মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস ও ডেন্টাল কলেজের বিডিএস কোর্সের ২০১৫ সালের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন ৪৮ হাজার ৪৪৮ শিক্ষার্থী। মোট পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৮২ হাজার ৯৬৪ শিক্ষার্থী। এ বিবেচনায় ভর্তি পরীক্ষায় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ।
২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফল প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ তুলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলন করছে, তাদের বলবো, আগামী বছর পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ রয়েছে। এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করো।
ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ৩ হাজার ১৬২, ডেন্টাল কলেজের ৫৩২ এবং বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ৬ হাজার ও ডেন্টাল কলেজের ১ হাজার ৩৫৫ আসন মিলিয়ে এমবিবিএস-বিডিএস কোর্সে মোট আসন সংখ্যা ১১ হাজার ৪৯টি।
এ আসন দখলে এবার লড়েছিলেন ৮২ হাজার ৯৬৪ শিক্ষার্থী। লড়াইয়ে পাস করেছেন ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী অর্থাৎ ৪৮ হাজার ৪৪৮ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯৪ দশমিক ৭৫, আর সর্বনিম্ন প্রাপ্ত নম্বর ৭৭ দশমিক ৪০। গত বছরের তুলনায় এ বছরে পাসের হার অনেক বেশি বলেও জানানো হয় ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে।
মেধা তালিকা অনুসারে পর্যায়ক্রমে সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবেন পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীরা। ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার ছয়টিসহ সারাদেশের মোট ৪৪টি ভেন্যুতে একযোগে এমবিবিএস-বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশ্নপত্র ফাঁস বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (শিক্ষা) এ বি এম আবদুল হান্নান বলেন, পরীক্ষার পর প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তোলা অযৌক্তিক। পরীক্ষা সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ দীন মোঃ নুরুল হক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা প্রকল্প পরিচালক ড. সামন্ত লাল।
প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে ইউজিসি কর্মকর্তা ও জাবি ছাত্র!
মেডিক্যাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে র্যাবের হাতে আটক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সহকারী পরিচালক ওমর সিরাজকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে ইউজিসি।
এর আগে সকালে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকা থেকে ওমর সিরাজসহ তিন জনকে আটক করে র্যাব।
ইউজিসি’র উপ-সচিব (জনসংযোগ) মোঃ ওমর ফারুখ জানান, মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি সংক্রান্ত কোনো কাজে ইউজিসি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে কমিশনের সহকারী পরিচালক ওমর সিরাজ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ায় ইউজিসি’র চাকরি থেকে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
মেডিকেলে ভর্তি, কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগ পরীক্ষা ও সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার সাথে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন কন্ট্রোলারের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নাজিমও জড়িত।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সহকারী পরিচালক ওমর সিরাজের যোগসাজশে নাজিম এ ধরনের অপকর্ম চালায়। এরা সাধারণত মেডিক্যাল ভর্তির প্রশ্ন ১৫ লাখ, কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগের প্রশ্ন ৬ লাখ এবং সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র তৈরি করতে ১০ লাখ টাকা নিয়ে থাকে।
র্যাবের মিডিয়া উইং এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, নির্দিষ্ট তারিখে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর নাজিম টাকা নেয়া পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র আলাদা করে রাখেন। পরে আগে থেকে সংগ্রহে থাকা ব্লাঙ্ক উত্তরপত্রে প্রশ্নপত্রের সঠিক উত্তরপত্র তৈরি করে আবার অন্যান্য উত্তরপত্রের সাথে রেখে দেয়া হয়।
মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে আটককৃতদের মধ্যে একজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী, নাম ঈশান ইমতিয়াজ হৃদয় (২৩)। সংবাদ মাধ্যমে তার ছবি প্রকাশ হওয়ায় জানা গেছে তিনি জাবি’র আইন ও বিচার বিভাগের (৪১তম ব্যাচ) তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশিত হলে আটক হৃদয়কে চিহ্নিত করেন তার ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
