ক্যাম্পাস আয়োজিত সেমিনারে ড. আলমাস

প্রোএকটিভ মানুষরা আবেগকে বিবেক দিয়ে ঢেকে রাখেন

সফল ও জনপ্রিয় মানুষ গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা এবং ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র (সিএসডিসি) -এর উদ্যোগ রেগুলার ফ্রি সেমিনার অন প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড। তারই ৬ষ্ঠ সেমিনার অনুষ্ঠিত হল ২১ জুলাই ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে।
উক্ত সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রোএকটিভ এটিচিউড আন্দোলনের প্রাণপুরুষ, গবেষক ও চিত্তাকর্ষক উপস্থাপক ড. আলমাসুর রহমান। সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এবং ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিএসডিসি) -এর মহাসচিব এম হেলাল। সূচনা বক্তব্যে ড. আলমাসুর রহমান বলেন, তিনিই সেরা মানুষ, যিনি প্রোএকটিভ এটিচিউডের অধিকারী। পশুকে ‘পশু’ হতে হয় না, সে এমনিতেই পশু। কিন্তু মানুষকে ‘মানুষ’ হতে হয় বহু সাধনায়। একজন মানুষ তত বড় মানুষ, যার মধ্যে যত মানবিক গুণাবলীর সমাবেশ ঘটে।
ড. আলমাস বলেন, বিশ্বের ২০০ সেরা মানুষের মাঝে গবেষণা করে ড. গোবে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। এ গবেষণার ফলাফল হিসেবে তিনি সফল ও জনপ্রিয় মানুষদের ৭টি গুণের উল্লেখ করেন। গুণগুলো হল ১) প্রোএকটিভ এটিচিউড; ২) target বা লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের ক্ষমতা; ৩) priority অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন; ৪) আমি জিতবো কিন্তু তুমি হারবে না এ মনোভাব পোষণ; ৫) অন্যের কথা শোনা; ৬) সবাইকে নিয়ে কাজ করা; ৭) নিজেকে research করা এবং জ্ঞানের পরিধি বাড়ানো। Proactive অর্থ হচ্ছে উত্তেজিত না হয়ে, আবেগ তাড়িত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা। Proactive মানুষ চেঁচামেচি করবে না, গালাগালিও করবে না মারামারিত’ দূরের কথা! এর বিপরীতধর্মী reactive মানুষ তারা রাগালে রাগে, ক্ষ্যাপালে ক্ষ্যাপে, সমালোচনা করলেতো রক্ষে নেই। reactive লোকেরা তোষামোদীতে খুশি হয়, চাটুকারিতায় গলে যায়।
ড. আলমাসুর রহমান বলেন, মানুষ সকল সৃষ্টির সেরা। আল্লাহ মানুষকে আগুন বা নূর দিয়ে তৈরি করেননি, মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন। কারণ মাটির মধ্যে রয়েছে সব শ্রেষ্ঠ গুণ। আমরা ময়লা-আবর্জনা মাটিতে ফেলে দেই, মাটি তা খেয়ে সার তৈরি করে; মাটির বুক চৌচির করে আমরা চাষাবাদ করি; মাটি অনেক মূল্যবান সম্পদ তার বুকে ধারণ করে আছে, যা সে মানুষকে দান করে দেয়। মাটির গভীরে আগুনও আছে, যা সে অবলীলায় ধারণ করে, তবে মাঝে মাঝে অগ্নুৎপাত ঘটিয়ে সে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সম্যক জানান দেয়। ভয়ংকর এ আগুনকেও মাটি চাপা দিয়ে রেখে তার ওপর গড়ে তুলেছে দৃষ্টিনন্দন সৃষ্টির কারুকাজ।
একইভাবে প্রোএকটিভ মানুষকে তাচ্ছিল্য করলে, তার সাথে খারাপ ব্যবহার করলে সে এটিকে কিছুই মনে করে না; মাটি যেমন মহামূল্যবান সম্পদ সবার মধ্যে বিলিয়ে দেয়, প্রোএকটিভ মানুষও তার সম্পদ বিলিয়ে দিতে পারে। এজন্য ভদ্র, বিনয়ী, সৎ মানুষকে আমরা বলি মাটির মানুষ! অন্যদিকে reactive attitude-এর মানুষ সব কিছুতেই react করে, সে ভাল আবেগ-অনুভূতিকে ফিরিয়ে দেয়। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, reactive মানুষরা সমস্যা তৈরি করে। পক্ষান্তরে প্রোএকটিভ মানুষ সমস্যার সমাধান করে। প্রোএকটিভ মানুষেরও আবেগ আছে, কিন্তু তারা সে আবেগকে বিবেক দিয়ে ঢেকে রাখে।
ড. আলমাস আরও বলেন, নবী-রাসুলগণ সবাই ছিলেন প্রোএকটিভ। কেউ আঘাত করলে উল্টো বলতেন লোকটির কোন অসুবিধা হয়নিতো? তায়েফ -এর অধিবাসীরা রাসুলুল্লাহ (দঃ) এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীদের ওপর চরম নির্যাতন শুরু করলে স্বয়ং জীবরাঈল (আঃ) বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনি যদি বলেন তাহলে আল্লাহ পাক তায়েফকে উল্টিয়ে দেবেন। রাসুল (দঃ) বললেন, তায়েফ ধ্বংস হয়ে গেলে আমি ইসলাম প্রচার করব কার কাছে? আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম, আল্লাহপাক তাদের হেদায়েত করবেন।
প্রোএকটিভ মানুষ মনে করে কেউ যদি তার দিকে কোন ক্ষতিকর জিনিস নিক্ষেপ করে, সে জিনিসটি তাকে স্পর্শ করার আগে নিক্ষেপকারীকেই স্পর্শ করেছে। যে গালাগালটা দিল এটা তারই, আমার কিছু নয়। প্রোএকটিভ মানুষের ভেতরে গালিটা ঢোকেইনা।
আন্তরিকতা, দয়া-মায়া-মমতা, নম্রতা-ভদ্রতা -এসব গুণ ধারণ করে মানুষ ‘মানুষ’ হতে পারে। হাসতে পারাটা মানুষের একটি বড় গুণ। কোন পশু-পাখি হাসতে পারে না, স্রষ্টা কেবল মানুষকেই হাসির ক্ষমতা দিয়েছেন। হাসিতে সৌন্দর্য আর আনন্দ বিকশিত হয়। হাসির কারণে মানুষ সফল, সেরা ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ড. আলমাসুর রহমান বলেন, শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার হল মানুষ তার অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারে। সকল সৌন্দর্যের মাঝে মানুষই সুন্দর। মানুষের জীবনে সাফল্য থাকে, ভালবাসা থাকে, ভাগ্যদেবী সবার দরজায়ই কড়া নেড়ে যায়। কিন্তু reactive থাকার কারণে কিছুই পায় না।
Reactive attitude দমিয়ে রেখে proactive থাকার উদাহরণ তুলে ধরেন ড. আলমাস। তিনি বলেন, সিনেমা হলে বিচিত্র দর্শকের সমাবেশ ঘটে। সেখানে কোন কোন দর্শক এমন সব আচরণ করেন, যা আপনার একেবারেই অসহ্য। অথচ বলার বা করার কিছুই থাকে না, কারণ ওদের ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণ নেই; ওদেরকে বললেও যা, না বললেও তা! আপনার নিয়ন্ত্রণ কেবলমাত্র আপনার ওপর।
মডারেটর এম হেলাল বলেন এটি আশার কথা যে, প্রোএকটিভ সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ড. আলমাসুর রহমানের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে কোন বিষয়ে confusion রাখা চলবে না, conclusion-এ আসতে হবে। আমরা proactive হব, reactive হব না; act করব, react করব না। পজিটিভ হব, নেগেটিভ হব না। Negative attitude মানুষের সৃজনশীলতা নষ্ট করে, অন্যদিকে positive attitude-এ রয়েছে আনন্দ আর আনন্দ। প্রত্যেক মানুষের সাফল্য নির্ভর করে তার নিজের ওপর। তিনি বলেন তাই ই"েছ করলেই আমরা এখন থেকেই প্রো-একটিভ এটিচিউড লালন করতে পারি এবং সফল ও সমৃদ্ধ জীবনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। প্রোএকটিভ এটিচিউডের পরবর্তী সেমিনার হবে ২০ অক্টোবর, ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে।