ক্যাম্পাস আয়োজিত ফ্রি সেমিনার অন প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড

মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকাও ভালো, অবিশ্বাস করে জেতার চেয়ে

সমাজে নৈরাশ্যবাদী এবং রি-একটিভ মানুষের ছড়াছড়ি। প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং এবং গাইডেন্সের অভাবে আমাদের ছাত্র-তরুণরাও পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না; তারা জাতির সম্পদ না হয়ে পরিণত হচ্ছে বোঝায়। এসব ছাত্র-তরুণদেরকে আলোর ধারায় ফিরিয়ে আনতে এবং সমাজে ও জাতিতে Positive thoughts buildup করতে ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র (সিএসডিসি) নিয়মিত আয়োজন করছে নানামুখী কর্মসূচি; যার অন্যতম ফ্রি সেমিনার অন প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড। সে ধারাবাহিকতায় গত ৪ ডিসেম্বর ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এর ১৬তম পর্ব; যার বিষয় ছিল How to create positive thoughts. সিএসডিসি’র মহাসচিব এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এম হেলালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনারে মূল বক্তা ছিলেন প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড আন্দোলনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব ড. আলমাসুর রহমান।

ড. আলমাসুর রহমান
কারিশম্যাটিক উপস্থাপক ড. আলমাসুর রহমান বলেন- আমরা জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছতে চাই, সফল ও শান্তিময় জীবনের অধিকারী হতে চাই। মানুষের মস্তিষ্কে যেমন চিন্তা আসে, যেমন চিন্তা তৈরি হয়, তার লক্ষ্যও হয় তেমন। চিন্তা যদি বীজ হয়, কর্ম হবে ফসল। মানুষ যেমন চিন্তা করবে কাজটা তেমনই হবে। একটা কাজ বারে বারে করলে তা অভ্যাসে পরিণত হয়। অভ্যাস মানুষের চরিত্রের অংশ। Personality মানুষকে নিয়ে যায় destination -এ।
ড. আলমাস বলেন- মানুষ কেন ভালো চিন্তা করে, খারাপ চিন্তাই বা তার মাথায় আসে কেন? এ অবস্থার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মানুষের ওপর অটুট আস্থা রাখতে হবে, মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে। মনে রাখবেন- মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকাও ভালো, অবিশ্বাস করে জেতার চেয়ে।
তিনি বলেন- চিন্তা ভালো হবে কি খারাপ হবে তা ৩টি জিনিসের ওপর নির্ভর করে। ১) Quality of information ২) Past experience ৩) Belief system. Quality of information এর উদাহরণ দিয়ে ড. আলমাস বলেন, একজন পুলিশ অফিসারের নিকট খবর আসলো- তার এক কলিগ ঢাকায় ৩টি বাড়ি করেছে, আরেক কলিগ গ্রামে ৫০ বিঘা জমি কিনেছে, তার পদের নিচের এক অফিসার ৩টি বাসের মালিক! এসব শুনে তার মাথা গরম হয়ে যায়। ভাবেন, ওরা যখন এতকিছু করছে- Then why not me? খারাপ চিন্তা, নেগেটিভ ইনফরমেশন সারাদিন যদি তার মাথায় আসতে থাকে, তাহলে তিনি খারাপ কাজই করবেন! আরেকটি উদাহরণ হলো- এক লোক ১৫ বছর ব্রিটেন-আমেরিকায় থেকে গাড়ি চালিয়েছেন; দেশে এসে গাড়ি চালাতে গিয়ে লালবাতি দেখে থামিয়ে দেন ট্রাফিক পুলিশ না থাকা অবস্থায়ও। অথচ এখানকার একজন লোক লালবাতির মধ্যেই দিব্যি গাড়ি চালিয়ে চলে গেলেন! অর্থাৎ যার মস্তিষ্কে যেরূপ ইনফরমেশন আছে, তিনি সেরূপ কাজ করছেন।
Past experience এর উদাহরণ দিয়ে ড. আলমাস বলেন- অতীতে টাকা ধার দিয়ে ফেরৎ পাননি; তাই ধারণা জন্মেছে- টাকা ধার দিলে ফেরৎ পাওয়া যায় না। অতীতের ঘটনা থেকে বুঝেছেন- টাকা ধার দিলে ফেরৎ দেয় না, ভালো ব্যবহার করে না, ধন্যবাদ কিংবা কৃতজ্ঞতাতো দূরের কথা। কিন্তু আপনাকে এ বিশ্বাসে বলীয়ান হতে হবে যে, সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদের দরকার নেই। ধন্যবাদ কিংবা কৃতজ্ঞতা জানাক বা না জানাক আমি সাহায্য করবই; কোনো একজন ধারের টাকা ফেরৎ দিক বা না দিক- আমি অন্যদের টাকা ধার দেবোই। এক্ষেত্রে আপনি বলবেন- মানুষকে সাহায্য করা আমার চয়েজ, যে সাহায্য করবে না- সেটি তার চয়েজ।
Past experience এর সম্পর্কে ড. আলমাস বলেন- আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে Belief system is very important. উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন- আপনি আপনার এক শিল্পী বন্ধুকে নিয়ে বেড়াতে গেলেন; দেখলেন- বন্ধুর সাথে লোকজন আলাপ জুড়েছে, তাকে অভিবাদন জানাচ্ছে, আপনাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। আপনি নিজেকে হেয় ভাবলেন, শিল্পী বন্ধুর প্রতি ঈর্ষান্বিত হলেন। বিলিফ সিস্টেমের জন্য আপনার মনে এমন ধারণা জন্মেছে। আপনার বন্ধুকে ফুল দিলে, মালা দিলে, গিফট দিলে সে বড় হয়ে গেল -এটা সত্য নয়। ও’ ওর জায়গায় বড়, আপনিই বা ছোট কিসে? আপনার ঈর্ষা কেন? বরং তার প্রতি সম্মান এবং তার জনপ্রিয়তা দেখে আপনি খুশি হবেন, যারা সম্মান দেখাচ্ছে তাদের উৎসাহিত করবেন।
ক্যারিশমেটিক উপস্থাপনার শেষপ্রান্তে এসে ড. আলমাসুর রহমান বলেন- যারা বাইরের কোনো পরিস্থিতির দ্বারা প্রভাবিত হন না, তারাই প্রোএকটিভ। যাদের এ গুণ নেই তাদের Personality নেই। আপনার পরিস্থিতি আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আপনার password দিয়ে অন্যে কিভাবে আপনার ইন্টারনেটে ঢুকবে, যদি তা আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে! Remote control আপনার হাতেই থাকতে হবে, তাহলে আপনি কাঙ্থিত চ্যানেল পেয়ে যাবেন, জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন।

