টদের জন্য সিটিতে আমাদের নিজস্ব মাইক্রো সার্ভিস রয়েছে।
আন্তর্জাতিকমানের যেকোনো হোটেলে নিরাপত্তা এবং বিনোদন দু’টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা কীভাবে এ বিষয়গুলি নিশ্চিত করে থাকেন এমন প্রশ্নের জবাবে গতিশীল চেতনার অধিকারী রিচার্ড পেরেইরা বলেন, আমরা গেস্টদের জন্য বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করে থাকি। যেমন পিঠা উৎসব, আঞ্চলিক খাবার উৎসব, এছাড়া নববর্ষ, বিভিন্ন জাতীয় ও ধর্মীয় উৎসবেরও বিশেষ আয়োজন করে থাকি। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব সিকিউরিটি গার্ডতো আছেই, সেই সঙ্গে আনসারও রয়েছে। এছাড়া আমরা আমাদের গেস্টদের, আগমন-নির্গমন যথাসম্ভব গোপন রাখতে সচেষ্ট থাকি। গেস্টের কাছে কেউ এলে আমরা গেস্টের অনুমতি ছাড়া কাউকে তার সঙ্গে দেখা করতে দেই না। তাদের ভ্রমণসূচি ও স্থান আমাদের পক্ষ থেকে গোপন রাখি। এভাবেই আমরা আমাদের গেস্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকি।
পর্যটনের সঙ্গে হোটেল ব্যবসা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পর্যটন শিল্পকে জনপ্রিয় করতে হোটেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা কতটুক এমন জিজ্ঞাসার জবাবে রিচার্ড পেরেইরা বলেন, এ ব্যাপারে হোটেলগুলো নিজস্বভাবে বিভিন্ন প্রোগ্রাম নিয়ে থাকে তাদের স্ব স্ব হোটেলকে জনপ্রিয় করতে। এটি কিন্তু পরোক্ষভাবে পর্যটনের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। তবে হোটেল ব্যবসা পর্যটন শিল্পের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হলেও দেশে ভালোমানের হোটেলের সেবা কার্যক্রম সহজলভ্য না হলে পর্যটন শিল্পের বিকাশও আশানুরূপ হবে না। আমাদের দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন, বিকাশ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করে ট্যুরিজম ওভারসিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ঞঙঅই)। হোটেলগুলি আলাদাভাবে তাদের গেস্টদের এদেশে আসতে মোটিভেট করে ঞঙঅই এর কাজে সহায়তা করছে। আমরা সবসময় আমাদের ক্লায়েন্টদের, এমনকি যারা ওয়েবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তাদেরকেও আমাদের দেশ সম্পর্কে পজেটিভ বার্তা দিয়ে পর্যটন শিল্পের বিকাশে ভূমিকা রাখছি।
২০১৬ পর্যটন বছর; এ উপলক্ষে আপনাদের বাড়তি কোনো প্রস্তুতি বা কর্মসূচি আছে কি এমন প্রশ্নের জবাবে ক্লায়েন্ট সেবায় যতœশীল হোটেল কর্মকর্তা রিচার্ড পেরেইরা বলেন, হ্যাঁ; ২০১৬ পর্যটন বছরকে সামনে রেখে আমরা বছরব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছি। আমরা বার মাসে তেরটি উৎসবের আয়োজন করছি; যার শুরু হয়েছে পিঠা উৎসব দিয়ে। আমরা সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিশেষ খাবার উপস্থাপনার মাধ্যমে দেশকে স্বদেশিদের কাছে ছাড়াও বিদেশিদের কাছে তুলে ধরতে চাইছি। আমাদের সূচিতে রয়েছে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ভ্যালেন্টাইন্স ডে, নববর্ষ, নবান্নের মতো উৎসবসমূহ। সরকার পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যটন পুলিশ গঠন করেছে। সরকারের এই উদ্যোগ হোটেল বা পর্যটন ক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে কি এমন জিজ্ঞাসায় রিচার্ড পেরেইরা বলেন, সিটিতে এ পুলিশের কার্যক্রম আছে কিনা তা আমার জানা নেই। কোস্টাল এরিয়া কক্সবাজারে, সম্ভবত হবিগঞ্জের দিকে এদের কার্যক্রম আছে। তবে সবজায়গায় এর বিস্তার ঘটালে পর্যটন ও হোটেল ব্যবসায় হয়তো ইতিবাচক প্রভাব পড়ত। কারণ, আমাদের দেশে নিরাপত্তার বিষয়টি এখনো ভাবনার বিষয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে হোটেল শিল্পের অবদান কতখানি এমন প্রশ্নের জবাবে হোটেল