এমন শিক্ষার্থী খুব কমই পাওয়া যায়, যারা ছোটবেলায় পরীক্ষায় খাতায় জীবনের লক্ষ্য রচনায় ডাক্তার হওয়া স্বপ্নের কথা লেখেনি। তার পর একের পর ক্লাস বদলাতে থাকে সাথে পরিবর্তন হতে থাকে জীবনের লক্ষ্যও। সময়ের সাথে সাথে এইচএসসি পরিক্ষাটিও শেষ, আর সেই ছোটবেলায় লেখা রচনার স্বপ্ন আছে বেশ।
ঈদের ছুটির কারণে মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা নির্ধারিত তারিখ থেকে এগিয়ে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর নেয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে আগামী ২ অক্টোবর এই পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। এসএসসি ও এইচএসসির ফল মিলিয়ে অন্তত ৮ জিপিএ থাকলে মেডিক্যালে ভর্তির আবেদন করা যাবে। এরপর পরীক্ষার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে। এমসিকিউ পদ্ধতিতে এক ঘণ্টার এই পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১২৬টি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। ২৯টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে আসন সংখ্যা ৩ হাজার ১৬২ জন। অন্যদিকে ৬৪টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে আসন ৫ হাজার ৩২৫টি। তাছাড়া সরকারি ৯টি ডেন্টাল কলেজে ৫৩২টি আসন রয়েছে। ২৪টি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে আসন ১ হাজার ২৮০টি।
প্রয়োজন অধ্যবসায়
কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে কঠিন এক পরীক্ষা, ভর্তিযুদ্ধ। ‘যুদ্ধ’ বিশেষণটি আক্ষরিক অর্থেই যেন প্রকাশ করে এই পরীক্ষাগুলোর মাহাত্ম্য। হাজার হাজার শিক্ষার্থী নিজের মেধা ও পরিশ্রমের সবটুকু ঢেলে এই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়। আর এর ফলাফলই ঠিক করে দেয়, একেক জনের ভবিষ্যৎ কর্মজীবন। কোনো ব্যতিক্রম না হলে সবসময়ই প্রথম দিকেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা। আগে শুধু সরকারি মেডিক্যাল আর ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য আলাদা দুটি পরীক্ষা নেয়া হলেও কয়েক বছর ধরে একটি পরীক্ষার মাধ্যমেই ভর্তিচ্ছু সব শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এখন চলছে কঠোর অধ্যবসায় সঠিক প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনে সঠিক দিকনির্দেশনা। তাই সারা জীবনের স্বপ্ন ও সাধনা যাদের মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করার, তারা সেই রচনার জন্য অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই পরিশ্রম ও অধ্যবসায় করতে হবে।
চাই প্রস্তুতি
ভর্তি-ইচ্ছুকদের প্রথমেই দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে হবে। হবে না, পারব না-এ ধরনের ভাবনা ভুলে গিয়ে নিজের সুবিধামতো প্রতিদিনের পরীক্ষা প্রস্তুতির একটি রুটিন করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের জন্য ১০০টি এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে। এর মধ্যে জীববিজ্ঞান (উদ্ভিদ+প্রাণী) = ৩০, রসায়ন (১ম+২য়) = ২৫, পদার্থবিজ্ঞান (১ম+২য়) = ২০, ইংরেজি = ১৫, সাধারণ জ্ঞান = ১০। ভর্তি পরীক্ষার সময় খুবই সীমিত, বিশেষ করে মেডিক্যাল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে। এদিকে সিলেবাস পাহাড়সম। তাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আগে নজর দিতে হবে। সময় হাতে থাকতেই ভালোভাবে শেষ করতে হবে সেসব বিষয়। বিশেষ করে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞানের মোট ৬টি বইয়ের খুঁটিনাটি মাথায় রাখাটা অত্যাবশ্যক।
বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা
সাধারণ জ্ঞান বই থেকে বাংলাদেশ বিষয়াবলি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি দেখে নিতে হবে। এ বইটির শেষে বিসিএস, পুলিশে ভর্তি, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ইত্যাদি যত প্রশ্ন আছে, সব মুখস্থ করে ফেলে তারপর ধীরে ধীরে এ বইয়ের অন্যান্য বিষয়ে চোখ বুলিয়ে নিতে হবে। অনেকে কোন্ স্যারের বই পড়বেন এ নিয়ে দ্বিধায় ভোগেন। এ নিয়ে দ্বিধা-বিভক্তির মধ্যে থেকে সময় নষ্ট করা যুক্তিহীন। বিশেষ করে এতে মনোযোগ নষ্ট হয়। তাই খোঁজখবর নিয়ে যে কোনো একটি বই মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
ইংরেজি গ্রামারে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে বিগত বছরগুলোর মেডিক্যাল ও ডেন্টাল প্রশ্নপত্র থেকে ইংরেজি প্রশ্নগুলো সমাধান করার পাশাপাশি ভালো কোনো গ্রামার বই থেকে ওই বিষয়গুলো আরও বিস্তারিত পড়তে হবে। পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও গাণিতিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বিগত দশ বছরের মেডিক্যাল এবং ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর মুখস্থ করতে হবে। প্রতিদিন ২০০ প্রশ্নের উত্তর গাইড বই দেখে দাগিয়ে সোজা মুখস্থ করে ফেলতে হবে এবং বিগত দশ বছরের এ প্রশ্ন সম্ভার বার বার রিভিশন দিতে হবে।