বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক বিতরণে অর্থ দাবি করায় ঝালকাঠির একটি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
ঝালকাঠির নলসিটি উপজেলার তিমিরকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা দাবি করায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার এ নির্দেশ দেন তিনি। ১ জানুয়ারি সারা দেশে পাঠ্যপুস্তক উৎসবের দিন ওই স্কুলে বিনামূল্যের বই বিতরণের জন্য শিক্ষার্থী প্রতি ৩০০ টাকা দাবি করা হয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মুহ. সাইফুল্লাহ।
শিক্ষামন্ত্রীর কাছে খবর এলে তিনি ৪ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৩শ’ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের থেকে জোরপূর্বক ২শ’ টাকা নিয়ে বই বিতরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২ ডিসেম্বর গোদনাইলের ৮৯ নং তাঁত খানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্যরা ও প্রধান শিক্ষক এ ঘটনা ঘটায়। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এর প্রতিবাদ করলে তাদের সাথে অশোভন আচরণ ও শারীরিক নির্যাতন করে স্কুল থেকে বের করে দেয় পরিচালনা কমিটির সদস্য গাজী সেলিম আহমেদ। এ ঘটনায় অনেক কোমলমতি শিক্ষার্থী বই না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে স্কুল থেকে চলে যায়।
পরে স্কুলের বাইরে অভিভাবকরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করলে এলাকাবাসী ও গণমাধ্যম কর্মীদের চাপে কিছু শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরৎ দিয়ে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়।
যারা টাকা দিতে অস্বীকার করে তাদের বই না দিয়ে জোরপূর্বক স্কুল থেকে বের করে দেয় তারা। এ ঘটনায় অভিভাবকরা প্রতিবাদ করলে তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে পরিচালনা কমিটির সদস্য গাজী সেলিম আহমেদ ও মাহাবুব।
এ ব্যাপারে অভিভাবক মো. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, আমার মেয়ে ৪র্থ শ্রেণিতে ভর্তি হতে আসলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য গাজী সেলিম নতুন বই বাবদ ২শ’ টাকা চায়। প্রতিবাদ করলে অন্য স্কুলে ভর্তি করাতে বলে।
ময়না আক্তার নামে আরেক অভিভাবক বলেন, গাজী সেলিম সহ অন্যান্য সদস্যরা আমার ছেলেকে ভর্তি করাতে ২শ’ টাকা চায়। এ সময় ১শ’ টাকা দিলে গাজী সেলিম আমাকে স্কুল থেকে বের হয়ে যেতে বলে। তিনি বলেন, ২-৩ মাস পর পর বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ২০/৩০ টাকা করে নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। আবুল হোসেন নামে আরেক অভিভাবক বলেন, সকালে ১শ’ ৫০ টাকা দিয়ে আমার নাতিকে স্কুলে পাঠাই। কিন্তু তারা বই না দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এম এ বারি বলেন, আমি গাজীকে বলেছিলাম ২ মাস পর টাকা নিতে। সে কোনো কথা না শুনে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ২শ’ টাকা নিচ্ছে। তিনি বলেন, এ টাকায় বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও শিক্ষকদের বেতন দেয়া হবে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রইসউদ্দিন বলেন, সরকারের নিয়ম মেনে শুক্রবার থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ করছি। তাহলে কেন এ টাকা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ভাল জানে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা চৌধুরী বলেন, বিষয়টি জেনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা মাহফুজা আক্তার বলেন, বিষয়টি তার গোচরে এসেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৩ ডিসেম্বর ঘটনাস্থলে সরেজমিনে যাবেন বলে জানান তিনি।