করোনার ছোবলে বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য। প্রাণঘাতী এই মহামারি সামাল দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু রাখাই এখন বিশ্বজুড়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যেসব দেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে (আইসিটি) এগিয়ে তারা করোনাকালে বাড়তি সুফল পাচ্ছে। দ্রুত ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারে এগিয়ে থাকা দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির আওতায় গত ১১ বছরে গড়ে ওঠা তথ্য-প্রযুক্তি অবকাঠামোই এ কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে কাজে লাগছে বলে মনে করছেন তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, জরুরি সেবাসহ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী রূপকল্প বাস্তবায়নে আইসিটি উপদেষ্টা হিসেবে পাশে পেয়েছেন সুযোগ্য সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়কে। প্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে ফাইভজি চালুর প্রস্তুতিসহ ডিজিটাল অবকাঠামো ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৬ কোটি ২৯ লাখ মোবাইল গ্রাহকের মধ্যে ১০ কোটি ১১ লাখ ৮৬ হাজার মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। মোবাইলে আর্থিক সেবা, রাইড শেয়ারিং, ই-কমার্সসহ বেশ কিছু সরকারি সেবা এখন হাতের নাগালে। এ ছাড়া আগামী বছরের প্রথমার্ধে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল সেবা (ফাইভ-জি) চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা অ্যানালিসিস, ইন্টারনেট অব থিংকস, ব্লকচেইনের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে পা রাখবে বাংলাদেশ। উচ্চগতির মোবাইল ইন্টারনেট কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প ও সেবা খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। আর এ যাত্রাকে এগিয়ে নিচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ড. এম কায়কোবাদ বলেন, তথ্য-প্রযুক্তি অবকাঠামো এখন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়, সেটা আজ বাস্তবতা। আমরা এখন ঘরে বসে অনেক কাজ করছি, অনলাইনে শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন, জরুরি মিটিং সারা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগ অসাধারণ; কিন্তু আমাদের আরো দ্রুত এগোতে হবে। গ্রাম ও শহরের ডিজিটাল বৈষম্য আরো কমিয়ে আনতে হবে।
গত চার বছরে ডিজিটাল অর্থনীতিতে চমকপ্রদ অগ্রগতি অর্জন করে হুয়াওয়ের ‘গ্লোবাল কানেক্টিভিটি ইনডেক্স ২০১৯’-এর ‘টপ মুভার’ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ বছরেরও কম সময়ের পথচলায় জিসিআই সূচকে সাত পয়েন্ট এগিয়েছে বাংলাদেশ। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ও বাসাবাড়িতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল অর্থনীতিতে সময়োপযোগী পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক বলেন, আমাদের বড় সৌভাগ্য যে আমরা একজন তরুণ এবং মেধাবী নেতা পেয়েছি, যিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন দিয়েছেন সেখানে সজীব ওয়াজেদ জয় ভাইয়ের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা ছিল। এর সমস্ত রোডম্যাপ, পলিসি, অবকাঠামোয় আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত ছিল বড় টার্নিং পয়েন্ট। এর সুফল আজ আমরা পাচ্ছি। উনার নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠিত পাঁচ হাজার ৬০০ ডিজিটাল সেন্টার থেকে ৬০০ ধরনের সেবা পাচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এটা এখন ডিজিটাল ইকোনমিক হাব হয়েছে, যেটা জয় ভাইয়ের ব্রেনচাইল্ড ছিল। উনার নির্দেশনায় আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি পৌঁছে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ বান্ধব নীতি ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত এবং জয় ভাইয়ের বিচক্ষণতায় আমরা আজকে দেশে ডিজিটাল স্মার্টফোন ও ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন করছি, যা আগে প্রয়ে পুরোটাই আমদানি করতে হতো। উনার আরেকটি যুগান্ত কারী সিদ্ধান্তছিল ৯৯৯ জরুরি সেবা, যার সুফল পাচ্ছে কোটি মানুষ।
এদিকে করোনাকালের ১০০ দিনে দেশে ইন্টারনেট ও ই-কমার্সের ব্যবহার ৫০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান জুনাইদ আহেমদ পলক। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য সরবরাহ, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি ও ঘরে বসেই বিনোদন এসব বিষয় কিভাবে চলমান রাখা যায় সে বিষয়ে আমরা কার্যক্রম শুরু করি। সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী কিন্তু ঘরে বসেই শিক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে জরুরি খাদ্য সরবরাহ, এমনকি ঘরে বসে বিনোদন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে। আমরা করোনাবিষয়ক তথ্য সেবা, টেলিমেডিসিন সেবা, সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা, সেলফ করোনা টেস্টিংসহ অনেকগুলো নতুন সেবা যুক্ত করি হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে। এছাড়া করোনা বিডি অ্যাপ এবং কন্টাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ, ‘ভলান্টিয়ার ডক্টরস পুল, বিডি’ অ্যাপ সেলফ টেস্টিং টুল, প্রবাস বন্ধু কলসেন্টার, ডিজিটাল ক্লাসরুম, ফুড ফর নেশন, এডুকেশন ফর নেশনসহ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম চালু করি।
২০২৫ সালের মধ্যে গ্রামের ১০ কোটি মানুষ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের আওতায় আসবে। আর কর্মসংস্থান হধষ্টি হবে ২০ লাখ মানুষের। এ ছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে আইসিটি পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয় হবে। ফলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১ শতাংশের বেশি বাড়বে বলে আশা করছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।
তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দেশের তরুণদের দক্ষতা বাড়ানোর কথা বললেন সফটওয়্যার রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর। তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন, রোবটিকসের মতো প্রযুক্তিগুলো নিয়ে কাজ করতে হলে আমাদের দক্ষ জনবলের বিকল্প নেই।