এম হেলাল
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এম হেলাল সকল পরিস্থিতিতে সকলকে প্রোএকটিভ ও পজিটিভ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন- আজ থেকে, এখন থেকে আমরা প্রোএকটিভ থাকব, ভালো ভালো চিন্তা করব; কেননা ভালো চিন্তা থেকে সৃষ্টি হবে ভালো কর্ম, যার ফলও হবে ভালো।
তিনি বলেন- আপনারা কর্মে-সাধনায় Constructive থাকবেন। মনে রাখবেন- গরম মাথার মানুষ সবসময় হেরে যায়, প্রোএকটিভ মানুষ সর্বদা জয়ী হয়। তাই মানুষের সঙ্গে, এমনকি সৃষ্টির সাথেও সর্বদা প্রোএকটিভ হবেন। ভূমিকম্পের সময়ও সহজ-স্বাভাবিক থাকবেন, স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য রাখবেন, ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি দেখে স্থিরচিত্তে সে পরিস্থিতির মোকাবেলা করবেন; কেননা অধৈর্য হলে বা অস্থির হলে, রিএকটিভ হলে ক্ষতি আরও বেশি হবে। এম হেলাল আরও বলেন- প্রোএকটিভ আন্দোলনের পুরোধা ড. আলমাস ছাত্র-তরুণদের সামনে তাঁর কারিশম্যাটিক উপস্থাপনার মাধ্যমে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন, আশা করি- সবাই এতে উজ্জীবিত হবেন, বিশেষ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবেন, পাবেন চলার পথের সন্ধান।
অনুষ্ঠান শেষে ড. আলমাসুর রহমানকে ক্যাম্পাস’র শুভেচ্ছা পুরস্কারে ভূষিত করেন ক্যাম্পাস’র কন্ট্রিবিউটর এবং কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার উপদেষ্টা ছড়াকার মোহাম্মদ মোস্তফা।
ক্যাম্পাস পরিচালিত পরবর্তী প্রোএকটিভ সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে ১২ মার্চ বিকাল ৪ টায়। আগামী সেমিনারের বিষয় Husband-wife relationship: Happy marriage life. আশা করি, সবার ভালো লাগবে; এতে মজার অনেক কিছু পাবেন।