ফ্রি ওয়ার্কশপ অন ডিজিটাল সোসাইটি
সমাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক আলোকিত জাতি গঠনে ক্যাম্পাস দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি পরিচালনা করছে। অনুরূপ একটি কর্মসূচি হচ্ছে ‘রেগুলার ফ্রি ওয়ার্কশপ অন ডিজিটাল সোসাইটি’।
বিগত ৭ বছর থেকে ক্যাম্পাস নিয়মিতভাবে ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিং দিয়ে আসছে, তৈরি করছে ডিজিটাল ইয়াং-স্টার। সে ধারাবাহিকতায় ক্যাম্পাস’র সম্প্রসারিত কর্মসূচি হচ্ছে ফ্রি ওয়ার্কশপ অন ডিজিটাল সোসাইটি।
বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের মাধ্যমে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শব্দ রাতারাতি সকলের পরিচিত হয়ে ওঠে। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ কি, কেন, কিভাবে সে সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা স্বচ্ছ নয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বা ডিজিটাল সোসাইটি কি, কেন, কিভাবে গঠন করা সম্ভব, তাছাড়া সমাজ বা রাষ্ট্র এ থেকে কিভাবে উপকৃত হবে, ডিজিটাল সোসাইটি গঠনে কার কি করণীয় এসব বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতেই ক্যাম্পাস’র এ ওয়ার্কশপ। ছাত্র-যুবকরা বিনা পয়সায় এ ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
বিজয় বাংলা কি-বোর্ডের জনক, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জনাব মোস্তাফা জব্বার এ সেমিনারে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকেন। মডারেটরের ভূমিকায় থাকেন ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র -এর মহাসচিব এম হেলাল।
ডিজিটাল সোসাইটি হচ্ছে সুখী-সমৃদ্ধ-শিক্ষিত এবং দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ, যার মুখ্য চালিকা শক্তি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি; এটি বাঙালির উন্নত জীবনের আকাক্সক্ষা; মানুষের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর প্রকৃষ্ট পন্থা; একাত্তরের স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপকল্প। এটি স্বল্পোন্নত বা দরিদ্র বাংলাদেশ থেকে সমৃদ্ধ ও ধনী দেশে রূপান্তরের জন্য মাথাপিছু আয় বা জাতীয় আয় বাড়ানোর অঙ্গীকার।
ডিজিটাল সোসাইটির লক্ষ্য হবে সমাজের প্রতিটি বাসিন্দার কাছে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে সর্বপ্রকার ডিজিটাল প্রযুক্তি সহজলভ্য করা, এর সর্বোত্তম লাগসই ব্যবহার নিশ্চিত করা। এসবের মাধ্যমেই স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব।
বর্তমান সরকারি ব্যবস্থায় কাগজপত্রে লিখে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে অন্ততঃ ৪২টি স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়। স্বল্পশিক্ষিত কেরানীর লিখিত নোট ওপরে উঠতে উঠতে সচিব-মন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছায়, কোন কোন ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির কাছেও ফাইল যায়। সিদ্ধান্ত হয়ে ফাইল ওপর থেকে আবার নিচে নামতে পুনরায় ঐসব ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এতে সময় লাগে অগনিত ও বেহিসেবী, কোন কোন ক্ষেত্রে বছরের পর বছর। সরকারের সব তথ্য থাকে কাগজে। ডিজিটাল সিস্টেম হলে ফাইল আটকানোর সুযোগ থাকবে না, দেখা যাবে না লাল ফিতার দৌরাত্ম্য। সরকারের সকল তথ্য থাকবে কাগজবিহীন। সরকারের নিজস্ব নেটওয়ার্ক থাকবে। এ ধারার সাথে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ যুক্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের কোটি মানুষকেও যুক্ত হতে হবে। আর তাই ক্যাম্পাস এ ফ্রি ওয়ার্কশপের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি এবং তা বাস্তবে প্রয়োগের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
ডিজিটাল সোসাইটি ও ডিজিটাল সিস্টেম গড়ে তোলার মাধ্যমে সমাজ থেকে ঘুষ-দুর্নীতি দূর করাও ক্যাম্পাস’র এ সেমিনার আয়োজনের আরেকটি উদ্দেশ্য। বর্তমানে Signature বা স্বাক্ষরের বেশ দাম। একটি স্বাক্ষরের জন্য অনেক সময়েই কাড়ি কাড়ি নজরানা দিতে হয়। কিন্তু ডিজিটাল ব্যবস্থায় এ স্বাক্ষর মূল্যহীন হয়ে পড়বে। ডিজিটাল হলে জনপ্রতিনিধি এমপিকে পাওয়া যাবে নেটওয়ার্কে, তার কাজের সমালোচনাও করা যাবে। নির্বাচনের পর আর নেতার দেখা পাওয়া যায় না বলে মানুষের মনে এখন যে ক্ষোভ রয়েছে তা আর থাকবে না।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ডিজিটাল পদ্ধতির উপযোগিতা অপরিসীম। একজন অপরাধী এক থানা বা এলাকায় অপরাধ করে, মামলা হয়; কিন্তু অপরাধী ধরা পড়ে অন্য থানায়। অথচ এসব থানার রেকর্ডপত্রের সমন্বয় নেই। এজন্য দেখা যায় এক অপরাধী এ থানা থেকে জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসছে, অন্যদিকে অন্য থানায় সে মার্ডার কেসের আসামী। সে দিব্যি ছাড়া পেয়ে গেল রেকর্ডপত্র না থাকার কারণে। ডিজিটাল সোসাইটি হলে এ ধরনের সুযোগ থাকবে না।
বতর্মান যুগে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট তথা তথ্য-প্রযুক্তির জ্ঞান জীবন বদলে দিতে পারে। ছাত্র-যুবকরা আধুনিক বাংলাদেশের সৈনিক, তাদেরকে শিক্ষিত ও আলোকিত হয়ে উঠতে হবে, নিজেদেরকে ডিজিটাল সোসাইটির সদস্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর সে কাজটিই ক্যাম্পাস করে যাচ্ছে নিরবচ্ছিন্নভাবে।
সুখী, সমৃদ্ধ জাতি গঠনের আন্দোলনই ডিজিটাল বাংলাদেশ। আধুনিক পৃথিবী যেখানে থাকবে, আমিও সেখানে থাকবো এ হবে সকলের চেতনা। উপযুক্ত মানুষ তৈরি করা ছাড়া এখন আর কোন বিকল্প নেই।
দুর্নীতিতে সয়লাব বর্তমান সমাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বড়ই প্রয়োজন; প্রয়োজন সকলের জন্য সুশাসন নিশ্চিত করা; আর এসবের জন্য প্রয়োজন তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার। দক্ষতা ও স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে ডিজিটাল সোসাইটি, গড়ে উঠবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ -এই ক্যাম্পাস’র কামনা এবং সে লক্ষ্যেই ক্যাম্পাস আয়োজন করে আসছে এরূপ ফ্রি ওয়ার্কশপ ও সেমিনার।