সম্প্রতি মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার ১২ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাসার সামনে দেখা গেল বড় ধরনের জটলা। পুরো সড়ক লোকেলোকারণ্য। কাছে গিয়ে জানা গেল এ সড়কে প্রতিদিনের চিত্র এটি। ওই বাসার নিচতলায় মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাতি শাখার ইংরেজি শিক্ষক সাইফুল্লাহ স্যারের কোচিং সেন্টার। বিভিন্ন ব্যাচে চার শতাধিক শিক্ষার্থী পড়ে সেখানে। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ইংরেজি পড়ান সাইফুল্লাহ স্যার, ফি নেন এক হাজার ২০০ টাকা। কোচিং করানোর জন্য তিনি বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাটটি ইতিমধ্যে কিনে নিয়েছেন বলেও জানা যায়। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের আনাগোনায় সড়কে ভিড় লেগেই থাকে।
সম্প্রতি কোচিং সেন্টারটির সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সাইদা জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্যারের কাছে পরে এলে সিট পাওয়া যায় না। তাই বাচ্চাকে জানুয়ারি থেকেই দিয়ে দিয়েছি। স্কুলে তো পড়ালেখা হয় না। ক্লাসে ৭০টি বাচ্চা। টিচাররা ক্লাসে শুধু পড়া দেন, পড়া নেওয়ার তো সময়ই নেই তাঁদের। তাহলে পড়াটা বুঝিয়ে দেবে কে? তাই বাচ্চাকে কোচিংয়ে না দিয়ে তো উপায় নেই।
দশম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রাশেদা আক্তার বলেন, কোচিং আর প্রাইভেট না পড়িয়ে কোনো উপায় নেই। এই সাইফুল্লাহ স্যারই যখন ক্লাস নেন তখন কী পড়ান? খালি পড়া দেন। তিনি যদি ক্লাসেই সব বুঝিয়ে দিতেন তাহলে তো আমাদের প্রাইভেট-কোচিং করাতে হতো না। তিনি ক্লাসে না পড়িয়ে বাচ্চাদের কোচিংয়ে আসতে বলেন। আমরাও বাধ্য হয়ে কোচিংয়ে দেই।
রাত ৯টার দিকে সাইফুল্লাহ স্যারের কোচিং থেকে বেরিয়ে এলো একদল শিক্ষার্থী। দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করে বলল, ক্লাসে স্যার যে পড়া দিয়েছিলেন তা-ই এখন ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলেন। কোচিংয়ে না পড়লে তো পড়াটাই পারতাম না।
এ বিষয়ে কথা হয় শিক্ষক সাইফুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, স্টুডেন্টরা পড়ে, তাই আমরা পড়াই। তবে স্কুলে আমি যে-ই শিফটে পড়াই সেই শিফটের বেশি শিক্ষার্থী কোচিংয়ে নেই। অন্য শিফটেরই বেশি। আপনি কী ক্লাসে ঠিকমতো পড়ান না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ। আপনি যখন বললেন আমি কোচিং করানো বন্ধ করে দেব।
শুধু সাইফুল্লাহ নন, মনিপুর স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন রূপনগর আবাসিক এলাকার ১২ নম্বর রোডে, গণিতের শিক্ষক জুবায়ের মাহমুদ ১৩ নম্বর রোডে, গণিতের আরেক শিক্ষক মেহেদী হাসান ১৩ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাসায় ও ইংরেজির শিক্ষক শহীদুল ইসলাম ৭ নম্বর রোডের ১৭ নম্বর বাসায় কোচিং করাচ্ছেন।
অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষকরা ক্লাসে মনোযোগ না দিয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে যেতে বাধ্য করছেন। যেসব শিক্ষার্থী কোচিং করে না পরীক্ষায় তাদের নম্বর কমিয়ে দেয়া হয়।
জানা যায়, রাজধানীর প্রতিটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের এভাবে কোচিংয়ের ফাঁদে ফেলছেন শিক্ষকরা। কোচিংবাজ শিক্ষকদের কাছে অসহায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের কোচিং করাতে সহায়তা করছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকরা। এর বিনিময়ে তাঁরা কোচিংবাজ শিক্ষকদের কাছ থেকে মাসোয়ারা পাচ্ছেন। অনেক স্কুলে কোচিং করানোর জন্য শিক্ষকদের কাছে ক্লাসরুমও ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। কোচিং বাণিজ্য করে মাসে লাখ টাকা আয়ের শিক্ষক ঢাকায় আছেন হাজার হাজার।
রাজধানীর পাশাপাশি কোচিং বাণিজ্যের এ প্রবণতা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। গ্রামেও এখন প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং-বাণিজ্য জমজমাট। শিক্ষার্থীরা শুধু স্কুলে যাওয়া-আসা করে আর পরীক্ষা দেয়। পড়াশোনা করতে হয় প্রাইভেট আর কোচিংয়ে।
জানা যায়, ব্যাচভিত্তিক একাডেমিক কোচিং, মডেল টেস্টসহ বিভিন্ন স্টাইলে কোচিং করাচ্ছেন শিক্ষকরা। প্রশাসনের নজরে না পড়তে কোচিং সেন্টারের কোনো নাম ব্যবহার করা হচ্ছে না। ব্যাচভিত্তিক সপ্তাহে তিন দিন পড়ালেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। রাজধানীর বাংলা মাধ্যমের নামি স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের বেতন ৮০০ টাকা হলেও প্রাইভেট-কোচিংয়ে অভিভাবকদের ব্যয় করতে হয় আট থেকে ১০ হাজার টাকা। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে স্কুলের শিক্ষকদের পকেটেই যায় অতিরিক্ত এই টাকা।
রাজধানীর পূর্ব মনিপুরেও মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শাখার আশপাশে গড়ে উঠেছে অর্ধশত কোচিং সেন্টার। বালিকা শাখার সামনে রয়েছে আধুনিক কোচিং সেন্টার ও ইনটেনসিভ কোচিং সেন্টার। পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য পরিচালনা করছেন গ্রিন কোচিং সেন্টার। কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে না গেলেও সমস্যা নেই। এই তিন কোচিং সেন্টার থেকে শিক্ষার্থীদের যে শিট দেওয়া হয় তা-ই স্কুলে পড়ানো হয়। এমনকি পরীক্ষায়ও কমন পড়ে।
পূর্ব মনিপুরে গ্রিনভিউ হাই স্কুলের গলি স্থানীয়দের কাছে মাস্টারপাড়া হিসেবে পরিচিত। পূর্ব মনিপুরের ৭৬৪/১ নম্বর, ৭৬৩/৫ নম্বর ও ৭৬৩/৬ নম্বর বাড়িতে কোচিং করান মনিপুর স্কুলের শিক্ষকরা। ৭৬৩/৮ নম্বর বাড়িতে কোচিং করান কম্পিউটার শিক্ষক সোলেমান ফারসি।
অথচ মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন বলেন, কোনো শিক্ষকের কোচিং করানোর সুযোগ নেই। আমাদের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় সরকারের নীতিমালা মেনে স্কুলেই অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া হয়। অভিভাবকদের অনুরোধেই এই ব্যবস্থা করা হয়। একজন শিক্ষার্থীর বিভিন্ন বিষয় প্রাইভেট পড়তে গেলে অনেক টাকা খরচ হয়। অথচ অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য মাত্র এক হাজার টাকা নেয়া হয়। এতে তাদের আর বাইরে প্রাইভেট পড়ার প্রয়োজন হয় না।
মিরপুর ১০ নম্বরের আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরি স্কুলের পাশের দুই গলিতে ২৭টি একাডেমিক কোচিং সেন্টারের খোঁজ পাওয়া গেল। সেগুলো হচ্ছে এস এম অ্যান্ড নেট একাডেমি, প্যারাগন কোচিং, রং একাডেমিক কোচিং, কমার্স কোচিং, সায়েন্স কোচিং, অংকন একাডেমিক কোচিং, চারুপাঠ কোচিং, এডুকেশন একাডেমি কেয়ার, মবিডিক কোচিং, ম্যাথস ওয়ার্ল্ড, আরগো কোচিং, গুরুকুল কোচিং, কমার্স একাডেমি, বর্ণমালা কোচিং, অরবিট কোচিং, বর্ণ একাডেমিক কোচিং, নিউরন কোচিং সেন্টার, আরবান কোচিং, ই হক কোচিং সেন্টার, রেডিয়াস একাডেমিক কোচিং, নাহিদ প্রাইভেট কেয়ার ও ইউরেকা একাডেমিক কেয়ার।
অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ এলাকার কোচিং সেন্টারগুলোর সঙ্গে জড়িত মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষকরা। এস এম অ্যান্ড নেট একাডেমির সঙ্গে জড়িত শিক্ষক আবদুস সালাম। প্যারাগন কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত একই স্কুলের শিক্ষক সাজেদা বেগম, সেলিম রেজা এবং অন্য স্কুলের শিক্ষক কমলা রানী দাস। এ ছাড়া মিরপুর ১০ নম্বরের বি ব্লকের ১৬ নম্বর সড়কের এক নম্বর বাড়িতে সেলিম রেজা স্যার প্রাইভেট পড়ান। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত স্কুল সময়ের বাইরে বেশির ভাগ সময়ই তিনি প্রাইভেট পড়ান। আবদুল হান্নান জড়িত এডুকেশন একাডেমিক কেয়ারে। এ ছাড়া আবদুল জলিলও কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত।
মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক আবদুল হান্নান বলেন, একসময় আমার মালিকানায় এডুকেশন একাডেমিক কেয়ার নামে একটি কোচিং সেন্টার ছিল। কিন্তু এটা এখন আরেকজনকে দিয়ে দিয়েছি। শিক্ষকরা কেন কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমরা যে বেতন পাই তাতে শিক্ষকদের প্রাইভেট-কোচিং করানোর প্রয়োজন হয় না। ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা যায়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মন দেয় না। মোবাইল-ইন্টারনেটে ব্যস্ত থাকে। একটি ক্লাসে ৭০ থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী থাকে। ফলে শিক্ষকও সমানভাবে সবাইকে নজর দিতে পারেন না। আবার কেউ পড়া না করলে যে শাস্তি দেব সে উপায়ও নেই। ফলে শিক্ষার্থীরাই প্রাইভেট-কোচিংয়ের দ্বারস্থ হয়।
সন্তানকে চারুপাঠ কোচিংয়ে পড়ান, মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরি স্কুলের এমন একজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করে বলেন, স্কুলে হয়তো একটি অঙ্ক করিয়ে দিল। ওটা দিয়েই পুরো চ্যাপ্টারের অঙ্ক করতে হবে। কিন্তু সেটা কী করে সম্ভব? বাচ্চারা সমস্যায় পড়লে স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে এ বিষয়ে তেমন কোনো সাহায্য পাওয়া যায় না। শিক্ষকরাই বলে দেন কোচিং সেন্টারে যেতে। একেবারে ওপেন ক্লাসেই বলেন। না গেলে ক্লাসে বকাঝকা করেন। পরীক্ষায় কম নম্বর দেন। তাইতো মাসে আড়াই হাজার টাকা দিয়ে কোচিংয়ে পড়াতে হচ্ছে।
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মতিঝিলের বেশির ভাগ শিক্ষকই শাহজাহানপুর ও খিলগাঁওয়ে কোচিং সেন্টার খুলে বসেছেন। দক্ষিণ শাহজাহানপুরের শিল্পী হোটেলের গলি, বেনজির বাগানেই এসব কোচিংয়ের আধিক্য। উত্তর শাহজাহানপুর এলাকায় দেখা যায়, খিলগাঁও ফ্লাইওভারের শাহজাহানপুর অংশে গোড়ায় পশ্চিম পাশে ৬১০ নম্বর বাড়িতে পুণম ফার্নিচারের দোতলায় সাত-আটজন শিক্ষক কোচিং সেন্টার খুলে বসেছেন। এর মধ্যে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষক আবদুল জলিল, কলেজ শাখার শিক্ষক কবির হোসেনও রয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ মতিঝিলে গত ২৫ অক্টোবর টেস্ট পরীক্ষা চলাকালে ওয়ারেসুল ইসলাম হিমেল নামে এক ছাত্রকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেন রসায়নের শিক্ষক ফখরুদ্দীন। আহত হিমেল ও তার মা জেসমিন নাহারের অভিযোগ, ওই শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়ায় এভাবে বেত দিয়ে পেটানো হয়। হিমেল দশম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই ওই শিক্ষক প্রাইভেট পড়ার জন্য চাপাচাপি করছিলেন।
রাজধানীর মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে সিন্ডিকেট করে চলে কোচিং-বাণিজ্য। বাসাবো শাখার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এনামুল হকের নেতৃত্বেই চলে কোচিং। বাসাবো খেলার মাঠের পশ্চিম পাশের একটি দোতলা ভবনের নিচতলায় এ স্কুলের সাত-আটজন শিক্ষক মিলে কোচিং করান। তাঁরা গভর্নিং বডিকেও তাঁদের কোচিংয়ের টাকার ভাগ দেন বলে জানা গেছে। একেকজন শিক্ষক কোচিং করিয়ে মাসে পাঁচ লাখ থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন।
ওই স্কুলের শিক্ষক এনামুল হক গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের কোচিং করান, মেজবাহুল ইসলাম ইংরেজি, সুবীর কুমার সাহা গণিত ও বিজ্ঞান, সাইফুল ইসলাম ও মোহন লাল ঢালী বাণিজ্য বিষয়ে পড়ান। সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক বাসুদেব সমদ্দার পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত কোচিং করান। বায়োলজির শিক্ষক বকুল বেগম প্রাইভেট পড়ান ৮১ মধ্য বাসাবোর বাসায় তৃতীয় তলায়। ইংরেজির শিক্ষক আসাদ হোসেন পড়ান বাসাবোর এক্সিলেন্স কোচিং সেন্টারে। তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের কোচিং করান প্রদীপ কুমার বসাক ও আবুল খায়ের। বাংলা বিষয়ের শিক্ষক শারমিন খানম বাংলার তিন মাসের প্যাকেজ কোর্স করান পাঁচ হাজার টাকায়।
মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক প্রভাতির শাখাপ্রধান কবির আহমেদ, আরেক শিক্ষক খন্দকার কবির আহমেদ, প্রাথমিকের দিবা শাখার প্রধান দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষক কামরুল হাসান, রুহুল আমিন-২, কামরুজ্জামানও কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। স্কুলটির মতিঝিলস্থ প্রধান ক্যাম্পাসের শিক্ষকরা ব্যস্ত থাকেন কোচিংয়ে। ইংরেজির শিক্ষক শহীদুল ইসলাম আবেদিনের নেতৃত্বে এজিবি কলোনিতে চলে কোচিং। সেখানে গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষক রিয়াজুল হক নান্নু, খালেদা খানম, সুবদেব ঢালী, হাসান মঞ্জুর হেলাল ও আমানুল্লাহ আমান কোচিং করান। প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখার শিক্ষক হামিদুল হক খানও কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত।
জানা যায়, দেশের গড়পড়তা প্রায় সব স্কুলেই একটি কক্ষে ৫০ থেকে শুরু করে ৭০ জন পর্যন্ত শিক্ষার্থীর একসঙ্গে ক্লাস হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষকদের কাজ শুধু পড়া দেওয়া এবং দু-চারজনকে তা ধরা। একটি বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে বলা, দুর্বল শিক্ষার্থীদের বাড়তি যতœ নেয়া, কঠিন বিষয়ে বেশি সময় দেওয়ার রীতি কোনো স্কুলেই নেই। ক্লাসের সময় ৪৫ মিনিট। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের খুব সামান্য অংশই বোঝাতে ব্যয় করেন শিক্ষক। বোর্ডে দু-একটি অঙ্ক করে দেখানো, রিডিং পড়া ও বাড়ির কাজ দেওয়াতেই সময় চলে যায়।
স্কুলেও বাধ্যতামূলক কোচিং
কোচিং নীতিমালার দোহাই দিয়ে স্কুলেও বাধ্যতামূলকভাবে আয়োজন করা হচ্ছে কোচিংয়ের। প্রায় সব স্কুলেই অতিরিক্ত ক্লাসের নাম দিয়ে কোচিং করানো হচ্ছে। বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলোর পাশাপাশি সরকারি স্কুলের অবস্থাও একই। অভিভাবকদের কোচিং করানোর অনুরোধসংবলিত একটি আবেদনও জমা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। কোনো অভিভাবক আবেদন না দিলে তাঁর সন্তানকে হেনস্তা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন বছর শুরু না হতেই কোচিংয়ের আয়োজন শুরু করে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে পঞ্চম, অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোচিং ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই শুরু হয়ে গেছে। অন্য ক্লাসের কোচিংও আগামী দু-এক মাসের মধ্যে শুরু হবে। প্রতি বিষয়ের জন্য আলাদা টাকা নেয়ায় ধর্ম, কৃষিশিক্ষার মতো বিষয়ও কোচিংয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। যারা প্রভাতি শাখায় পড়ে তারা স্কুল শেষে ১২টার পর থেকে দুই ঘণ্টা এই কোচিংয়ে অংশ নেয়। যারা দিবা শাখায় পড়ে তারা ক্লাস শুরুর আগে দুই ঘণ্টা কোচিংয়ে অংশ নেয়। ফলে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকেই স্কুল-কোচিংয়ের পেছনে দৌড়াতে হচ্ছে।
এর বাইরেও আছে মডেল টেস্ট নামের কারসাজি। স্কুলগুলো মডেল টেস্টের কথা বলে অভিনব এই আয়োজন করছে।
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরী হাই স্কুল, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, টি অ্যান্ড টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিলসহ সব স্কুলে একইভাবে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে শিক্ষার্থীদের কোচিং করাতে বাধ্য করা হচ্ছে।