মাধ্যমিক পরীক্ষা প্রায় শেষের পথে। উচ্চ মাধ্যমিকের মাধ্যমে নতুন শিক্ষাজীবনে পদার্পণ করতে চলেছে শিক্ষার্থীরা। আর উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতি, ফলাফল এবং মানসিক বিকাশের উপরেই নির্ভর করে পরবর্তী জীবন। সব মিলিয়ে বলা যায়, একজন শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন শেষ করে নিজেকে কোথায় দেখতে চায়, সেটার অনেকখানিই নির্ভর করে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল এবং শিখনের উপর। এর সব কিছুতেই কলেজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই কলেজ বাছাইটাও যে ভালো হতে হবে। এর বিকল্প নেই। তারপরেও কোন্ কলেজে ভর্তি হবে ছেলে-মেয়েরা? ভালো কলেজ বলতেই বা আমরা কি বুঝি?
ভালো কলেজ বলতে কিন্তু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, সুউচ্চ দালান, মাঠসম্বলিত নয়। বরং অভিজ্ঞ শিক্ষক, আধুনিক মানের শিক্ষণ পদ্ধতি, শিক্ষার্থীদের মান সবকিছু মিলিয়েই ভালো কলেজ। একটুখানি পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের প্রত্যেক বোর্ডের সেরা কলেজগুলোর প্রায় সবাই এই নির্দেশনা মেনে চলে। চলুন এবার জেনে নেয়া যাক, বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এবং সফল কলেজগুলো সম্পর্কে।
নটরডেম কলেজ ॥ ঢাকা বোর্ড
উচ্চমাধ্যমিক শেষে দেশের খ্যাতিমান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুযোগ পাওয়ার প্রায় সবক্ষেত্রেই প্রথম সারিতে থাকে নটরডেমের শিক্ষার্থীরা। বিজ্ঞান বিভাগের জন্য এই কলেজের সুনাম দেশজুড়ে। নটরডেমে ভর্তির জন্য লিখিত পরীক্ষা এবং ভাইভা দেয়া আবশ্যক। আর এখানে বিজ্ঞান বিভাগে আবেদনের জন্য মাধ্যমিক পরীক্ষাতে অবশ্যই জিপিএ-৫ থাকতে হবে। আর মানবিক বিভাগের জন্য জিপিএ-৩.২৫ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের আবেদন যোগ্যতা জিপিএ-৪.২৫।
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ ॥ ঢাকা বোর্ড
ফলাফলের দিক দিয়ে প্রায়ই সারা দেশে শীর্ষস্থানে অবস্থানকারী কলেজ হলো মোহাম্মদপুরে অবস্থিত ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ। আবাসিক সুবিধা, কড়া নিয়ম-শৃঙ্খলার জন্য কলেজটি বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে ভর্তির জন্য একটি নির্দিষ্টমানের জিপিএ প্রয়োজন হয়। বিজ্ঞান বিভাগের জন্য গত বছরে জিপিএ-৫ ভর্তির আবেদন নির্ধারণ করা হয়। ব্যবসায় বিভাগে ৪.৫০ এবং মানবিকের জন্য ন্যূনতম আবেদন যোগ্যতা ৪।
যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ ॥ যশোর বোর্ড
যশোর বোর্ডে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের পরেই ক্যান্টনমেন্ট কলেজের স্থান। সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত কলেজটি বরাবরই ফলাফলের দিক দিয়ে এগিয়ে। প্রতি বছরেই সেরা পাঁচের মধ্যে অবস্থান করে থাকে জেলা শহরের এই কলেজটি। ক্যান্টনমেন্ট কলেজ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি আবেদনের জন্য ন্যূনতম জিপিএ-৫ প্রয়োজন। ব্যবসায় শিক্ষার জন্য ৪.৮৮ এবং মানবিকের জন্য ৪।
সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া ॥ রাজশাহী বোর্ড
রাজশাহী বোর্ডের সেরাদের সেরা বলা হয় এ কলেজকে। স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করার ব্যবস্থা থাকলেও উচ্চমাধ্যমিকের সফলতা কলেজকে তাদের আলাদা পরিচয় প্রদান করেছে। প্রতি বছরেই কলেজটিতে ভর্তির জন্য একটি বড় সংখ্যার আবেদনপত্র জমা পড়ে। বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির জন্য অবশ্যই জিপিএ-৫ থাকতে হবে। মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে ভর্তির জন্য ন্যূনতম জিপিএ-৪ ও ৪.৫০ থাকতে হবে।
রাজশাহী কলেজ ॥ রাজশাহী বোর্ড
উত্তরবঙ্গের মধ্যে এটাও অন্যতম একটি কলেজ। প্রতিবছর ভর্তির জন্য অনেক আবেদন জমা পড়ে এ কলেজে। উচ্চ মাধ্যমিক ফলাফলের জন্য কলেজটির বেশ সুনাম রয়েছে।
ইস্পাহানী স্কুল এন্ড কলেজ ॥ কুমিল্লা বোর্ড
কুমিল্লা বোর্ডে ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ এবং ফেনী ক্যাডেট কলেজ প্রায় প্রতিবারই প্রথম দুই স্থান দখল করে রাখে ফলাফলের দিক দিয়ে। আর তৃতীয় অবস্থানে একটু হেরফের হলেও অনেকটা পাকাপোক্তভাবে যে কলেজ জায়গা করে নিয়েছে সেটা ইস্পাহানী স্কুল এন্ড কলেজ। উচ্চমাধ্যমিকে এখানে ভর্তির জন্য বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পয়েন্ট প্রয়োজন হয়। এছাড়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, মডেল কলেজও অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে ফলাফলের দিক থেকে।
অমৃত লাল দে কলেজ ॥ বরিশাল বোর্ড
সেরা কলেজের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী অমৃত লাল দে কলেজ। তবে উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের দিক দিয়ে বরিশাল ক্যাডেট কলেজ এগিয়ে। গত বছরে বেসরকারি এ কলেজটি থেকে ৮১৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৭৬২ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৩০ জন। এরপরেই বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ। এছাড়া বরগুনার আমতলী কলেজও নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে।
ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ ॥ দিনাজপুর বোর্ড
ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ শুধু উচ্চ মাধ্যমিকেই নয়, মাধ্যমিক ও জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দিক দিয়েও সেরা। এরপরেই রয়েছে রংপুর ক্যাডেট কলেজ এবং হলি ল্যান্ড কলেজ, দিনাজপুর।
চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ॥ চট্টগ্রাম বোর্ড
উচ্চ মাধ্যমিকে এই বোর্ডে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতি বছরেই এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলে। একটি ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ এবং সরকারি কলেজ।
টানা পাঁচবছর ধরেই সবার আগে ফৌজদারহাট। এরপর সরকারি কলেজ। তবে জিপিএ-৫ এ গত বছরে পিছনে ফেলেছে সরকারি কলেজ।
জালালাবাদ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ ॥ সিলেট বোর্ড
ঢাকা বোর্ডকে যদি কোনো শিক্ষাবোর্ড পিছনে ফেলে থাকে তো সেটা সিলেট। আর ফলাফলের দিক দিয়ে, মানের দিক দিয়ে সিলেটের জালালাবাদ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশেই। প্রায় প্রতি বছরেই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ফলাফলের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকে।