ফ্রি সেমিনার অন প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড

সফল ও জনপ্রিয় মানুষের প্রথম গুণ ‘প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড’ এ শ্লোগানকে উপজীব্য করে দক্ষ ও নিষ্ঠাবান প্রোএকটিভ জাতি গড়ে তুলতে ক্যাম্পাস নিয়মিত আয়োজন করছে রেগুলার ফ্রি সেমিনার অন প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড। বাংলাদেশে প্রোএকটিভ এটিচিউড কনসেপ্টের প্রবক্তা, গবেষক ও সুনিপুণ উপস্থাপক ড. আলমাসুর রহমান এ সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকেন। মডারেটরের ভূমিকায় থাকেন ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এম হেলাল।
‘প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড’, এর অর্থ হলো যে কোন পরিস্থিতি বা অবস্থায় উত্তেজিত অথবা আবেগতাড়িত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা; অন্যকথায় যেকোন নেতিবাচক বিষয় বা ঘটনাকে সহজভাবে নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিতে তা মোকাবেলার মনোভাব। তাই সমাজে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির মাধ্যমে মানুষের ধৈর্য্য, শৃঙ্খলা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি এবং মানুষকে আত্মোন্নয়নে সহযোগিতা করাই ক্যাম্পাস আয়োজিত এ ফ্রি সেমিনারের লক্ষ্য।
আত্মোন্নয়নমূলক এ সেমিনারে ছাত্র-যুবকরা বিনা খরচায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের চিন্তা-চেতনা পরিবর্তনের সুযোগ পায়, অবিরাম সাফল্যের ধারায় বদলে ফেলে তাদের জীবন। আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় ছাত্র-যুবকরা জানতে পারে কিভাবে প্রোএকটিভ মানুষরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে এবং করছে।
এ সেমিনারের মাধ্যমে শেখানো হয়, সফল ও জনপ্রিয় মানুষ হতে হলে নিম্নোক্ত ৭টি গুণ থাকা প্রয়োজন।
৭। নিজে নিজে রিসার্চ করা অর্থাৎ জ্ঞানের পরিধি বাড়ানো;
৬। একাকী নয়, সবাইকে নিয়ে কাজ করার বা বড় হবার উদার মনোভাব থাকা; অন্যের সাথে সামঞ্জস্য বা সধঃপয করার ক্ষমতা অর্জন;
৫। নিজেই শুধু বলব না, অন্যের কথাও শুনবো; বরং অন্যের কথা বেশি শুনবো -এ নীতিতে বিশ্বাসী হওয়া;
৪। আমি জিতবো, কিন্তু তুমি হারবে না। অর্থাৎ আমিও জিতবো, তুমিও জিতবে -এ মনোভাব পোষণ করা;
৩। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করার অভ্যাস;
২। লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করার ক্ষমতা;
১। ১ম গুণ অর্থাৎ সবচেয়ে বড় গুণ Proactive & Positive Attitude.
