ক্যাম্পাস পরিচালিত ফ্রি সেমিনার অন প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড

যে যত শান্ত ও স্থির, সে তত সফল-জনপ্রিয় ও সমৃদ্ধ

ন্যায়ভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনে নিবেদিত প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র (সিএসডিসি) এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা। ২০২০ সালের মধ্যে বিজ্ঞানমনষ্ক, আধুনিক ও প্রোএকটিভ বাংলাদেশ গড়তে ক্যাম্পাস’র রয়েছে মাল্টিডাইমেনশনাল নানামুখী কর্মসূচি; যার অন্যতম ফ্রি সেমিনার অন প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড। রিএকটিভ না হয়ে যেকোনো পরিবেশে প্রোএকটিভ ও পজিটিভ থেকে সফল ও জনপ্রিয় হওয়ার গুণ ও কৌশল শেখানো হয় এ সেমিনারে। সে ধারাবাহিকতায় গত ৫ জুন ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এ সেমিনারের মূল পর্ব।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এবং সিএসডিসি’র মহাসচিব এম হেলালের সঞ্চালনায় উক্ত সেমিনারে মূল বক্তা ছিলেন প্রোএকটিভ এটিচিউড আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ও গবেষক ড. আলমাসুর রহমান।

ড. আলমাসুর রহমান
কারিশম্যাটিক উপস্থাপক ড. আলমাসুর রহমান বলেন- আমরা সবাই সফল হতে চাই এবং অনেকে সেরা হতে চাই। আর সফল ও সেরা মানুষের প্রথম গুণ প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড। সফল মানুষরা যেকোনো পরিস্থিতিতে, যেকোনো পরিবেশে যা কিছু ঘটুক না কেন, আবেগপ্রবণ না হয়ে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
ড. আলমাস বলেন, প্রো-একটিভ মানুষের বৈশিষ্ট্য হলো- যতই তাকে রাগান, ক্ষ্যাপান, এমনকি লাঞ্ছিত করুন না কেন; তিনি রাগবেন না, গালাগালি করবেন না, মরামারিরতো প্রশ্নই নেই। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন- বর্তমান বিশ্বের প্রোএকটিভ এটিচিউড আন্দোলনের বিশ্বসেরা ব্যক্তিত্ব জানকী দেবী, যিনি কমায় যেতে পারেন ডেল্টা লেভেল থেকেই। তাঁর দর্শন হলো- বিতর্ক বা ইগোতে না যাওয়া। জানকী দেবীর মতে- নিজেকে বড় ভাবা বা ইগো থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে প্রোএকটিভ এটিচিউডে সাফল্য আসবে না। কারণ মানুষ যখন রেগে যায়, ক্ষেপে যায়, উত্তেজিত হয় -তখন বিবেক-বুদ্ধি কাজ করে না; সে ভুল করে, সিদ্ধান্তে ভুল হয়। মহামানবরা রাগতেন না বলে ভুল করতেন না। তারা সকল পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতেন -এরই নাম প্রোএকটিভ এটিচিউড।
ড. আলমাস বলেন, আমাদেরকে ভাবতে হবে, ব্রেন যদি উত্তেজিত হয় তাতে আমার কী? আমি রাগকে নিয়ন্ত্রণ করবো, রাগ কোনোভাবেই আমাকে নিয়ন্ত্রণ করবে না। একজন মানুষ যখন যুক্তিতে, বুদ্ধিতে, বিবেচনায় পেরে ওঠেন না -তখনই তিনি রাগান্বিত হন। তাই যখন কেউ আপনার সাথে রাগ করবে, যুক্তি বা লজিক বুঝতে না চাইবে; তখনও আপনি শান্ত থাকবেন, Spot থেকে সরে আসবেন।
তিনি বলেন- অস্থিরতার মধ্যে সৃষ্টি হয় না, সৃষ্টির জন্য চাই স্থিরতা। বিজ্ঞানীরা বলেছেন- Silence is power, বুদ্ধির প্রখরতা বাড়ে নিরবতায়। চলন্ত গাড়ি থেকে ফোকাস সঠিক হয় না; গাড়ি টার্ন নিতে গেলেও শান্তভাবে গতি না কমালে দুর্ঘটনা ঘটে।
ড. আলমাস বলেন- হৃৎপিন্ডের গ্রাফের আপ-ডাউন সুস্থতার লক্ষণ, কিন্তু মনের গ্রাফের আপ-ডাউন থাকলে বুঝতে হবে মানুষটি অসুস্থ। যতই স্থির থাকা যায়, সিদ্ধান্ত নিতে ভুলের সম্ভাবনা ততই কম থাকে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন- হেরা পর্বতের গুহায় রাসুল (দঃ) যুগব্যাপী সাধনার পর তাঁর চরম স্থিরতার মুহূর্তে মহান আল্লাহর কাছ থেকে অহি পেলেন, তাঁর সাধনার পরিপূর্ণতা লাভের পরই আল্লাহ্ আলেমুল গায়েব তাঁকে নবুয়ত দান করেন। ড. আলমাসুর রহমান বলেন, প্রোএকটিভের বিপরীত হলো রিএকটিভ। রিএকটিভ মানুষ সবসময় অস্থিরতার মধ্যে থাকে, তারা কখনও সফল হয় না। তাদেরকে রাগাইলে রাগে, ক্ষ্যাপাইলে ক্ষ্যাপে, সমালোচনা করলে হয় ভীষণ উত্তেজিত। এ ধরনের মানুষ নিজের দোষ স্বীকার না করে বলে, ও’ আমাকে কেন রাগাইলো! এর মানে- আপনাকে রাগানোর ক্ষমতা অন্যের আছে। অর্থাৎ সে পাওয়ারফুল; আপনার সুইচ অন্যের হাতে। অথচ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষদের, সফল মানুষদের কন্ট্রোল তাদের নিজেদের হাতেই ছিল।
মানুষকে মাটির সাথে তুলনা করে ড. আলমাস বলেন- আল্লাহ মানুষকে মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন, কারণ মাটির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব, স্থির, শান্ত, প্রোএকটিভ গুণ আছে। তাই মাটির সৃষ্টি মানুষকেও থাকতে হবে শান্ত, স্থির। আর যে যত শান্ত-স্থির, সে তত সফল। স্থিরতা থেকে আপনাকে দূরে রাখতে বাইরের ঘটনা যতটা দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী আপনার বিচার-বিশ্লেষণ ক্ষমতা। Universal truth হলো- আপনি কখনও অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন শুধু নিজেকেই। তাই মানুষ যতই আপনাকে গালি দিক -ওটা তাদের চয়েজ; আপনি সেটি শুনবেন না -এটি আপনার চয়েজ। মানুষকে বদলানো যায় না, বদলাতে হবে নিজেকে। নিজেকে Stable, শান্ত, স্থির রাখবেন।
রাগ ও রিএকশন নিয়ন্ত্রণ করে প্রোএকটিভ এটিচিউড ধরে রাখার জন্য ড. আলমাস একটি সহজ সূত্র উপস্থাপন করেন- Let go অর্থাৎ যেতে দাও, Let be অর্থাৎ এ মানুষটি কিংবা ও এরকমই এবং Accept অর্থাৎ মেনে নাও।

