২২ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় ক্যাম্পাস পরিচালিত ফ্রি ডায়নামিক কম্পিউটার কোর্সের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠান। ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানবাধিকার আন্দোলনের উজ্জ্বল নক্ষত্র; নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় উৎসর্গীকৃত; মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক, স্বাধীনতা ফোরাম পদকসহ বহু পুরস্কারে ভূষিত; বর্ণিল গুণাবলি ও বহুমাত্রিক প্রতিভার কর্মযোগী; বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারপার্সন এডভোকেট এলিনা খান। সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক ও ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ঈঝউঈ) এর মহাসচিব ড. এম হেলাল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথিকে পুষ্পমাল্যে বরণ করে নেয়া হয় এবং তাঁকে উপহার হিসেবে অর্পণ করা হয় ক্যাম্পাস’র জ্ঞানমেলা সিরিজে প্রকাশিত সৃজনশীলতা বৃদ্ধি, আত্মোন্নয়ন ও জাতি জাগরণমূলক বিভিন্ন বইয়ের সেট; ক্যাম্পাস’র নিজস্ব গবেষণায় প্রকাশিত ২টি মডেল, বিভিন্ন সিডির সেট ও স্যুভেনির।
নেতৃত্ব দান ক্ষমতা, সৃজনশীলতা, দক্ষতা ও প্রত্যুতপন্নমতিতার জন্য অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় উৎসর্গীকৃত এডভোকেট এলিনা খানকে ক্যাম্পাস’র সম্মাননা ক্রেস্ট অর্পণ করেন সিএসডিসি’র মহাসচিব ড. এম হেলাল।
কম্পিউটার কোর্স সম্পন্নকারীরা যেন স্মার্ট এন্ড গ্লোবাল ইয়থ জেনারেশনরূপে দেশ ও জাতির অন্ধকার দূরীকরণে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে, সে কামনায় প্রধান অতিথির হাতে আশা-জাগানিয়া মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়। এরপর প্রধান অতিথি কম্পিউটার কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সনদ বিতরণ করেন। সনদ বিতরণ শেষে শুরু হয় বক্তৃতাপর্ব।
এডভোকেট এলিনা খান
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এডভোকেট এলিনা খান বলেন, ক্যাম্পাস সম্পর্কে আমার পূর্ব-ধারণা থাকলেও এখানে এসে তাদের কার্যক্রম দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। আমি যেখানেই যাই, সেখান থেকেই নতুন জ্ঞান আহরণের চেষ্টা করি। এখানে এসেও আমি অনেক কিছু শিখেছি। ক্যাম্পাস’র আয়োজনে রয়েছে প্রচুর অক্সিজেন ও ফুলের সৌরভ। ফুলেল পরিবেশ মনকে চাঙ্গা করে তোলে। ক্যাম্পাস অফিসে যে পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে তা যে কাউকেই সজীব রাখে এবং কর্মস্পৃহা বাড়িয়ে দেয়।
তিনি বলেন, ক্যাম্পাস’র স্টাডি সেন্টার বাস্তবায়নে বিত্তশালীদের সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে আসা উচিত। এটি আমাদের দেশের জন্য একটি যুগোপযোগী প্রকল্প; যার রয়েছে সুদূরপ্রসারী উপযোগিতা, থাকবে বহুমুখী অবদান।
এডভোকেট এলিনা খান ছাত্র-যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন আমি কর্মক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়েছি, তবে হাল ছাড়িনি। ফলশ্রুতিতে সে বাধা অতিক্রম করে সফলও হয়েছি। তোমরাও জীবনের লক্ষ্য স্থির করে সামনের দিকে এগুবে; কোনো বাধা আসলে হাল ছেড়ে না দিয়ে দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে যাবে, তাহলে সফল হবেই।
