বিশেষ খবর



Upcoming Event

নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করলেন নোবিপ্রবি’র শিক্ষক ড. বেলাল

ক্যাম্পাস ডেস্ক বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি
img

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন আবিষ্কার করেছেন নতুন প্রজাতির অমেরুদণ্ডী প্রাণী।
নতুন আবিষ্কৃত পলিকীট গবেষক ড. বেলাল জানান, দেশের উপকুলীয় এলাকা থেকে নতুন প্রজাতির অমেরুদণ্ডী প্রাণীর সন্ধান পেয়েছেন গবেষকেরা। ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন ও Australian Museum এর পলিকীট বিজ্ঞানী ড. প্যাট হ্যাচিংস এই প্রজাতির সন্ধান পান।
কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কেন্দুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রথিতযশা বিজ্ঞানী ড. মোঃ বেলাল হোসেন। তার পিতার নাম আব্দুস সোবহান ভূঁইয়া। ২ ভাই ১ বোনের মধ্যে তিনিই বড়।
গ্রামের প্রাইমারি থেকে শুরু হয় এই বিজ্ঞানীর যাত্রা। গুণবতী হাইস্কুল থেকে পাস করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। অনার্স পাস করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স থেকে ২০০১ সালে ১ম বিভাগে। মাস্টার্স করেন Estuarine and coastal science বিষয়ে Hull University ( HULL, UK) থেকে ২০০৫ সালে।
পিএইচডি করেন Macroinvertebrate community structure and function in the Brunei estuarine system: The effects of acidification , Universiti Brunei Darussalam (Brunei) বিষয়ে Australian Museum Research Institute (Sydney, Australia) থেকে। পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ করেন Nephtys bangladeshi থেকে।
বাংলাদেশের নোয়াখালী উপকূলীয় অঞ্চলে সন্ধান পাওয়া নতুন এই প্রজাতির নাম দেয়া হয়েছে Nephtys bangladeshi. সাদা বর্ণের Cylindrical আকৃতির আবিষ্কৃত পলিকীটের দৈঘ্য ১১-১৯ মি.মি. এবং প্রস্থ ০.৮-১ মি.মি.। এটির অন্যতম সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হলো এর গলবিলে ৯ জোড়া প্রান্তীয় ও ১৪ সারি উপ-প্রান্তীয় প্যাপিলা থাকে এছাড়া দেহের ৭-২৭ খন্ডে ব্রাঙ্কিয়া থাকে।
পলিকীটের নতুন একটি প্রজাতিটি সাধারণত লবণাক্ত জলাশয়ের তলদেশের মাটিতে বসবাসকারী এই প্রাণী মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বারোয়িং এর মাধ্যমে নদী বা সমুদ্রের তলদেশের নিউট্রিয়েন্সেটস ও অক্সিজেন আদান-প্রদান করে উপকূলীয় জলাশয় ও সমুদ্রের উর্বরতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখে থাকে।
প্রাণীজগতে এনিলিডা পর্বের অন্তর্গত পলিকীটের দেহে অসংখ্য চুল থাকায় এরা Bristle বা beard worms নামে পরিচিত। এই প্রাণীর গ্রুপ নিয়ে গত প্রায় দুইশত বছর ধরে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে গবেষণা হলেও এই পর্যন্ত বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকা থেকে নতুন কোনো প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়নি। তাই এই প্রজাতির নামকরণ বাংলাদেশের নামানুসারে Nephtys bangladeshi করা হয়।
যেভাবে আবিষ্কার
গবেষক দলের অন্যতম নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. বেলাল জানান, পলিকীট জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা করার জন্য ২০১৫ সালের মে মাসে Australian Museum Research Institute, Sydney তে পোস্ট ডক্টরাল গবেষক হিসেবে আমন্ত্রিত হন তিনি। গবেষণার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের নোয়াখালী উপকুলীয় অঞ্চল থেকে সংগৃহীত কিছু পলিকীট নমূনা সনাক্ত করতে গিয়ে দেখতে পান সদ্য আবিষ্কৃত প্রজাতিটি বৈশিষ্টের দিক থেকে Nephtys গণভূক্ত অন্যান্য স্বীকৃত ৯৮টি প্রজাতি থেকে আলাদা।
Australian Museum এ সংরক্ষিত এই গণভূক্ত আরো বেশ কিছু নমূনার সাথেও তূলনা করা হয়। চূড়ান্তভাবে নতুন প্রজাতি হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অত্যাধুনিক Scanning Electron Microscope (SEM) প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয়। পরে ড. প্যাট হ্যাচিংসসহ এই প্রজাতিটির স্বীকৃতি লাভের জন্য গবেষণার ফলাফল নিউজিল্যান্ড থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক Taxonomic জার্নাল Zootaxa তে পাঠানো হয়।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি Nephtys bangladeshi n.sp., a new species of Nephtyidae (Annelida: Phyllodocida) form Bangladesh coastal waters শিরোনামে প্রকাশিত হয়। একই দিনে বিশ্ব স্বীকৃত ডাটাবেইজ Zoobank I WORMS ( World Register for Marine Species) এ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে প্রজাতিটি নতুন হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে।
ড. বেলাল জানান, এই পর্যন্ত পৃথিবী থেকে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পলিকীট আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু এই পর্যন্ত প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২৯ প্রজাতির তালিকা পাওয়া যায়। আমাদের উপকূলীয় সামুদ্রিক অঞ্চল অত্যন্ত জীববৈচিত্র্যপূর্ণ। অপ্রতুল গবেষণার জন্য আমরা এখনও আমাদের জীববৈচিত্রের সম্পূর্ণ তালিকা তৈরি করতে পারিনি।
ড. বেলাল আরো জানান, এই অঞ্চলে প্রায় দুইশত বছর এ বিষয়ে গবেষণা চলছে। কিন্তু কেউ কোনো প্রজাতি আবিষ্কার করতে পারেনি যা আমরা পেরেছি। এই অর্জন শুধু আমার নয়, পুরো বাংলাদেশের।
জানা যায়, এই সফলতার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো অভিনন্দন না জানানো হলেও নিজ বিভাগ ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়।
তার সহধর্মিণী শারমিন রহমান অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। তার একমাত্র কন্যা সালমা আফিয়া হোসাইন অস্ট্রেলিয়ায় ক্লাস ওয়ানে পড়ছে।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img