জীবনব্যাপি শিক্ষার জন্য সংগ্রামী একজন মানুষের প্রতিচ্ছবি তিনি। গতানুগতিক শিক্ষার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে শিক্ষায় ক্যারিয়ার গঠন ও বহুবিষয়ে লেখাপড়ার সুযোগ তৈরি করার জন্য নিরন্তর কাজ করে যাওয়া এক দৃঢ়প্রত্যয়ী স্বাপ্নিক ব্যক্তিত্ব। স্বপ্ন শুধু দেখেন না, দেখাতেও পছন্দ করেন। শিক্ষার সব ভালোর সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে চান। তিনি দেশের সব প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ও আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের স্বপ্ন দেখেন। দেশের শিক্ষায় যুগান্তকারী পরিবর্তনের প্রত্যাশা করেন। শিক্ষাই হবে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ার অন্যতম চালিকা শক্তি তাঁর ভাবনায় এটা বাস্তবে সম্ভব, অলৌকিক কিছু নয়। জেলা থেকে জেলায়, শহর থেকে গঞ্জে ঘুরে-ঘুরে যিনি এসব জানাতে চান শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। শিক্ষার এসব কর্মযজ্ঞের ভাবনা দেশের মানুষদের মাঝে যিনি ছড়িয়ে দিতে চান তিনি আর কেউ নন, শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনে এক আধুনিক ও আলোকিত মানুষ, শিক্ষা সংস্কারক ও উদারপ্রাণ শিক্ষা উদ্যোক্তা, ডিজিটাল শিক্ষার স্বপ্নদ্রষ্টা, বিএসবি-ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের সম্মানিত চেয়ারম্যান লায়ন এম কে বাশার পিএমজেএফ।
কর্ম আর ব্যক্তিত্বের দীপ্তিময় বিশালতা দিয়ে তিনি নিজকে নিয়ে গেছেন আকাশচুম্বী উচ্চতায়। লায়নিজম আন্দোলনে নিবেদিত সদা হাসি-খুশি, সদালাপি, প্রাণোচ্ছ্বল ও সদাচারে বিশ্বাসী এই মানুষটি একজন দক্ষ সংগঠক, সমাজসেবক, শিক্ষাসেবী, সংবাদপত্রসেবী সফল মানুষ। এছাড়াও তিনি একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ, একজন সঞ্চালক ও সফল বক্তা।
শিক্ষাকে তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছেন অপেক্ষাকৃত সাবলীল ও নান্দনিক রূপে, আর এ কাজে তিনি ব্যবহার করেছেন তথ্যপ্রযুক্তিকে। এজন্য তিনি নিজ প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিয়ান কলেজে প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ডিজিটাল শিক্ষা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রকৃত ডিজিটাল শিক্ষা ও এর ব্যাপকতা তুলে ধরার প্রয়াস রেখেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রমের গবেষণায় যুক্ত করেছেন সকল শিক্ষা উপকরণের ডিজিটাল ভার্সন তৈরি এবং শিক্ষার্থীদের হাতে বইয়ের পরিবর্তে ছোট্ট ল্যাপটপ তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া।
লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল এর ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫ এ২ এর ২০১৬-’১৭ লায়ন বর্ষের ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর হিসেবে লায়ন এম কে বাশার পিএমজেএফ ঊফঁপধঃরড়হ ভড়ৎ অষষ বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করেন। ফলশ্রুতিতে ২০১৭-’১৮ লায়ন বর্ষের কাউন্সিল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সফল এ সংগঠক।
লায়ন এম কে বাশারের চিন্তা, চেতনা ও মননে শিক্ষা। যিনি পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করেন। ২০০৫ সালে যিনি নিরক্ষরমুক্ত আন্দোলনের ঘোষণা দেন। এর মূল সেøাগান ছিলো, নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নিরক্ষরমুক্ত করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়া। যিনি আরো মনে করেন, যে দেশে গুণীজনদের সম্মান করা হয় না সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না। এজন্য তিনি দেশের খ্যাতনামা গুণিজনদের সংবর্ধনা দিয়ে থাকেন। তিনি মনে করেন মেধাবীরা কখনো গরীব নয়। যার মেধা আছে সে ধনী।
শিক্ষার নানা প্রসঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি তাঁর মুখোমুখি হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রতিনিধি। নানা প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্যামব্রিয়ানসহ দেশের শিক্ষা বিষয়ে তাঁর অভিব্যক্তি ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। সেসব কথার উল্লেখযোগ্য অংশ পাঠকদের জন্য উপস্থাপিত হলো।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসঃ ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের বর্তমানে সার্বিক অবস্থা কেমন?
