ফ্রি জয়েন্ট মেডিটেশন
উচ্ছল-উজ্জ্বল ও আত্মবিশ্বাসী জাতি গড়ে তুলতে ক্যাম্পাস’র নিয়মিত কর্মসূচি ফ্রি জয়েন্ট মেডিটেশন। ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনের লক্ষ্যে ক্যাম্পাস’র এ কর্মসূচি দীর্ঘদিন থেকে বিনামূল্যে পরিচালিত হয়ে আসছে। আলোকিত মানুষ গড়ার নিরন্তর প্রয়াস হিসেবে ক্যাম্পাস পরিচালিত বিনামূল্যে ধ্যান কর্মসূচি জনমনকে উদ্দীপ্ত করেছে। প্রতি মাসের ১ম ও ৩য় শনিবার বিকাল ৪-৩০ মিনিটে ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে এ সেশন অনুষ্ঠিত হয়।
জন্মের পর থেকেই পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ থেকে বিভিন্ন নেতিবাচক ও খারাপ চিন্তায় ভরে যায় মানব-মস্তিস্ক। পরিণত বয়সে এসে এসব খারাপ চিন্তা বাদ দিতে চাইলেও সেসবের প্রভাব কাটানো সহজসাধ্য হয় না, যা আলোকিত মানুষ তৈরি তথা ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার পথে অন্তরায়। কম্পিউটার প্রোগ্রামের মতই ধ্যানের মাধ্যমে মস্তিষ্ক থেকে খারাপ চিন্তা বাদ (delete) দেয়া এবং ভাল চিন্তা সংযোজন (insert) করা খুবই সহজ। তাই সুস্থ, সবল, ভারসাম্যপূর্ণ, নীতিবান, সৎ ও সৃজনশীল মানুষ তৈরির লক্ষ্যে ২০০৩ সাল থেকে বিনামূল্যে ধ্যান কর্মসূচি নিয়মিত পরিচালনা করে আসছে ক্যাম্পাস।
ক্যাম্পাস আয়োজিত মেডিটেশন প্রোগ্রামে আত্মনিয়ন্ত্রণ, আত্মশুদ্ধি, বিভিন্ন সমস্যা সমাধানসহ দৈনন্দিন জীবনের নানা প্রয়োজনীয় বিষয়ে চর্চা করা হয়; যেমন শারীরিক-মানসিক ও আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি অর্জন, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, দুশ্চিন্তা ও মাথাব্যথা দূর করা, রোগ মুক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, কোন লক্ষ্যে পৌঁছানোর উপায়লাভ, প্রতিকূল পরিবেশ বা বৈরী প্রভাব ও আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক-পারিবারিক-সামাজিক সুসম্পর্ক বৃদ্ধি, অপছন্দনীয় ও অসহনীয় খাদ্য উপভোগ, শরীরের ভিতরের ও বাহিরের শিথিলায়ন, আধ্যাত্মিক মনের সেতু তৈরি, নেতিবাচক অতীত বর্জন এবং ভবিষ্যত সাফল্যের পরিকল্পনা, স্বপ্নে সিদ্ধিলাভ, রোগমুক্তির জন্য শরীরের ভিতরে ল্যাবরেটরী তৈরি, তিন আঙ্গুলের কৌশল, পিরামিড ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের-পরিবার-পরিজন ও মূল্যবান সামগ্রীর সুরক্ষা প্রভৃতি। এভাবে আত্মরক্ষা, আত্ম-উন্নয়ন ও সমাজ উন্নয়নে মেডিটেশনের কোন বিকল্প নেই।
মননিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির গবেষক এ কে এম হাসানের সুনিপুণ উপস্থাপনায় এবং ক্যাম্পাস গবেষণা সেল’র তত্ত্বাবধানে মেডিটেশনের বিভিন্ন বিষয় ও কৌশলের ওপর ৪টি সিডি ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে, যার অরিজিনাল কপি ক্যাম্পাস কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করা যায়।
ফ্রি জয়েন্ট মেডিটেশন নীতিমালা
১। প্রতিমাসের ১ম ও ৩য় শনিবার অর্থাৎ মাসে দু’বার ফ্রি জয়েন্ট মেডিটেশন বা যৌথধ্যান অনুষ্ঠিত হয়। মাসের ২য় শনিবার একই সময়ে আকুপ্রেশার এবং ৪র্থ শনিবার ইয়োগা অনুষ্ঠিত হয়। তবে কোন মাসে ৫ম শনিবার থাকলে সে শনিবারে জয়েন্ট মেডিটেশন বা যৌথধ্যান অনুষ্ঠিত হয়।
২। মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অপরাহ্ন ৪-৩০ মিনিটে এবং নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ শীত মৌসুমে ৪টায় ধ্যান শুরু হয়; সেশন চলে মোটামুটি ২ ঘন্টা। রমজান মাসে ১২টায় মেডিটেশন শুরু হয়।
৩। প্রতি সেশনে ৩/৪টি এক্সারসাইজ বা অনুশীলন থাকে। প্রতিটি এক্সারসাইজের পর Review of last exercise Ges Preview of next exercise এর জন্য ৫-৬ মিনিট সময় থাকে (ধ্যানকালীন কোন অনুভূতির প্রকাশ বা অসুবিধার বিষয়ে কোন জিজ্ঞাসা বা প্রশ্ন থাকলে তা এ সময়ে করা যায়)।
৪। সাধারণত ২টি অনুশীলনের পর আপ্যায়ন ও আসরের নামাজের জন্য ১৫/২০ মিনিট বিরতি থাকে।
৫। ধ্যান কি, কেন, কিভাবে করতে হয় এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও গবেষণালব্ধ বিভিন্ন বিষয়ে নতুন অংশগ্রহণকারীদের ধারণা দেবার জন্য প্রতি মাসের প্রথম শনিবার যৌথধ্যানের জন্য উপরোল্লিখিত নির্ধারিত সময়ের আধাঘন্টা পূর্বে ইনট্রোডাক্টরি ব্রিফিং থাকে। কোন কারণে নির্ধারিত শনিবারে তা না হলে এর পরবর্তী সেশনের দিন সে ব্রিফিং হয়।
৬। এক্সারসাইজ শুরুর পূর্বেই অংশগ্রহণকারীকে অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হতে হয়। এক্সারসাইজের শুরুতে উপস্থিত হতে অপারগ হলে চলমান এক্সারসাইজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সোফায় অপেক্ষা করা অথবা সোফায় বসে এক্সারসাইজের সাথে নিজকে একাত্ম করার সুযোগ রয়েছে। তাই বিলম্বে আগতকে অনুশীলন চলাকালীন মাঝখান থেকে অংশগ্রহণ না করে পরবর্তী এক্সারসাইজের শুরু থেকে অংশগ্রহণ করতে হয়।
মেডিটেশনরতদের অসুবিধা বা disturbance -এর কথা বিবেচনা করে এক্সারসাইজ চলাকালীন সময়ে হাঁটাচলা-নড়াচড়া বা শব্দ করার ক্ষেত্রে সবাইকে সংযত থাকতে হয়। আপনার মেডিটেশনে অন্যের disturbance যেরূপ আপনি কামনা করেন না, সেরূপ অন্যরাও তাদের মেডিটেশনকালীন আপনার কাছ থেকে disturbance কামনা করেন না।
৭। মেডিটেশন-সেশনে অংশগ্রহণের পূর্বে অবশ্যই অবশ্যই মোবাইল ফোন বন্ধ অথবা সাইলেন্ট করতে হয়।
৮। ছোট শিশু নিয়ে যৌথধ্যানে আসা যায় না। বিশেষ করে যেসব শিশু অন্যের মেডিটেশনে বিঘ্ন ঘটানো বা disturbance -এর কারণ হতে পারে, সেরূপ শিশুকে আনা যায় না। তবে ১০ বছরের বেশি বয়সীদের বিশেষ বিবেচনায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া যেতে পারে।
৯। জয়েন্ট মেডিটেশন বিনামূল্যে পরিচালিত হলেও অংশগ্রহণকারীর আপ্যায়ন খরচ বাবদ তাকে ৩০ টাকা করে দিতে হয়। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ১০ টাকা দিলেও চলবে। তবে দরিদ্র কেউ টাকা দিতে অসমর্থ হলে তার কাছ থেকে কোন টাকা নেয়া হয় না।
১০। উপরোক্ত নিয়মাবলী পড়ে, বুঝে এবং তা পালনের অঙ্গীকারে ক্যাম্পাস’র যৌথধ্যানে অংশগ্রহণের বিনীত অনুরোধ রইল। নতুন অংশগ্রহণকারী কর্তৃক নিয়মাবলী পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ধ্যান সমন্বয়কারীর প্রতি অনুরোধ থাকল।
ক্যাম্পাস আয়োজিত ধ্যান কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজকে উন্নততর মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশসেবা ও মানবসেবায় অংশগ্রহণে প্রয়াসী হবার জন্য ধন্যবাদ।
নিজে ধ্যান করুন, অন্যকে ধ্যানচর্চায় উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করুন।