গত ২৬ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. হাবিবুল্লাহ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদানের জন্য এআইএস স্কলারশিপ ফান্ডে অনুদানের চেক প্রদান অনুষ্ঠান। ঢাবি’র একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে প্রস্ফূটিত হয় শিক্ষার প্রতি অনুরাগ-ভালোবাসা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ধন্য দু’মহান ছাত্রবৎসল শিক্ষাবিদের কৃর্তীগাঁথা। অর্থাভাবে কেউ যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই কল্যাণব্রত লালনকারী প্রফেসর ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক ২৫ লক্ষ টাকা এবং অধ্যাপক বেগম খালেদা খানম ১০ লক্ষ টাকা অনুদানের চেক তুলে দেন এআইএস ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আব্দুল হাকিম এর হাতে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। আরো উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক প্রফেসর মমতাজউদ্দিন আহমেদ, এআইএস ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আব্দুল হাকিম, এআইএস ডিপার্টমেন্টের জনপ্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক প্রফেসর ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক, অধ্যাপক বেগম খালেদা খানম এবং ডিপার্টমেন্টের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন প্রভাষক জান্নাতুল নাইমা।
এআইএস স্কলারশিপ ফান্ডের যাত্রা শুরু হয় ২০১৪ সালে। ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক মমতাজউদ্দিন আহমেদ এর অনুপ্রেরণা ও সহায়তায় এ বৃত্তি তহবিলটি গঠিত হয়। ইভিনিং এমবিএ প্রোগ্রাম থেকে প্রদেয় ১ কোটি টাকা দিয়ে তহবিলের যাত্রা শুরু। পরবর্তীতে এলামনাই এর বিভিন্নরকম অনুদান, পাশাপাশি ডিপার্টমেন্টের নিজস্ব কনিট্রিবিউশনে এ তহবিল বেড়ে প্রায় ২ কোটি টাকাতে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর এই তহবিলের আয় থেকে মোট ১০০ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। এই বৃত্তি তহবিলকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্য বিভাগের দু’জন শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক প্রফেসর ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক ও অধ্যাপক বেগম খালেদা খানম অনুদান প্রদান করেন। এই আর্থিক সহায়তা প্রদানের স্বীকৃতিস্বরূপ উক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই অতিথিদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রফেসর মমতাজউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়তে আসে, তাদের অনেকেরই আর্থিক সামর্থ্য বা স্বচ্ছলতা থাকে না। এটা কীভাবে ওভারকাম করা যায়, সেই চেষ্টা করতে থাকি। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে এ ফান্ড গঠন করা হয়। আমরা প্রতিবছর ১০০ ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি প্রদান করি। তার মধ্যে প্রথম বর্ষের দেয়া হয় ৩৫ জনকে। পরবর্তী বছরগুলোতে সংখ্যাটা কমিয়ে ১০০ পূরণ করা হয়। যেহেতু ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্ররা প্রথমবার ঢাকা আসে। প্রথম অবস্থায় অনেকের থাকারই জায়গা হয় না, অনেকের চলার মতো কোনো অর্থ থাকে না। তাই ফার্স্ট ইয়ারে একটু বেশি পয়সা দেয়া হয়। এটাও যথেষ্ট না, আরো দিতে পারলে ভালো হতো। ফার্স্ট ইয়ারে ৩০০০ টাকা করে এবং সেকেন্ড ইয়ার থেকে প্রতিমাসে ২০০০ টাকা করে দেই। এভাবে প্রতিবছরে ১০০টি স্কলারশিপের জন্য প্রয়োজন হয় ২৮ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। ডিপার্টমেন্টের পক্ষে এতটা অর্থ বহন করা সম্ভব হয় না। আমরা আমাদের ফান্ডটা ইনভেস্ট করে রেখেছি, সেখান থেকে যে আয় হয় তা থেকে ব্যয় বহন করা হয়। এছাড়াও শফিক আহমেদ সিদ্দিক, খালেদা খানম এরা ১০০টা বৃত্তির বাইরেও প্রতিবছর এক বা একাধিক বৃত্তি নিজের তহবিল থেকে প্রদান করেন। আমরা অন্যান্য শিক্ষকরাও কিছু না কিছু বৃত্তি প্রদান করি। আমাদের প্রত্যেকেরই উদ্দেশ্য হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা যেন ভালো থাকে, ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারে। এখানে যারা পড়ালেখার সুযোগ পায়, তারা সবাই অনেক ভালো স্টুডেন্ট। তবে তাদের আর্থিক কিছুটা সীমাবদ্ধতা থাকে। আমরা চাই না, অর্থের অভাবে কারো পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাক। এই ভাবনা থেকেই আজ আমরা আমাদের প্রচেষ্টাকে এতদূর নিয়ে আসতে পেরেছি। গত বছর ১ জুলাই থেকে প্রফেসর ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক এবং প্রফেসর বেগম খালেদা খানম অবসরে গেছেন। কিন্তু তাঁরা এখনো এ ডিপার্টমেন্টের জন্য অবদান রেখে চলেছেন। ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক আর্থিক সহায়তা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ডিপার্টমেন্টকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আখতারুজ্জামান তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই এমন কল্যাণমুখী তহবিল গঠনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রশাসন শিক্ষার্থীদের জন্য এমন কল্যাণমুখী কিছু যখন ভাববে, তখন তার একটি ইতিবাচক প্রভাব শিক্ষার্থীদের মধ্যেও পড়বে। যারা এখান থেকে ডিগ্রি নিয়ে বেরুবে, তারাও এই দর্শন ও জীবনবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরবর্তীতে এমন কল্যাণমুখী কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে প্রফেসর ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক ও অধ্যাপক বেগম খালেদা খানম এর হাতে উপহার তুলে দেন উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান। বিশেষ অতিথি বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের হাতে উপহার তুলে দেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক প্রফেসর মমতাজউদ্দিন আহমেদ। এরপর উপাচার্য প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামানের হাতে উপহার তুলে দেন এআইএস ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আব্দুল হাকিম।
সবশেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন বক্তব্য দেন অধ্যাপক মোঃ আব্দুল হাকিম। তিনি বলেন ‘মানুষ মানুষে জন্য’ এই প্রবাদ এবং প্রতিপাদ্য থেকেই এমন উদ্যোগ নেয়া। এই মহতী উদ্যোগের জন্য তিনি ডিপার্টমেন্ট, শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে প্রফেসর ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক এবং অধ্যাপক বেগম খালেদা খানমকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীরাও যেন উত্তরাধিকারীদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে এবং সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।