আবেগ বা ইমোশন আমাদের জীবনকে সর্বতোভাবে পরিচালনা করে চলেছে। সেভাবে দেখতে গেলে কর্মেেত্র আবেগের পরিধিও কোনো অংশে কম নয়। আবেগ বা ইমোশন কেবল যে অপরিহার্য বা সুদূর ফলপ্রসূ তাই নয়, একে ব্যাল্যান্স করে চলতে পারলে জীবনের উৎকর্ষকেও ক্ষুরধার করা যায়। মানুষের জীবনচক্রে ইমোশন দুই ধরনের হয়ে থাকে। পজিটিভ ও নেগেটিভ। এই দুই ধরনের ইমোশনের তারতম্য ঘটিয়ে মানুষ তাদের ব্যবহার এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যার ফলে সামগ্রিকভাবে জীবনে উন্নতি হয়। তবে প্রতিটি মানুষ যেহেতু আলাদা, সেহেতু সেই সঙ্গে কার কাছ থেকে কতটা প্রত্যাশা করতে পারেন তা হিসাবে রাখতে হবে। এ েেত্র একজনের ব্যক্তিত্বের ধরন, ইন্টেলিজেন্ট কোশেন্ট (আই কিউ) বা ইমোশনাল কোশেন্ট (ই কিউ), পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি, আয়ত্ত করার মতা, সমস্যা সমাধানের এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতা দেখে ঠিক করা উচিত। না হলে, অচিরেই প্রত্যাশায় ধাক্কা লাগতে বাধ্য।
এবার একটু দেখে নেওয়া যাক নেগেটিভ ইমোশন বলতে আমরা ঠিক কী বুঝি।
অমতা, অনুভূতিহীনতা, অনধিকারচর্চা?
এগুলোর ফলে ব্যক্তিজীবনে যে প্রভাবগুলো দেখা যায়, সেগুলো হলো : অযথা বিলম্ব করার অভ্যাস, কর্মতৎপরতা কমে যাওয়া ইত্যাদি। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেগেটিভ ইমোশন কাজ করছে কিনা, তা কতগুলো লণ দেখে নির্ধারণ করা যায়। সেগুলো :
খারাপ পরিবেশ, অযোগ্য ব্যক্তি দিয়ে কোনো কাজ করানোর চেষ্টা, যে কোনো পরিবর্তনের ভীতি, ঘন ঘন পরিবর্তন, সিদ্ধান্তে অনাস্থা, আয়ের অনিশ্চয়তা, ভালো কাজের তারিফ না পাওয়া, পারিবারিক সমস্যা, উন্নতির আশা না থাকা ইত্যাদি।
কর্মক্ষেত্র একটা যুদ্ধক্ষেত্র : এখানে অনবরত ঘটে যাবে নানা ঘটনা। কোনোটা ভালো লাগবে, আবার কোনোটায় মাথায় বাজ পড়বে। নানা দিক থেকে চাপ আসবেই। টাকা থেকে শুরু করে হঠাৎ করে বদলি সবটাতেই মেজাজ ঠিক রেখে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
যদি চাপের মুখে নিজের আবেগ সামলে নিয়ে চলা যায়, তাহলে নিজস্ব উৎপাদন মতার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটা সিচুয়েশনেই আস্তে আস্তে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কাজের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হচ্ছে, পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়া, মনের ভেতরের নেগেটিভ আবেগগুলো সামনে চলে আসা। কর্মেেত্র সবচেয়ে বেশি কর্মজীবীদের প্রভাবিত করে ব্যর্থতা, রাগ, নিরাশা, দুঃশ্চিন্তা, হতাশা, নার্ভাস হয়ে পড়া, বিভিন্ন কিছু অপছন্দ করা, কোনো কিছুতেই খুশি না হওয়া, তার থেকে অবনতি। চাকরির বাজারে টিকে থাকতে গেলে এসব আবেগকে প্রফেশনাল জীবন থেকে একেবারে বিদায় জানাতে হবে।