লায়ন এম কে বাশারঃ শিক্ষার প্রসারে ক্যামব্রিয়ান নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করে চলেছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন আলোর ঠিকানায় পৌঁছে দিতে হবে সেই প্রত্যাশায় আমরা প্রতিদিন শিক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৪ সালে ক্যামব্রিয়ান কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ২০০৮ সালে ক্যামব্রিয়ান কলেজ, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে নতুন আঙ্গিকে আত্মপ্রকাশ করে।
এরপর আন্তর্জাতিক শিক্ষার সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করে, আমাদের জাতীয় শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করে আধুনিক ডিজিটাল শিক্ষার সঙ্গে ক্যামব্রিয়ানকে সম্পৃক্ত করা হয়। ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষা নীতির আলোকে সৃজনশীল পদ্ধতির শতভাগ বাস্তবায়ন, শিক্ষার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, শিক্ষকদের যুগোপযোগি প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ক্যামব্রিয়ানকে সবার আগে এগিয়ে রাখতে চাই।
ক্যামব্রিয়ান কলেজ আজ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেটা এক সফল পথচলার ইতিহাস। কালক্রমে দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা অভূতপূর্ব সাফল্যের নাম ক্যামব্রিয়ান। দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, পাঠদানে নৈপূণ্যতা, যুগোপযোগী আধুনিক শিক্ষা প্রসারে এক নন্দিত প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিয়ান। সঠিকভাবে পাঠ্যক্রম অনুসরণ, সৃজনশীল পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগ ও তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারে ক্যামব্রিয়ান তুলনাহীন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্মার্ট ক্লাস রুম, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ও বিজ্ঞানাগার, হোস্টেল ও ট্রান্সপোর্ট সুবিধা ক্যামব্রিয়ানে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।
২০১৮ সাল হতে বিএসবি ফাউন্ডেশন পরিচালিত প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষার্থীদের ফ্রি স্মার্ট আইডি কার্ড দেওয়া হচ্ছে যা বাংলাদেশে প্রথম। এই স্মার্ট আইডি কার্ডের মাধ্যমে অভিভাবকগণ শিক্ষার্থীর অটো এসএমএস অ্যাটেনডেন্সসহ শিক্ষার্থীকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন এবং শিক্ষার্থীরা জরুরি প্রয়োজনে বাবা, মা ও অধ্যক্ষকে ফোন করতে পারবে। প্রথম স্মার্টক্লাস রুম সম্বলিত ক্যাম্পাসেরও দাবিদার ক্যামব্রিয়ান।
সহশিক্ষা কার্যক্রমের জন্য রয়েছে কালচারাল একাডেমি, বিএনসিসি, স্কাউটিং, ডিবেট ক্লাব, ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং এবং আছে সৃজনশীল ও ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে পাঠদানে পারদর্শী ছয় শতাধিক দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আরো সমৃদ্ধ করেছে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা, যাদের অনেকেই আজ বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আর্মি অফিসার হিসেবে দেশ সেবায় নিয়োজিত রয়েছে; অনেকেই দেশ-বিদেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছে।
ক্যামব্রিয়ান সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করছে। তন্মধ্যে অন্যতম গরীব, মেধাবী ও গ্রামের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া, কম্পিউটার প্রযুক্তিতে দক্ষ করে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের পথকে প্রশস্ত করা, আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করা, ধর্মীয় মূল্যবোধে চরিত্রবান করে গড়ে তোলা, নেশামুক্ত রাখা এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে মানসিক বিকাশ ঘটানো।