এ সেমিনারের মাধ্যমে ছাত্র-যুবকদের আরো শেখানো হয়, কিভাবে ইতিবাচক চিন্তার প্রসার ঘটানো সম্ভব। কথায় আছে “চিন্তা যখন বীজ, কাজ তখন ফসল; কাজ যখন বীজ, অভ্যাস তখন ফসল; অভ্যাস যখন বীজ, চরিত্র তখন ফসল; চরিত্র যখন বীজ, গন্তব্য তখন ফসল।” অর্থাৎ চিন্তা যেমন হবে কাজ হবে তেমনি; কাজ অভ্যাসে পরিণত হয়, সেই অভ্যাসই পরিণত হয় চরিত্রে। আর ঐ চরিত্র মানুষকে নিয়ে যায় গন্তব্যে।
সুতরাং আদর্শ মানুষ তথা সফল ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে চাইলে চিন্তাকে ঠিক করতে হবে, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে ইতিবাচক অভ্যাসকে আদর্শ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ, ক্যাম্পাস বিশ্বাস করে অভ্যাসের সমষ্টি মিলেই ব্যক্তি-চরিত্র; একজন মানুষ তা-ই, যা সে চিন্তা করে। চিন্তাই অভ্যাসের অভিব্যক্তি।
প্রোএকটিভ সেমিনারের মধ্য দিয়ে ছাত্র-যুবকদের মানুষ হবার শিক্ষা দেয় ক্যাম্পাস। কেননা মানুষকে মানুষ হতে হয় অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, অনেক সাধনা করে। যে মানুষের মধ্যে যতবেশি মানবিক গুণের সমাবেশ ঘটে, সে তত বড় মানুষ। নম্রতা, ভদ্রতা, দয়া-মায়া, সৌন্দর্যবোধ মানুষকে উন্নততর মানুষে রূপান্তরিত করে।
জীবনে সফল হতে হলে ধৈর্য্য থাকতে হয়, হতে হয় মাটির মত। এ সেমিনারে অংশগ্রহণ করে ছাত্র-তরুণরা অনুভব করে মাটির গুণ। বিধাতা মানুষকে মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন। মানুষ সৃষ্টির সেরা; অথচ স্রষ্টা তাকে মাটি দিয়ে তৈরি করলেন। এর কারণ হলো- মাটির মধ্যে রয়েছে সব সেরা গুণ। সব ময়লা-আবর্জনা মাটি টেনে নেয়, পরিষ্কার করে; পাহাড়-পর্বত ধারণ ক’রে ভূমি রক্ষা করে; উজাড় করে দেয় বুকের ভেতরকার মূল্যবান খনিজ সম্পদ। মাটি অগ্নিগিরিকে যেমন লালন করে তেমনি ধরে রাখে সাগরকে। তাই মানুষের আদর্শ হবে আমরা মাটির মানুষ হবো, মাটির মত সব কিছু সহ্য করবো, লালন করবো, বিলিয়ে দেবো।
খারাপ অভ্যাসের স্থলে ভাল অভ্যাস প্রতিস্থাপন করতে শেখানো ক্যাম্পাস’র এ সেমিনারের আরেকটি লক্ষ্য। গত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার মানুষ তার খারাপ অভ্যাসের স্থলে ভাল অভ্যাস প্রতিস্থাপন করতে শিখেছে। আর এজন্য প্রয়োজন প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড ধারণ করা। ক্যাম্পাস বিশ্বাস করে, ইচ্ছা করলে অন্য মানুষকেও পরিবর্তন করা যায়। যুক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, আবেগ দিয়ে অন্যের বদঅভ্যাস পরিবর্তন করা যায় না। কারণ আমরা প্রত্যেকেই আমাদের পরিবর্তনের দরজা বন্ধ করে রেখেছি অর্থাৎ পরিবর্তনের দরজাটি ভেতর দিয়ে বন্ধ। যেহেতু ভেতর দিয়ে বন্ধ, তাই বাহির থেকে কেউ তা খুলতে পারে না। সুতরাং কেউ ইচ্ছা করলেও অন্যের পরিবর্তনের দরজাটি খুলতে পারবে না যদি অভ্যাস পরিবর্তনে আগ্রহী ব্যক্তি ভেতর দিয়ে দরজাটি খুলে না দেয়। মানে দাঁড়াচ্ছে এই যে, ইতিবাচক অভ্যাস চর্চা করে যেকোন ব্যক্তি ইতিবাচক মানুষে রূপান্তরিত হতে পারে। হতাশাগ্রস্ত ছাত্র-যুবক, ক্ষয়িষ্ণু সমাজ ও পশ্চাৎপদ জাতিকে তাদের চিন্তা-ভাবনার পরিবর্তন করে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে ক্যাম্পাস’র এ সেমিনার। যুব সমাজকে সর্বদা ইতিবাচক মনোভাবে চাঙ্গা রাখা ও সকল ক্ষেত্রে সফলতার জন্যই ক্যাম্পাস এ উদ্যোগ নিয়েছে এবং বিনা পয়সায় ছাত্র-যুবকদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পাস’র নিজস্ব অডিটোরিয়ামে আয়োজিত হয় এ সেমিনার। তাছাড়া ক্যাম্পাস’র উদ্যোগে ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে এরূপ সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে এ কর্মসূচির সম্প্রসারণ হয়েছে।