এডভোকেট এলিনা খান বলেন আইন সম্পর্কে, অধিকার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সার্টিফিকেট ও মূল্যবান দলিলপত্রে মায়েদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছি আইনি লড়াই করে। হিন্দু সমাজে মেয়েরা ডিভোর্স নিতে পারে না। যদিও আমি ডিভোর্সের পক্ষে নই; কারণ একটা সাজানো সংসার ভেঙ্গে যাওয়া চরম বেদনাদায়ক। তারপরও খুব কম ক্ষেত্রে হলেও এর একটা ব্যবস্থা থাকা উচিত, যা হিন্দু সমাজে নেই। তিনি বলেন আমাদের সমাজে ছেলে ও মেয়ে উভয়েই নির্যাতিত হয়; সেক্ষেত্রে সংসার টিকিয়ে রাখার সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর বেদনাদায়ক হলেও ডিভোর্সের পথকে বেছে নিতে হয়। যে যাবার সে যাবে, যে থাকবে সে সবসময়ই থাকবে এবং থেকে যায়; সহজে সংসার ভাঙতে চায় না। সহনশীলতা ও ধৈর্য থাকলে পারিবারিক শান্তি বজায় থাকে। সংসার টিকিয়ে রাখতে পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধ থাকতে হবে। পারিবারিকভাবে আমাদেরকে ইড়হফ বা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরস্পরের সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
এডভোকেট এলিনা খান বলেন হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে আমরা মানুষের জন্য কাজ করি, ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে মানুষের অধিকার রক্ষায় সংগ্রাম করি। ক্যাম্পাস’র সাথে আমাদের নীতি-আদর্শের মিল আছে। তাই ক্যাম্পাস’র সাথে একতাবদ্ধ হয়ে আমরা কাজ করব।
এডভোকেট এলিনা খান ক্যাম্পাসকে ১টি কম্পিউটার অনুদানের ঘোষণা দেন, যা শ্রোতাদের করতালির মাধ্যমে প্রশংসিত হয়। তিনি ক্যাম্পাস’র অভিভাবক-পৃষ্ঠপোষক পদও গ্রহণ করেন অত্যন্ত আনন্দের সাথে।
হাজেরা নজরুল
বিশিষ্ট গ্রন্থকার, সরকারের সাবেক যুগ্মসচিব, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষা হাজেরা নজরুল বলেন ক্যাম্পাস’র কর্ণধার ড. এম হেলাল একজন সফল পরিচালক; তার মতো এত সর্বদিক ও সর্বাঙ্গ সুন্দর কর্মযোগী ও সাধক মানুষ আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি। হাঁটি-হাঁটি পা পা করে তিনি ব্যতিক্রমী এ প্রতিষ্ঠানকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন; সমাজে উদাহরণ স্থাপন করেছেন।
তিনি বলেন, ক্যাম্পাস উন্নততর মানুষ গড়ার কারখানা। এখানে ছাত্র-যুবকরা বিনামূল্যে যুগোপযোগী বিভিন্ন কোর্স সম্পন্ন করে নিজেদের জীবনকে আলোকিত করার সুযোগ পাচ্ছে।
তাজকেরা খায়ের
ওয়ার্ল্ড-ওয়াইড ফ্যামেলি লাভ মুভমেন্টের চেয়ারপার্সন, বিশিষ্ট সমাজসেবী তাজকেরা খায়ের বলেন আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এডভোকেট এলিনা খান আমার আপনজন, আত্মার মানুষ। তাঁর সাথে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তিনি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার অধিকার নিয়ে কাজ করেন।
তিনি বলেন, ক্যাম্পাস অফিস আলোকিত মানুষ গড়ার কেন্দ্র। এখানে আলোকিত মানুষরাই আসেন, তারা অন্যদের আলোকিত করেন। মানবধর্ম, মানবিক গুণ তথা উন্নততর মানুষ হবার নির্দেশনা পাওয়া যায় ক্যাম্পাস কর্মসূচিতে।
ড. আলমাসুর রহমান
প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড আন্দোলনের প্রবক্তা ড. আলমাসুর রহমান বলেন, প্রোএকটিভ এটিচিউট অর্জনকে আমি আন্দোলন হিসেবে গ্রহণ করেছি। এ আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিচ্ছি দেশের আনাচে-কানাচে। ক্যাম্পাস প্রোএকটিভ আন্দোলনের প্রচার ও প্রসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। ক্যাম্পাস তার মানবকল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমাজের চিত্তশালী-বিত্তবানদের আন্তরিক সহযোগিতা লাভ করবে। তিনি বলেন প্রোএকটিভ এটিচিউড হলো শ্রেষ্ঠ মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণ। রাগ নিয়ন্ত্রণ করে, মাথা ঠান্ডা রেখে সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যকর করাটাইতো প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড মানুষের বৈশিষ্ট্য। রিএকটিভ বা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য মানুষের ব্রেন প্রোগ্রামিংই দায়ী। ব্রেনে যা ইনপুট দেবেন, সে অনুসারেই আউটপুট হবে। সততা, নৈতিকতার শিক্ষা ছোটবেলা থেকে না দিলে ব্রেন থেকে ভালো কিছু আসবে না।
এডভোকেট এম জি কিবরিয়া
