বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি এর ওপর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে ফের রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
এ ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত স্থগিত চেয়ে করা একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ২৪ আগস্ট এ রুল জারি করেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি জে এন দেব চৌধুরীর বেঞ্চ।
তিন সপ্তাহের মধ্যে অর্থ সচিব, শিক্ষা সচিব, এনবিআর সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আবেদনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।
১৯ আগস্ট আদালতে আবেদনটি দায়ের করেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আজিজুর রহমান খান, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বিবিএ’র শিক্ষার্থী এখলাসুর রহমান, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজির বিবিএ’র শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম খানসহ চার শিক্ষার্থী।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি এর ওপর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করে ৪ জুলাই এনবিআর প্রজ্ঞাপন জারি করে। এ প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি দায়ের করা হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর করারোপ করা হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর করারোপ করা হয়নি। এটা বৈষম্যমূলক।
এর আগে অন্য একটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে গত ৯ আগস্ট একই ধরনের রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ।
ওই আবেদনের বাদী ছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক খন্দকার দিদার-উস-সালাম, একই ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ছাত্র আরিফ মাহমুদ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র ফরহাদ হোসেন।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের উপর ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট কমানো হবে না বলে ১৪ আগস্ট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যে বক্তব্য রেখেছেন তার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও তার কুশপুত্তলিকা দাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নো ভ্যাট ফর এডুকেশন।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন নো ভ্যাট ফর এডুকেশন এর মুখপাত্র ফারুক আহমাদ আরিফ।
সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, জ্যোতির্ময় চক্রবর্তী, নাঈম ইসলাম, জয় বণিক প্রমুখ।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশের মোট শিক্ষার্থীর ৬৩ শতাংশ প্রাইভেট সেক্টরে পড়াশোনা করছে। তারা নিজের বাবা-মার অর্থ খরচ করে পড়ালেখা করে যাচ্ছে। সরকার এই শিক্ষার্থীদের উপর ভ্যাট আরোপ করে সবাইকে মূর্খতার যুগে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে চায়!
মুখপাত্র বলেন, অর্থমন্ত্রী ১৪ আগস্ট সিলেটে শিক্ষা খাতে ভ্যাট নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন তা শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষাবিদসহ দেশের আপামর জনসাধারণের সাথে উপহাসের সামিল। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগছে। তারা আজ এর প্রতিবাদে রাজপথে নেমে এসেছে।
দুই দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা বলেন, (১) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উপর আরোপিত ৭.৫% ভ্যাট প্রতাহারের দাবি (২) ২৩-২৭ আগস্ট পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী বরাবর ৭.৫% ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে (শিক্ষা হোক ভ্যাটমুক্ত/সবার জন্য উন্মুক্ত) ঝগঝ প্রেরণ, এবং প্রতিটি ক্যাম্পাসে টাকা জমা দেয়ার রসিদ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
মুখপাত্র বলেন, ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ২০ বছর মেয়াদি কৌশলপত্র গ্রহণ করে রীতিমত ঘোষণা করে যে, রাষ্ট্র তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে উচ্চশিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখি আইনত অলাভজনক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এ লাভজনক হয়েছে। তার ফলস্বরূপ সেই বছরই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ৪.৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। তার বিরুদ্ধেও শিক্ষার্থীরা এক ধরনের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দাবি আদায় করে এনেছিল।