বি ক্যাঃ ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দেশের শিক্ষা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
লায়ন বাশারঃ মানসম্মত শিক্ষা বর্তমান যুগের একটি অপরিহার্য চাহিদা। মানসম্মত শিক্ষার অনুসন্ধান চলছে বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই। ফলে গত কয়েক দশক ধরেই বিশ্বব্যাপী শিক্ষার সকল স্তরে বিভিন্ন পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এক দশক থেকেই আমাদের দেশেও শিক্ষার মান উন্নয়নে নানা পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে।
উন্নত বিশ্ব ও উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে গুণগত ও মানসম্মত শিক্ষা। ২০১০ সাল থেকে দেশে নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের পরিপ্রেক্ষিতে নানা স্তরে শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এরপর নয়টি বছর অতিক্রান্ত হলেও আমাদের শিক্ষার্থীদের কাঙ্খিত মানের শিক্ষা প্রদান করার পরিবেশ আশানুরূপভাবে গড়ে উঠেনি। পর্যায়ক্রমে জিপিএ-৫ এর পরিমাণ বেড়েছে এটা ঠিক, কিন্তু বাস্তবে শিক্ষার বিকাশ ও মান উন্নয়ন সেভাবে হয়নি। ফলে শিক্ষার ক্ষেত্রে এই যে পরিবর্তন তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় আশা করা হয়েছিল অধিকাংশ শিক্ষার্থী প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জনে সক্ষম হবে। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জনের মান অত্যন্ত হতাশাজনক। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও গুণগতমান হতাশাজনক অবস্থায় রয়ে গেছে। প্রাথমিক স্তরে গুণগত মানের দিক থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এখনও আমরা পিছিয়ে। মাদরাসাতে একই অবস্থা বিরাজমান। তবে আমাদের সবচেয়ে হতাশাজনক স্থানটি হচ্ছে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে। প্রকৃতপক্ষে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা-এই তিনটি শিক্ষার ক্ষেত্রেই তাত্ত্বিক ধারাটি প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য জীবনকেন্দ্রিক এবং সমাজ উন্নয়ন সহযোগী শিক্ষাধারা বাংলাদেশে এখনও বেগবান হয়ে উঠেনি।
আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষার্থী গড়ে না উঠার পেছনে বহুবিধ কারণ রয়েছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে মোটাদাগে কতগুলো অন্তরায় বা বাঁধা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে ১. মানসম্মত শিক্ষকের অভাব, ২. শিক্ষক প্রশিক্ষণের অভাব, ৩. সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব, ৪. দুর্বল একাডেমিক তত্ত্বাবধান, ৫. জীবনঘনিষ্ঠ শিক্ষাক্রমের অভাব, ৬. অপ্রতুল শিক্ষণ সামগ্রী, ৭. দুর্বল মূল্যায়ন প্রক্রিয়া, ৮. আধুনিক এডুকেশন টেকনোলজির অভাব, ৯. শিক্ষানীতি ও পরিকল্পনা যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া, ১০. শিক্ষা খাতের অর্থ বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় কম, ১১. শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভেতর নৈতিক মূল্যবোধের অভাব।
আমাদের দেশে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এসব বাধা টপকে বিশ্বায়নের শিক্ষার সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারছে না। এ বিষয়ে আরো যত্মশীল হতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
বি ক্যাঃ ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা আপনার কলেজকে কেন বেছে নেবে বলে মনে করেন?