পরিস্থিতি যতই খারাপের দিকে যাক না কেন, ফ্রার্স্ট্রশেন বা বিরক্তি কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কোনোভাবেই এই আবেগ যেন মাথায় না চেপে বসে। এমন সিচুয়েশনে পড়লে ভেবে বের করতে হবে বিরক্তির কারণ। খুঁজে দেখতে হবে পুরো ব্যাপারটার মধ্যে ভালো একটা দিক। অল্পতেই হাল ছাড়া যাবে না। প্রথমবার কিছু নিয়ে নিরাশ হয়ে পড়েছেন এমনটা তো নয়। আগেও নিশ্চয়ই কখনো না কখনো এ রকম কিছু হয়েছিল। মনে করার চেষ্টা করুন সেবার কীভাবে সমাধানটা পাওয়া গিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান। ঠিক বেরিয়ে আসবেন সমাধান। চাকরি নিয়ে দুঃশ্চিন্তা লেগে থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে সেদিন দেরি নেই, যেদিন কাজের েেত্র প্রয়োজনীয় রিস্কটাও নিতে ভয় পাবেন। ফলে কাজও ভালো হবে না, উল্টো মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়বেন। কাজের েেত্র যা যা সমস্যা একটু লিখে রাখুন। অবসর সময়ে সেগুলো দেখে মাথা ঠান্ডা করে ভাবুন যে, সিচুয়েশনটা কীভাবে হালকা করা যায়।
রাগের মাথায় কেউ কোনো ভালো কাজ করেছে, এমন নজির বিশ্বের ইতিহাসে নেই। তাই বলাই বাহুল্য, রাগ সামলানো কঠিন কাজ। কিন্তু চাকরিটি যদি ভালোবাসেন, তাহলে রাগের মাথায় বরফ ঢালা ছাড়া অন্য উপায় নেই। হঠাৎ করেই রাগ হয় না, একটু একটু করে রাগের কারণ তৈরি হয়। এই সময় সেটাকে আটকাতে চেষ্টা করুন।
জীবনে নেগেটিভ ইমোশন নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি : যথাসম্ভব স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট করা। এর জন্য বই বা ওয়েবসাইট থেকে পরামর্শ নেওয়া যায়। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কাউন্সিলিং করা যেতে পারে। কর্মতৎপরতা বাড়াতে সাহায্য করে, সেই ধরনের কাজকর্মের নিয়োজিত হওয়া। কোনোভাবেই আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সবচেয়ে আপনদের কাছে থেকে সহায়তা নেওয়া। তাদের না লুকিয়ে তাদের নজরদারিতে থাকা। টেনশনকে প্রশ্রয় না দিয়ে, তাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা।
প্রয়োজন ছুটির এবং অবশ্যই বিনোদন নেগেটিভ ইমোশনকে দূরে সরিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
শেষ কথা : ছোট বয়স থেকে সবাই জানেন যে জীবনের গাড়িটি সব সময় সোজা রাস্তায় চলবে না। এবড়ো-খেবড়ো, উঁচু-নিচু সবটাই থাকবে। তাই সব সময় নিজের সঙ্গে সবকিছু ভালোই হবে- এমন ভাবনা নিয়ে বসে থাকলে তো বোকার স্বর্গে বসবাস করতে হবে। আর চলার রাস্তায় একটা-দুটো স্পিডব্রেকার না থাকলে জীবনটা পানসে হয়ে যাবে! যদি প্ল্যানিং মতো কাজ না হয়ে থাকে, তাহলে তা নিয়ে ভেবে ভেবে সময় নষ্ট না করে নতুন করে ভাবুন। ভুল যেগুলো হয়েছিল, সেগুলো শুধরে নতুনভাবে এগোন। নিজের সব নেগেটিভ আবেগকে তালাচাবি মেরে তুলে রেখে হাসতে হাসতে কর্মত্রে নামক যুদ্ধত্রে নামুন। জীবনটা কঠিন তাই বলে হাসতে ভুলবেন না। যখন আর কোনো কিছুই কাজে আসবে না। মন খুলে হাসার ব্যবস্থা করুন। হাসি কিন্তু সত্যি সত্যি মনে অনেক জোর এনে দেয়।