বিশেষ খবর



Upcoming Event

অবশেষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাট প্রত্যাহার

ক্যাম্পাস ডেস্ক প্রতিবেদন
img

টানা কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও নগরজুড়ে নৈরাজ্যের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার কোনোমতেই শিক্ষাঙ্গনে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায় না এবং জনজীবনে অসুবিধাও সৃষ্টি করতে চায় না। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে সরকার ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উপর যে সাড়ে ৭ শতাংশ মূসক আরোপিত হয় সেটি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা তাদের আন্দোলন বন্ধ করে শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাবেন এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় কোনো বাধা সৃষ্টির সুযোগ দেবেন না বলেও বিজ্ঞপ্তিতে আশা প্রকাশ করা হয়।
এ সিদ্ধান্তে উল্লসিত শিক্ষার্থীরা ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়টিকে দেখছেন তাদের ‘ন্যায্য দাবির’ মুখে সরকারের ‘নতি স্বীকার’ হিসেবে।
ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন
গত জুনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেটে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওপর ‘সঙ্কুচিত মূল্যভিত্তিতে’ ১০ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে বাজেট পাস হওয়ার সময় ওই হার কমিয়ে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়।
১ জুলাই এনবিআর এ বিষয়ে এসআরও জারি করে, তাতে বলা হয়, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সেবার বিনিময়ে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থের শতকরা পঞ্চাশ ভাগের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে এই কর প্রযোজ্য হবে। এর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্যে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার রামপুরায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। সে সময় শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট ছোঁড়ার অভিযোগে পরদিন থেকে সারা দেশে ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দিনভর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক আটকে বিক্ষোভ করলে যানজটে কার্যত অচল হয়ে পড়ে রাজধানী। এই পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে একটি ব্যাখ্যা দেয়া হয়, যাতে বলা হয় ভ্যাটের অর্থ পরিশোধ করার দায়িত্ব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের, শিক্ষার্থীদের নয়।
বিদ্যমান টিউশন ফি’র মধ্যে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকায় টিউশন ফি বাড়ার কোনো সুযোগ নেই বলেও এতে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সরকারের ওই ব্যাখ্যা ভ্যাটের মৌলিক ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না- সে প্রশ্ন তোলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকপক্ষ এবং কর বিষয়ে অভিজ্ঞরা। তারা বলেন, যিনি ভোক্তা বা সেবা গ্রহণকারী, তিনিই ভ্যাট দেয়ার কথা। কিন্তু সরকারের ব্যাখ্যায় সেবা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বদলে সেবাদাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভ্যাট দিতে বলা হচ্ছে।
শিক্ষার মত মৌলিক অধিকার ভ্যাটের আওতায় আসতে পারে কি না- সে প্রশ্নও তোলেন অনেকে। এদিকে সরকারের আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ভ্যাট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেবে বলা হলেও ভবিষ্যতে বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ ও টিউশন ফির টাকা বাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকেই ওই ভ্যাট আদায় করে নেবে।
তাদের সেই শঙ্কার প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় খোদ অর্থমন্ত্রীর কথায়। তিনি বলেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ, আলটিমেটলি তাদের (শিক্ষার্থীদের) ওপর। এ বছর তারা (বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ) কিছু চার্জ করছে না। কিন্তু ভবিষ্যতে যখন ফিস নির্ধারণ করবে, এটা একটা হিসাব তারা নেবে।
এই পরিস্থিতিতে নতুন করে জটিলতা এড়াতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নিজেরাই ভ্যাট পরিশোধের ঘোষণা দেয়। আগামী তিন বছর টিউশন ফি না নেয়ারও আশ্বাস দেয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনারও দাবি জানানো হয় মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির পক্ষ থেকে।
ঘোষণা নিয়ে নাটকীয়তা আগের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৪ সেপ্টেম্বর সকালেও রামপুরা-বাড্ডা, গুলশান, উত্তরা ও কাকলিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মন্ত্রিসভার বৈঠক চলাকালে বেলা ১২টার দিকে ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসে। সেই খবরে আন্দোলনকারীদের অবস্থানে শুরু হয় উল্লাস।
ভ্যাট প্রত্যাহারের খবর শুনে, রামপুরা, উত্তরা ও গুলশানের অবরোধ তুলে নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে উৎসব শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সরকারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে আরও ঘণ্টা চারেক পর। মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে ডেকে ভ্যাটের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠক বসে। শেষ পর্যন্ত বিকাল ৪টার আগে ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণাটি আসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তির মধ্য দিয়ে। এরপর রাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাট প্রত্যাহার করে একটি বিশেষ আদেশ জারি করে এনবিআর, যা গত ৪ জুন থেকে কার্যকর বলে জানানো হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বলা হয়, যেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসমূহে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় হয় এবং যেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কর্তৃক প্রদত্ত সেবার উপর মূল্য সংযোজন কর আরোপ করি, শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার ব্যয় অধিকতর বৃদ্ধি পাবে।
সেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ধারা ১৪ এর উপধারা (২) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কর্তৃক প্রদত্ত সেবাকে মূল্য সংযোজন কর হইতে অব্যাহতি প্রদান করিল।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img