লায়ন বাশারঃ বর্তমান শিক্ষানীতি অনুযায়ী সঠিকভাবে পাঠ্যক্রম অনুসরণ, সৃজনশীল সঠিক প্রয়োগ ও তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারে ক্যামব্রিয়ান অনন্য দৃষ্টান্তের অধিকারী। আরেক ধাপ এগিয়ে বলা যায়, ৩০-৪০ জনের আসন বিশিষ্ট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্মার্ট ক্লাস রুম, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ও বিজ্ঞানাগার, হোস্টেল ও ট্রান্সপোর্ট সুবিধা ক্যামব্রিয়ানে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। সহশিক্ষা কার্যক্রমের জন্য রয়েছে কালচারাল একাডেমি, বিএনসিসি, স্কাউটিং, ডিবেট ক্লাব, ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং এবং আছে সৃজনশীল ও ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে পাঠদানে পারদর্শী ছয় শতাধিক দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক। ভর্তি হলেই ১০১টি শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে দেয়া হয়। কোচিং এর পরিবর্তে রয়েছে এসএসপি (ঝঝচ) ক্লাস সম্পূর্ণ ফ্রি।
কম জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী নিয়ে অধিক জিপিএ প্রাপ্তির অনন্য দৃষ্টান্তের অধিকারী ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ সুবিধাসহ মফস্বলের শিক্ষার্থীদের ৫০% আসন সংরক্ষিত রয়েছে ক্যামব্রিয়ানে। বর্তমানে ৬০০০ শিক্ষার্থী দক্ষ-অভিজ্ঞ শিক্ষকদের নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে লেখাপড়া করছে। যার মধ্যে ১৩টি হোস্টেলে (বয়েজ-১১ ও গার্লস-২) ১৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব সুযোগ সুবিধার কারণে শিক্ষার্থীরা প্রিয় কলেজ হিসাবে বেছে নিয়ে থাকে ক্যামব্রিয়ানকে।
বি ক্যাঃ দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যাগুলো কী কী বলে মনে করেন?
লায়ন বাশারঃ জাতীয় শিক্ষানীতিতে ১৫ ধরনের শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ১২ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। ‘শিক্ষা’ হচ্ছে আমাদের সমাজে অত্যন্ত অত্যাবশ্যক উপাদান। এসব শিক্ষাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক. সরকারি তত্ত্বাবধানে শিক্ষা আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে বেসরকারি শিক্ষা।
প্রাইমারি স্তরে সরকারিভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এর পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে ইংরেজি মিডিয়াম, কিন্ডারগার্টেনসহ কমিউনিটি বেইস প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ইংরেজি মাধ্যম বা কিন্ডারগার্টেনে বিপুলসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীরা লেখাপড়া করছে। দেশে বর্তমানে লক্ষাধিক এ জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে ২ কোটি শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করছে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি বহু সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বিষয়টি আরো পরিষ্কার করা যায়। সরকারি পর্যায়ের সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকগণ এখন পর্যন্ত ১৬ ধরণের প্রশিক্ষণ পেয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা পায়নি একটি প্রশিক্ষণও।
এভাবে বেসরকারি বিশেষ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোও নানাভাবে সরকারি প্রদত্ত শিক্ষা সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। তবে এরপরও অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব প্রচেষ্টায় নান্দনিক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে নিজস্ব দক্ষতায়। যেমন বলা যায় ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের কথা। এই প্রতিষ্ঠানটি যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সেটা দীর্ঘ পথচলার সাফল্যের ইতিহাস। কালক্রমে দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা অভূতপূর্ব সাফল্যের নাম ক্যামব্রিয়ান।
বি ক্যাঃ বেসরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কী কী বিষয়ে বিবেচনা করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
লায়ন বাশারঃ শিক্ষা বিস্তারে নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা এক মহতী উদ্যোগ। বাস্তব ক্ষেত্রে শিক্ষা হলো জীবনব্যাপি প্রক্রিয়া যা অভিজ্ঞতার পূর্ণগঠন, পুনঃসৃজন এবং একটি মানবীয় প্রচেষ্টা। এসবের কারণে উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ জানাতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গতানুগতিক যে নিয়মকানুন হয়েছে, যেগুলো শিথিল করা দরকার। সুস্থ সমাজ, সুস্থ মানুষ এবং মানুষের নৈতিক চরিত্রের বিকাশ ঘটাতে হলে আরো বেশি বেশি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা সময়ের দাবি।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়তে চায় তার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য কী; এসব প্রতিষ্ঠান দিয়ে মানুষের, সমাজের বা দেশের কল্যাণ বয়ে আনবে কী? এসব বিবেচনায় রেখে উৎসাহ যোগাতে হবে, প্রতিবন্ধকতা নয়।
বি ক্যাঃ অনেকেই বেসরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মনিটরিংয়ের জন্য পৃথক উপদেষ্টা কমিশন গঠনের কথা বলে থাকেন, এ ব্যাপারে আপনার সুচিন্তিত অভিমত কী?