ম্যানেজমেন্টে দক্ষ ও অভিজ্ঞ রিচার্ড পেরেইরা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমেই শিল্প ও ব্যবসা নির্ভর হচ্ছে। এমতাবস্থায় হোটেল অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমার ধারণা, সরকার এখন প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ রেভিনিউ পায় পর্যটন ও হোটেলশিল্প থেকে। এছাড়া হোটেল ও পর্যটন যত বিকশিত হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যেও তত প্রসার ঘটবে। একসময় বাংলাদেশে মাত্র দু’টি ফাইভ স্টার হোটেল ছিল। এখন আরও পাঁচ-ছয়টি ফাইভ স্টার হোটেল হয়েছে। আমাদের মানের হোটেলও ঢাকা শহরের গুলশান বনানীসহ দেশের অন্যান্য শহরেও রয়েছে। এর ফলে বিদেশ থেকে যেমন পর্যটক আসছে, তেমনি ব্যবসার জন্যেও লোকজন আসছে। সুতরাং বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যে হোটেল শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম।
কোন্ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য ফারস্ হোটেল এন্ড রিসোর্টকে গ্রাহকগণ তাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রাখবেন বলে আপনি মনে করেন এমন জিজ্ঞাসার জবাবে দূরদর্শী কর্মকর্তা রিচার্ড পেরেইরা বলেন, আমরা আমাদের গেস্টদের সেবাদান শুরু করি এয়ারপোর্ট থেকে পিকআপ সার্ভিসের মাধ্যমে। তাদের জন্য সিটিতে মাইক্রো সার্ভিস রয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে সুইমিংপুল; যেখানে গরম এবং ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা আছে। এছাড়া জিম, ওয়াইফাই সংযোগ ইত্যাদিতো আছেই, সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ফারস্ হোটেলের অবস্থান। বলা যায়, একেবারে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। তাই ব্যবসায়ী গেস্টদের জন্য এটি হচ্ছে সবচেয়ে ভালো জায়গা। এছাড়া আন্তর্জাতিকমানের হোটেল হিসেবে এর ভাড়াও তুলনামূলক কম রাখা হয়েছে। এসমস্ত কারণ বিবেচনা করেই গ্রাহকগণ আমাদের ফারস্ হোটেলকে তালিকার শীর্ষে রাখবে বলে আমি মনে করি।
ফারস্ হোটেল এন্ড রিসোর্টস এর ভাড়া ডলারে নির্ধারিত; দেশীয় গ্রাহকদের কীভাবে ভাড়া নির্ধারণ করে থাকেন এমন জিজ্ঞাসার জবাবে রিচার্ড পেরেইরা বলেন, দেশীয় গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ডলারকে টাকায় কনভার্ট করে ভাড়ার কথা বলা হয়। ডলারে নির্ধারণ হয়ে থাকে আসলে আন্তর্জাতিক একটা মান বজায় রাখার জন্য। বাংলাদেশে হোটেল ও পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা কতটুকু এমন প্রশ্নের জবাবে রিচার্ড পেরেইরা এক কথায় বলেন, এই শিল্পের সম্ভাবনা বাংলাদেশে খুবই উজ্জ্বল।
আপনাদের প্রতিষ্ঠানের সিএসআর অর্থাৎ কর্পোরেট সোস্যাল রেসপন্সেবিলিটি কতটুকু এমন প্রশ্নের জবাবে ফারস্ হোটেল এন্ড রিসোর্টস এর জিএম রিচার্ড পেরেইরা বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের বয়স মাত্র ৩ বছর। আমরা এখনো তেমন লাভজনক অবস্থানে নেই। তবু আমাদের এমডি সাহেব অনেক সামাজিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। প্রতিবছর তিনি এতিমদের অনেক অনুদান দিয়ে থাকেন। আমরা এখানে নতুনদের নিয়ে কাজ করি। তাদের অনেককেই কাজ শেখার পর বেটার সুযোগ পেলে এখান থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। আমাদের দেশে তেমন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নেই। আমরা ইনহাউজ ওয়ার্কের মাধ্যমে তাদের কাজ শেখাই। বলতে পারেন, উই আর মেকিং জবস্। আমরা সাধারণ হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করছি। জনগণকে জনশক্তি বা কাজের হাত বানানো এটাও এক ধরনের সামাজিক কাজ, যা আমরা করে যাচ্ছি।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img