স্বাধীনভাবে নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করার স্বাধীনতা পাওয়া যায় ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করলে। বাংলাদেশের বহু তরুণ এখন নানা ফ্রিল্যান্সিং কাজে নিয়োজিত আছে এবং এ থেকে যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করছে। আপনি যদি সারা জীবন একজন ফ্রিল্যান্সার হয়ে কাটিয়ে দিতে চান তাহলে কয়েকটি বিষয় আগে থেকেই জেনে রাখতে হবে। ফ্রিল্যান্সাররা এ ধরনের সমস্যায় পড়েন এবং তা মেনেও নেন। সারা জীবন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকতে চাইলে আপনাকেও এ সমস্যাগুলো জানতে হবে এবং তা মেনে নিতে হবে। আর এ বিষয়গুলো যদি আপনার সঙ্গে খাপ না খায় তাহলে আগেই ফ্রিল্যান্সার হওয়ার চিন্তা বাদ দিতে হবে।
স্থিতিশীল আয়ের অভাব : ফ্রিল্যান্সিংয়ের একটি বড় সমস্যা হলো এর মাধ্যমে স্থিতিশীল আয় করা যায় না। অর্থাৎ আপনার আয় মাঝে মাঝে নাও থাকতে পারে। এ ছাড়াও বেতনসহ ছুটি, অসুস্থতাজনিত ছুটি, প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া চিকিৎসা সুবিধা ও পেনশনের মতো সুবিধা হারাতে পারেন। আপনি জানতে পারবেন না, আগামী মাসে আপনার কত টাকা আয় হবে কিংবা আদৌ হবে কি না। তাই ফ্রিল্যান্সার হতে হলে আপনাকে বেশ কয়েক মাসের ব্যয় জমিয়ে রাখতে হবে আগে থেকেই।
সহজ কাজ নয় : অনেকেই চাকরিতে ঢুকতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ে হোঁচট খান। অনেকেরই সৃজনশীলতার বিকাশ এতে বাধাগ্রস্ত হয়। আর তাই এসব বাদ দিয়ে চাকরি ছেড়ে বাসায় বসে নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করাকে বেশ মধুর বলেই মনে হয় অনেকের কাছে। এতে বেশি আয় হবে, আর নিজের বস নিজেই বনে যাবে, এমনটাই মনে করে অনেকে। কিন্তু বাস্তবতা হলো চাকরির তুলনায় এতে সাধারণত কম টাকা পাওয়া যায় আর ক্লায়েন্ট তৈরি করতে বেশ সময় আর পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। চাকরির তুলনায় এটি কোনো সহজ কাজ নয়।
দৃঢ়প্রত্যয়ী স্বভাবের প্রয়োজনীয়তা : ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য আপনাকে হতে হবে দৃঢ়প্রত্যয়ী। এ জন্য ক্রমাগত কাজে লেগে থাকা এবং নিজের উন্নতির চেষ্টা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আর এ কাজে প্রচণ্ড উৎসাহ নিয়ে লেগে থাকতে হবে বহুদিন। আপনার যদি এমন স্বভাব না থাকে তাহলে এক্ষেত্রে এগিয়ে না যাওয়াই ভালো।
সুশৃঙ্খল জীবনযাপন : নিজস্ব রুটিন অনুযায়ী জীবনযাপন করা ফ্রিল্যান্সিয়ের অন্যতম সুবিধা। কিন্তু এর অসুবিধাও কম নয়। বিশেষ করে নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী চলতে না পারলে আপনার ব্যক্তিগত জীবনে নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী কাজ করার ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। এ সমস্যা মোকাবিলায় নিজে নিজে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করার অভ্যাস থাকা প্রয়োজন। আপনি যদি এভাবে চলতে ও কাজ করতে সমস্যায় পড়েন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং থেকে দূরে থাকাই ভালো।
ক্লায়েন্ট খোঁজা : যতই দক্ষ হোন না কেন, ক্লায়েন্টরা খুঁজে পাবেন এমন কোনো কথা নেই। তাই আপনার বহু ক্লায়েন্টের কাছে নিজেকে উপস্থাপনের দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকতে হবে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। এটা কোনো সহজ কাজ নয়। এ জন্য যথেষ্ট সময়ও প্রয়োজন। এ কাজে দক্ষ না হলে আপনি ক্লায়েন্ট পাবেন না।
বহুমুখী প্রতিভা : একজন ফ্রিল্যান্সারের প্রয়োজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হওয়া। শুধু নিজের একটি ক্ষেত্রে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখার পাশাপাশি আপনাকে নিজের ব্যবসার ম্যানেজার নিজেই হতে হবে। এ জন্য আপনাকে নিজের ব্যবসার ম্যানেজার, অ্যাকাউনট্যান্ট, আইটি এক্সপার্ট, বিক্রয় প্রতিনিধি ও মার্কেটিং এক্সপার্ট বনে যেতে হবে। যদি এসব কাজের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত না থাকেন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং কাজ আপনার জন্য নয়।
একাকী জীবন : ফ্রিল্যান্সিংয়ে যোগ দিলে আপনাকে চাকরিজীবীদের তুলনায় একাকী জীবন কাটাতে হবে। কারণ এখানে আপনার পাশে সহকর্মী থাকবে না। ট্রেনিং, শিক্ষা ইত্যাদি আপনার নিজ দায়িত্বেই নিতে হবে।
এ ছাড়া আপনাকে বহু কাজ নিজে নিজেই শিখতে হবে। আপনার যদি বই পড়ে কিংবা ইন্টারনেট ঘেটে প্রয়োজনীয় বিষয় আয়ত্ত করার অভ্যাস থাকে তাহলে ভালো কথা। অন্যথায় একাকী জীবন কষ্টকর হয়ে দাঁড়াতে পারে।