হৃদয় বগুড়ার গকুল উপজেলার আব্দুল ওয়াহেদের ছেলে ও শহীদ সালাম-বরকত হলের আবাসিক ছাত্র। এর আগেও জাবি’র ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় তার বিরুদ্ধে ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছিলো। সেইময় হৃদয়কে প্রক্টর অফিসে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছিল।
র্যাবের মিডিয়া উইং পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি (হৃদয়) একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বলে দাবি করেন। তার বিরুদ্ধে শেরে-ই-বাংলা নগর থানায় মামলা হয়েছে। রিমান্ড নিলে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
জাবি আইন ও বিচার বিভাগের সভাপতি এ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, আটকের বিষয়টি আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক ও প্রক্টর প্রফেসর ড. তপন কুমার সাহা বলেন, বিষয়টি আমরাও শুনেছি। তবে বিস্তারিত কিছু জানি না। পুলিশ প্রশাসনও আমাদের কিছু জানায়নি।
প্রসঙ্গত, হৃদয় এর আগে জাবিতে ভর্তি হয়েছিল। পরে সে ভর্তি বাতিল করে চবিতে আইন বিভাগে অপেক্ষমান তালিকায় ভর্তি হতে যায়। কিন্তু সে সেখানে গিয়ে দেখে অপেক্ষমান তালিকা হতে আর শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না। পরে সে এলাকার কলেজে ডিগ্রি পার্স কোর্সে ভর্তি হয়।
কিছুদিন ডিগ্রিতে লেখা পড়া করা শেষে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার উদ্দেশ্যে নবম শ্রেণি হতে লেখা-পড়া শুরু করে। পুনরায় উচ্চমাধ্যমিক পড়া শেষে সে জাবিতে আইন বিভাগে ভর্তি হয়।
সে হলে বসে বিভিন্ন প্রকাশণীর গাইড-নোট লিখে দেয় বলে প্রক্টর অফিস জানায়। সে খুব দ্রুত সময়ে প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার উত্তর সমাধান করতে পারে বলেও ক্যাম্পাসে এ খবর প্রচলিত আছে।
উত্তীর্ণ হয়েও ভর্তির সুযোগ পাবে না ৩৭,৪০৯ জন
এবার ৪৮ হাজার ৪৪৮ জন শিক্ষার্থী পাস করলেও সবার জন্য সুখবর নেই। কারণ আসনসংখ্যা কম। তাই ৩৭ হাজার ৪০৯ জনই সুযোগ পাবে না ভর্তির। সরকারি মেডিক্যাল ডেন্টালে আসনসংখ্যা মাত্র তিন হাজার ৬৯৪। তাই মেধা তালিকার প্রথম দিকে থাকা শিক্ষার্থীরাই সেখানে ভর্তির সুযোগ পাবে। ৭৭.৪০ শতাংশ নম্বরের নিচে পাওয়া শিক্ষার্থীরা এবার সরকারি মেডিক্যাল-ডেন্টালে ভর্তির সুযোগ পাবে না। অন্যদিকে বেসরকারি মেডিক্যাল-ডেন্টালে যে সাত হাজার ৩৫৫ জন ভর্তির সুযোগ পাবে তাদের গুনতে হবে লাখ লাখ টাকা। এবার এখন পর্যন্ত ভর্তি নীতিমালা চূড়ান্ত না হলেও গতবার ভর্তি ফি ছিল ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর বাইরেও রয়েছে বেতনসহ আরো খরচ। সব মিলিয়ে একেকজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিক্যাল থেকে পাস করে বেরোতে খরচ করতে হয় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘেরাও করার হুমকি
মেডিক্যাল ভর্তিচ্ছু সকল শিক্ষার্থী ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে আবার পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানানো হয়। অন্যথায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি পালনেরও হুমকি দেয়া হয়।
কমিটির আহ্বায়ক হাসিবুল হোসেন বলেন, আমরা যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু কুচক্রী ও স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে আমাদের স্বপ্ন থেকে ছিটকে পড়তে হয়। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমরা কাঙ্খিত জায়গায় ভর্তি হতে পারছি না।
ফাঁসকৃত পরীক্ষায় ডাক্তার হলে, রোগী মরবে গণহারে
এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষার ফল বাতিলের দাবিতে দেশজুড়ে মেডিক্যাল কলেজগুলোর আশেপাশে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। ‘ফাঁসকৃত পরীক্ষায় ডাক্তার হলে, রোগী মরবে গণহারে’ সেøাগানসংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেয় শতাধিক শিক্ষার্থী। এমনকী মেডিক্যাল ভর্তির প্রথম দিনেও তাদের মেডিক্যাল কলেজগুলোর সামনে সেøাগান দিতে দেখা যায়। যদিও পুলিম তাদের সেখানে বেশিক্ষণ অবস্থান করতে দেয়নি।
ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া অনিরুদ্ধ দাশ বলেন, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ফাঁস হওয়া প্রশ্নে নেয়া পরীক্ষার পাতানো ফলাফল আমরা বাতিলের দাবি করছি।
এর আগে, ‘প্রশ্ন ফাঁসের’ অভিযোগে ভর্তি পরীক্ষার ফল বাতিলের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মেডিকেলে ভর্তিচ্ছুদের মানববন্ধনে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এ সময় সেখান থেকে ছয় শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।
২১ সেপ্টেম্বর কয়েকশ’ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করার চেষ্টা করেন।
শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, অনুমতি না থাকায় তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি তিনজনকে আটক করার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