ক্যাম্পাস পরিচালিত ইংলিশ এন্ড স্মার্টনেস কোর্সের রিসোর্স পার্সন এডভোকেট এম গোলাম কিবরিয়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট এলিনা খানের উপস্থিতিতে ক্যাম্পাস’র আজকের অনুষ্ঠান অনন্য। মানবাধিকারের আরেকটি প্রতিশব্দ হলো এলিনা খান। এডভোকেট এলিনা খান আইনজীবী সমাজের দর্পণ। তিনি বিনাবিচারে আটক বন্দী ফালু মিয়াকে আইনি সহায়তায় মুক্ত করে আনেন, রাষ্ট্র থেকে তাকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেন। অবহেলিত ও বঞ্চিত আদিবাসীদের অধিকার আদায় করে দেন আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে। তাঁর বর্ণিল কর্মজীবনে এরকম হাজার উদাহরণ রয়েছে। তিনি নারী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে নিজ পরিচয় দেন এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেন।
এডভোকেট কিবরিয়া বলেন মানবতা বিষয়ক কর্মকান্ডে যাঁর রয়েছে গগনস্পর্শী খ্যাতি, তিনি আজ ক্যাম্পাস’র অনুষ্ঠানে এসেছেন শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে। ক্যাম্পাস’র আন্দোলনে সহযোগী হয়ে এখানে আসায় তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ। ক্যাম্পাস’র ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিং, ফ্রি ইংলিশ কোর্স আজ ব্যাপক জনপ্রিয়। এছাড়াও ক্যাম্পাস’র অন্যান্য কর্মসূচিতে ছাত্র-যুবকরা অংশগ্রহণ করে নিজেদেরকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলছে। ক্যাম্পাস’র এসব কর্মসূচি আরও ব্যাপকভাবে প্রসারিত করার জন্য উত্তরায় স্টাডি সেন্টার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। ক্যাম্পাস’র এসব কল্যাণকর কর্মসূচি এগিয়ে নিতে আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিসহ সমাজের কল্যাণকামী-বিত্তশালী ব্যক্তিত্বগণ সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করবেন বলে আমি আশাবাদী।
ড. এম হেলাল
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এবং সিএসডিসি’র মহাসচিব ড. এম হেলাল বলেন, এডভোকেট এলিনা খানের হৃদয় ও চেতনার মধ্যে মানবাধিকারের মহান আদর্শ গভীরভাবে প্রোথিত। তিনি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য কাজ করেন, সবার অধিকার নিয়ে সোচ্চার। নির্যাতিত নারীদের পক্ষে তিনি যেমনি আইনি লড়াই পরিচালনা করেন, তেমনি নির্যাতিত পুরুষদের সাহায্যার্থেও তিনি এগিয়ে আসেন।
ড. হেলাল বলেন, ক্যাম্পাস মানুষের চিন্তার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটায়। কম্পিউটার থেকে যেমনি খারাপ প্রোগ্রাম ডিলিট করে ভালো প্রোগ্রাম ইনসার্ট করা যায়; তেমনি জগতের সকল কস্পিউটারের সম্মিলিত শক্তির চেয়েও মহাশক্তিধর মানুষের মস্তিষ্করূপী কম্পিউটার থেকেও খারাপ প্রোগ্রাম অকার্যকর এবং ভালো প্রোগ্রাম সংযোজন করা কঠিন নয়। ক্যাম্পাস সে লক্ষ্যে এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। ২০০৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এ কোর্সের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৪ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস থেকে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তারা কর্মক্ষেত্রে সে প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে নিজেদের জীবনকে সমৃদ্ধ করছে।
তিনি বলেন ক্যাম্পাস নিত্য-নতুন আইডিয়া জেনারেট করে তা ছড়িয়ে দেয় সমাজে ও জাতিতে। ক্যাম্পাস’র এ বছরের স্লোগান হলো ‘দেশ এগিয়ে চলছে নবদিগন্তে, চলুন এগিয়ে যাই নতুন কর্মশক্তিতে’। এ স্লোগান জাতিকে উজ্জীবিত করার মাধ্যমে উন্নততর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস’র লক্ষ্য জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি প্রতিষ্ঠা করা। ক্যাম্পাস’র এ লক্ষ্য অর্জনে সকলের অংশগ্রহণ কাম্য।