সব নেতিবাচক ধারণা বদলে দেয় ক্যাম্পাস

সৈয়দা তামান্না হাসান
সিনিয়র এক্সিকিউটিভ

ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র -এর সাথে আমার পরিচয় ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে এমএস করার পর আমি একটি চাকরি খুঁজছিলাম। কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্স্ট ক্লাস পেলেও চাকরির বাজারে আমার গুরুত্ব কম। এর অন্যতম কারণ- আমি কম্পিউটার জানিনা!

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে দীর্ঘ শিক্ষাজীবন শেষে ফার্স্ট ক্লাসের সার্টিফিকেট হাতে আমি উপলব্ধি করলাম- এ সার্টিফিকেট কাজে লাগাতে হলে এবার আমাকে তথ্য-প্রযুক্তির স্কুলে ভর্তি হতে হবে অর্থাৎ কম্পিউটারের কাজ শিখতে হবে। কম্পিউটার জানা লোকের চাহিদা বেশি হলেও সুলভে ও সহজে কম্পিউটার শেখা যায়, এমন প্রতিষ্ঠান খুবই কম। তাই আমার কম্পিউটার শেখা ক্রমেই বিলম্বিত হচ্ছিল। এ অবস্থায় হঠাৎ আমার ভাই ইমরান মঞ্জুর জানালো ক্যাম্পাস’র কথা- যেখানে ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিং দেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে ‘ক্যাম্পাস’ নামটাও মনে ধরলো। কাজেই বিলম্ব না করে ক্যাম্পাস অফিসে যোগাযোগ করলাম এবং সফলভাবে ট্রেনিং সম্পন্ন করলাম।

ট্রেনিং শেষে ক্যাম্পাস’র আরেকটি চমৎকার প্রোগ্রাম শিক্ষানবিশ কর্মসূচির প্রতি আকৃষ্ট হই। ক্যাম্পাস’র ব্যতিক্রমী লক্ষ্য- জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠন কর্মসূচি আমাকে এ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধীরে ধীরে আরো আগ্রহী করে তোলে। সে আগ্রহ থেকেই ক্যাম্পাস’র শিক্ষানবিশ কর্মসূচিতে জড়িয়ে পড়ি। এ কর্মসূচিতে থাকাকালীন আমি জানতে পারি কিভাবে নেতিবাচক ধারণা পরিহার করে ইতিবাচক চিন্তার চর্চা করতে হয়। পারি না, পারবো না -এ ধরনের কথার কোন আশ্রয় নেই এখানে। বরং আমিও সব পারি এ আদর্শে উজ্জীবিত করা হয় ক্যাম্পাস’র সকল কর্মীকে। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই অলস প্রকৃতির ছিলাম। ক্যাম্পাস’র মহাসচিব এম হেলাল স্যারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, যিনি কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে আমার অলসতা পরিহার করে আমাকে কর্মী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে আমি সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে ক্যাম্পাস-এ নিয়মিত কাজ করছি।

ক্যাম্পাস’র সাথে আমার যতটুকু পরিচয়, তা থেকে আমি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যে- প্রকৃতপক্ষেই এ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য চমৎকার। এ প্রতিষ্ঠানের মহাসচিব এম হেলাল স্যার থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে দায়িত্ববোধ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও সময়ানুবর্তিতা সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতনতা আমি লক্ষ্য করেছি।

আত্মোন্নয়ন, জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানো, উন্নত জীবন গঠনে মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণে এ প্রতিষ্ঠানের একটি নিরন্তর প্রচেষ্টা রয়েছে। ক্যাম্পাস’র ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে- এর যাবতীয় উদ্যোগ নিঃস্বার্থভাবে পরিচালিত এবং দেশ উন্নয়ন ও মানব কল্যাণে নিয়োজিত। তাছাড়া এ প্রতিষ্ঠানের সাথে যারা জড়িত, তাদের সকলেরই কর্ম-স্বাধীনতা ও বাক-স্বাধীনতা রয়েছে। এখানে কাউকে ছোট করে দেখা হয় না, সবাই এখানে সমানভাবে গুরুত্ব পায়।

ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র -এর বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিং, শিক্ষানবিশ কর্মসূচি, সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রম, ফ্রি মেডিটেশন-ইয়োগা এন্ড আকুপ্রেশার, সততা পুরস্কার প্রভৃতি। বাংলাদেশে যেখানে সকল প্রতিষ্ঠান কেবল নেয়ার হিসেবে মত্ত, সেখানে ক্যাম্পাস কেবল দিয়েই যাচ্ছে। তাই ক্যাম্পাস’র নিকট দেশ ও জাতির অনেক প্রত্যাশা। আমি এই প্রতিষ্ঠানের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।

- লেখক
বিএসসি (অনার্স), এমএস (ফার্স্ট ক্লাস)
উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়