কোচিং বাণিজ্য ও চিকিৎসক চক্রের বলি মেডিক্যাল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা
মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় প্রতিবারই কোচিং সেন্টারগুলোর সম্পৃক্ততা ধরা পড়ছে কোনো না কোনোভাবে। এতে জড়িত এক শ্রেণির চিকিৎসকও। তাঁরা ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা। সরকার মুখে প্রতিবারই ভর্তি পরীক্ষার আগে এসব কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে কথা বললেও স্থায়ীভাবে এ তৎপরতা বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। বিশেষজ্ঞরা জানান, এবারও কোচিং বাণিজ্য চক্রের বলি হয়েছে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ। এমন পরিস্থিতিতে ভর্তিবঞ্চিতরা আন্দোলনে নেমেছে। যাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায়ের সংগঠন। এ আন্দোলনে মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টারের ইন্ধন আছে। নতুন ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ১ অক্টোবর সারা দেশের আন্দোলনকারীরা ঢাকামুখী অভিযাত্রার ঘোষণা দিয়েছে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সহসভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে প্রতিবারই যেসব অপতৎপরতা চলে তা খুবই ন্যক্কারজনক। কোচিং বাণিজ্যে জড়িত একটি চক্র এসব তৎপরতায় লিপ্ত। এই চক্রকে নির্মূল করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে মনে হয়। সরকারের উচিত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া। আর যেসব ডাক্তার অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে আমরাও তা সমর্থন করব।’
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পরিচালক (স্বাস্থ্য শিক্ষা ও জনশক্তি) অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমরাও জানি মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষায় নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির মূলে থাকে কোচিং সেন্টার ও এক শ্রেণির অসাধু চিকিৎসক। আমরা এখন তাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। একই সঙ্গে কোচিং সেন্টারগুলোর কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’ ভর্তির সুযোগবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের নেপথ্যে কোচিং সেন্টারগুলোর ইন্ধন থাকতে পারে বলে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এ আন্দোলনের কোনো ফল মিলবে না। একটি চক্র তাদের পথে নামিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকাসহ সারা দেশেই প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপন দিয়ে, ব্যানার-ফেস্টুন ঝুলিয়ে আকৃষ্ট করা হয় ভর্তিচ্ছুদের। এসব কোচিং সেন্টারের সঙ্গে পেশাজীবী ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি চিকিৎসকদের একটি গ্রুপ জড়িত। এসব চিকিৎসক ও মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার আগেই ভর্তিচ্ছুদের বিশেষ ব্যবস্থায় পাস করিয়ে দেয়ারও আশ্বাস দেন। এর অংশ হিসেবে নিয়মিত কোচিং ফির বাইরে আলাদা করে টাকা নেয়া হয়।
২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিষ্কারভাবে কিছু না বললেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে। তাদের তরফে বলা হয়েছে, যে প্রশ্নপত্রের কপি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার পেয়েছে এর সঙ্গে প্রকৃত প্রশ্নপত্রের কোনো মিল নেই। অন্যদিকে ভর্তির সুযোগবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ১০ দিন ধরে। এর মধ্যে গত ২২ সেপ্টেম্বর রংপুরে অভিযান চালিয়ে সাতজনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ ও বরিশাল মেডিক্যাল কলেজের কয়েকজন শিক্ষকও প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আশ্বস্ত ও অসাধু চক্রকে সতর্ক করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রতিবছর পরীক্ষার আগে সতর্কবার্তা জারি করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, একটি চক্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে কৌশলে বায়োডাটা সংগ্রহ করে তাদের পিছু লাগে। চক্রটি নানা প্রলোভন দেখিয়ে অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যারা ভর্তির সুযোগ পায় তারা তা নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার বলেই অর্জন করে।
মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, গত বছর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন মেডিক্যালে কোচিং বাণিজ্য স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে তা কার্যকর করা হয়নি। চলতি বছরের শুরু থেকেই কোচিং চললেও পরীক্ষার মাত্র পাঁচ দিন আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে একযোগে গণমাধ্যমকে জানানো হয়, মেডিক্যালে ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলো ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, চিকিৎসা পেশায় ভর্তি জালিয়াতি বা অসৎ কিছু হলে সেটা খুবই উদ্বেগের ও দুঃখজনক।