লায়ন বাশারঃ মনিটরিং হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত শিক্ষার্থীর সামগ্রিক ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিশ্লেষণের মূল্যায়ন। অন্যভাবে বলা যায়, যে প্রক্রিয়ার সাহায্যে কোনো কার্যক্রমে বিবৃত উদ্দেশ্য অনুযায়ী নির্ধারিত আদর্শ অনুসারে, মানের উৎকর্ষতা অনুসারে, কার্যক্রমটির কার্যপ্রক্রিয়া বা ফল কতটুকু সন্তোষজনক তা পরীক্ষা করা যায় তাকে মনিটরিং বলে।
আমাদের দেশে শিক্ষার উৎকর্ষতার জন্য অনেকগুলো সেল রয়েছে। সেগুলো নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। ২০১০ সালে শিক্ষা নীতি চালু হওয়ার পর শিক্ষার পালে গতি পেয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশেষ শিক্ষার গুরুত্ব এবং পরিসর ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষার পরিধি এবং ব্যাপ্তিও বহুমুখী। এসবের কারণে বেসরকারি স্কুল ও কলেজগুলোর ক্রমোন্নতির জন্য একটি মনিটরিং উপদেষ্টা কমিশন থাকলে মন্দ হয় না। সামগ্রিকভাবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অগ্রগতিতে সহায়ক হবে সেটি। বিশ্বের বহু দেশে এ জাতীয় মনিটরিং সেল রয়েছে।
বি ক্যাঃ বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কী?
লায়ন বাশারঃ তথ্য-প্রযুক্তির যুগে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার নানাভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে অন্যখানে। শিক্ষার্থীর জন্য প্রযুক্তি যাঁরা ব্যবহার করবেন, সেইসব শিক্ষকগণের অধিকাংশই মানসিকভাবে এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী নন। দেখা গেছে, একজন শিক্ষার্থীর স্মার্ট ফোন ব্যবহার করছে, অন্যদিকে শিক্ষক ম্যানুয়েল ফোন ব্যবহার করছেন। দেখা যাচ্ছে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী শিক্ষকের চেয়ে এগিয়ে।
ইতিহাসে এই প্রথম শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের এমন এক ধরনের সমাজের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে; যেখানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে আমাদের জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্পৃক্ত। গুণগত শিক্ষার ধারণা, পরিকল্পিত শিক্ষা, অর্থনৈতিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ শিক্ষার জন্য বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। নইলে শিক্ষার কাঙ্খিত সুফল থেকে শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবে, দেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্থ হবে।
বি ক্যাঃ শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার ক্ষতি না করে কী ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত হতে পারে বলে আপনার ধারণা?
লায়ন বাশারঃ উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার শিক্ষার্থী অর্থাৎ কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা সাধারণত শিক্ষার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে টিউশনি, কোচিং-এ পড়ানো ইত্যাদি। শহরকেন্দ্রিক ছাত্র-ছাত্রীরা ফ্যাশন হাউজ, রেস্টুরেন্ট, ডিপার্টমেন্টাল দোকান ইত্যাদিতে খন্ডকালীন কাজ করতে দেখা যায়। সাম্প্রতিক যুক্ত হয়েছে অবসরে মোটর সাইকেল, প্রাইভেট কার চালিয়ে বাড়তি আয় করার প্রবণতা। এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি উবার, পাঠাও ইত্যাদি।
তাছাড়া মার্কেটিংয়ে, কোনো প্রচার কর্মকান্ডে, কম্পিউটার শিখে বাসায় বসে অনেক প্রতিষ্ঠানের কাজ, পরিসংখ্যানের কাজ করা যায়। এখন সারাবিশ্বে জনপ্রিয় কাজ হচ্ছে আউটসোর্সিংয়ের কাজ। শিক্ষার্থীরা অতি সহজেই নিজের লেখাপড়া ঠিক রেখে বাড়তি আয় করে লেখাপড়ার খরচ নিজেই চালাতে পারে। সেই সঙ্গে পিতা-মাতাকেও সহযোগিতা করতে পারে।
সবচেয়ে বড় বাস্তবতা হচ্ছে শিক্ষিত কোটি কোটি মানুষ বেকারত্বের নির্মম যন্ত্রনায় ভুগছে। সেখানে খন্ডকালিন বা পার্টটাইম জব খুঁজে নেওয়াও কঠিন। তবে খেয়াল রাখতে হবে বাড়তি আয়ের জন্য মূল লক্ষ্য লেখাপড়া এটা যেন ব্যাহত না হয়।
বি ক্যাঃ বাংলাদেশে শিক্ষা উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
লায়ন বাশারঃ শিক্ষার উন্নয়ন এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। শিক্ষা ব্যবস্থার নানা সংস্কার, পরিবর্তন, নবায়ন, পূণর্বিন্যাস ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। এজন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন। এটা স্মরণযোগ্য যে, বাংলাদেশে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। শুধু শিক্ষা কেন? যে কোনো কাজ সুসম্পন্ন করতে হলে পরিকল্পনার প্রয়োজন। পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজেরই লক্ষ্য অর্জিত হয় না।
শুধু পরিকল্পনা গ্রহণ করলেই চলবে না। এজন্য সুষ্ঠু বাস্তবায়ন প্রয়োজন। একটি পরিকল্পনা করতে গেলে কিছু প্রশ্ন চলে আসে। তা হলো কে করবে, কী করবো, কি পদ্ধতিতে করবো, কখন এবং কত সময়ে করবো, কাদের জন্য করবো, কত বাজেট লাগবে এবং কি উপকারে আসবে। এসব প্রশ্নের সঠিক জবাব জানা দরকার।
তবে শিক্ষা পরিকল্পনার উদ্দেশ্য সাধনে কতগুলো বিশেষ দিক বিবেচনায় আনতে হবে; যেমন শিক্ষার দাবি বা চাহিদার সুযোগ-সুবিধার মধ্যে ব্যবধান কমানো, অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা, চাহিদা ও সামঞ্জস্য বিধান, ন্যায়সঙ্গত বন্টন ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রতি যতœশীল থাকা।
বি ক্যাঃ ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ সম্পর্কে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাচ্ছি।
লায়ন বাশারঃ ক্যামব্রিয়ান নিয়ে প্রতিদিনই আমার ভাবনার বিষয় থাকে। ক্যামব্রিয়ানকে কেন্দ্র করে শিক্ষাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। দেশ-দেশান্তরে ঘুরে ঘুরে সারাবিশ্ব চষে শিক্ষার ভালোটুকু খুঁজে বেড়াই। দেশের কল্যাণ হয়, শিক্ষার মঙ্গল হয় এমন নতুন নতুন শিক্ষার টেকনোলজি খুঁজে খুঁজে আমাদের শিক্ষা পদ্ধতিতে প্রয়োগ করার চেষ্টা করি। আর শিক্ষার সঙ্গে ক্যামব্রিয়ানের সব ভালোটুকু সবাইকে বিলিয়ে দিতে চেষ্টা করি।
শিক্ষার যত আধুনিক টেকনোলজি আছে তা ক্যামব্রিয়ানে বাস্তবায়ন করতে চাই। ক্যামব্রিয়ানের শিক্ষার্থীরা শুধু শিক্ষায় বড় হবে না, নৈতিকতায় আদর্শ মানুষ হবে। এই প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থী একেকজন দেশের সম্পদে পরিণত হবে। বাংলাদেশে প্রথম স্মার্ট ক্লাস রুম সম্বলিত ক্যাম্পাস করেছি। পর্যায়ক্রমে বিএসবি-ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটি চালু করতে চাই।
প্রত্যেক শিক্ষা বোর্ডে একটি করে ক্যামব্রিয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে চাই। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুসরণে বেসরকারি একটি শ্রেষ্ঠমানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্যও চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইচ্ছা, সামর্থ্য ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাশা পূরণে বারবার বিফল হচ্ছি। তবে প্রত্যাশায় বুক বেঁধে প্রহর গুণছি, হয়তো একদিন আমার স্বপ্নের সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবায়ন হবে। এই অপূর্ণতাটুকু মাঝে মাঝে বিচলিত করে। কিন্তু আমার এই প্রত্যাশা একদিন বাস্তবে রূপ নেবে এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আন্তর্জাতিকমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করে রেখেছি। এখন কেবল অপেক্ষার পালা।