এম হেলাল
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এম হেলাল বলেন, আমাদেরকে যেকোনো পরিস্থিতিতেই প্রোএকটিভ ও পজিটিভ থাকতে হবে; জয়ী হতে হলে বা সফল হতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। প্রোএকটিভ এটিচিউডের একটি Ingredient হলো- Adjustment capacity. রানা প্লাজার মৃত্যুঞ্জয়ী রেশমার উদাহারণ টেনে তিনি বলেন- সামান্য বিস্কুট এবং এক বোতল পানি তাকে যতটা না বাঁচিয়েছে, তার চেয়ে বেশি জীবনীশক্তি দান করেছে তার Adjustment capacity. তিনি প্রচন্ড দুর্গন্ধ, ধুলি-বালি, ইট-সুরকি-লোহা-পিলার -এসবের সাথে Match করে বা খাপ খাইয়ে রেখেছেন বলেই বেঁচেছিলেন। তিনি অস্থির হননি, হতাশ হননি, ভেঙ্গে পড়েননি; বাস্তব অবস্থার সাথে নিজেকে Adjust করে নিয়েছেন। এ Adjustment capacity তাকে সৃষ্টিকর্তার সহায়তালাভে সাহায্য করেছে। আশা করি, আজকের উপস্থিতগণও তাদের Adjustment capacity বাড়িয়ে ২০২০ সালের মধ্যে প্রোএকটিভ বাংলাদেশ গড়ায় ক্যাম্পাস’র আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। ক্যাম্পাস পরিচালিত পরবর্তী প্রোএকটিভ সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে ২৫ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টায়। আগামী সেমিনারের বিষয়- How to Develop Relationship.