ক্যাম্পাস’র ক্যাম্পেইন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আমি

মাহীর হেলাল
ক্যাম্পাস’র শিক্ষানবিশ

ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে প্রতিবছরই অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক ক্যাম্পেইন। গত ২ বছর আমি এই ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়েছি। এ বছরও অংশ নিচ্ছি। বিভিন্ন টিমে ভাগ হয়ে আমরা সারাদিন বিভিন্ন অফিস-আদালতে যাই, শুভেচ্ছা জানাই, দেয়ালে ক্যালেন্ডার লাগাই ইত্যাদি। এই ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বয়সে আমি সবার ছোট। এ বছর ইতোমধ্যে আমি ১০ দিন ক্যাম্পেইন করেছি। আমার ক্যাম্পেইন অভিজ্ঞতার মধ্যে সবচেয়ে Exciting ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ক্যাম্পেইনের দিনটি। আমরা জানি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনেক সিকিউরিটি ব্যবস্থা থাকে। কয়েক স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। এর আগে আমি কখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাইনি। আমরা ৪ জনের একটি টিম সেখানে গিয়েছিলাম।
ক্যাম্পাস অফিস থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করে আগেই টাইম নেয়া ছিল। নির্দিষ্ট দিনে সকাল ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গেইটে প্রথমে আমরা Head of Security এর সাথে কথা বলি। তিনি আমাদের একটি পাস কার্ড দিলেন। এই কার্ড ছাড়া কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকা যাবে না। তিনি আমাদেরকে বোঝালেন যে, পুরো কার্যালয়কে তিনটি বিভাগ বা জোনে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো Green Zone; White Zone এবং Red Zone। প্রধানমন্ত্রী মহোদয় বসেন Red Zone এ। সেখানে সিলেকটেড কিছু লোক যেতে পারেন। উপদেষ্টা, মহাপরিচালক, পরিচালক, সচিব, যুগ্ম-সচিব ইত্যাদি অফিসারদের রুম হলো সবুজ ও সাদা জোনে। পাস কার্ডও ২ ধরনের। শুধু লাল বিভাগের জন্য আলাদা কার্ড আছে। আরেকটি কার্ড হলো সবুজ ও সাদা বিভাগের জন্য। আমাদের দেয়া হয়েছিল সবুজ ও সাদা বিভাগের পাস।
পাস নিয়ে আমরা প্রবেশ করি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। কার্যালয়ের মুখেই পুলিশ একটা প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে আমাদের গাড়ি চেক করলেন। চেক করার পর কার্যালয়ে ঢুকেই দেখলাম, টিভিতে দেখা ওয়াশিংটনের White House এর মতো সাদা একটি বিল্ডিং। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী বসেন, সেটাই হলো Red Zone । ক্যাম্পেইনকালীন মহাপরিচালক ও পরিচালকদের নেমপ্লেট দেখতে দেখতেই আমি ক্লান্ত হয়ে গেলাম। ভাবলাম, প্রধানমন্ত্রীকে কত্ত কাজ করতে হয়। তাঁর অফিসে কত্ত বড় বড় অফিসার। অনুভব করলাম, সারা দেশের সব কাজের কেন্দ্রবিন্দু হলো এই অফিস। কি আশ্চর্য, সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ অফিসের অলিতে-গলিতে আমি হাঁটছি; বুকে কেমন একটা অজানা Excitement. একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করলাম প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকের রুমের পাশে একটি Food Testing Room. সেখানে বিভিন্ন ওষুধ ও কেমিকেল ছিল, যা দিয়ে খাবার টেস্ট করা হয়। এতে বোঝা যায় যে, খাবারে কোনো ক্ষতিকর কিছু আছে কিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার খাতিরে তাঁকে যেকোনো খাবার পরিবেশনের আগে তা টেস্ট করতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকও সর্বক্ষণ উপস্থিত থাকেন।
এর আগে আমি সচিবালয়ে ক্যাম্পেইনে গিয়েছিলাম। সেখানে সচিব, যুগ্ম-সচিব, উপসচিব ইত্যাদি হাই অফিসিয়ালদের রুমে ক্যাম্পেইন করতে গেলে কোনো কোনো অফিসারের সহযোগিতা একটু কম পেয়েছি। অথচ সচিবালয় থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আমরা প্রত্যেক মহাপরিচালক ও পরিচালকের রুমে গিয়েছি, ক্যাম্পেইন করেছি। সবাই সাদরে আমাদেরকে গ্রহণ করেছেন, ক্যাম্পাস’র এবারের সেøাগান দেখেছেন, অনেক আগ্রহ ও উচ্ছ্বাসে ক্যাম্পাস’র নববর্ষের কার্ডসহ বিভিন্ন জিনিস গ্রহণ করেছেন। কোথাও কোনো বাধা বা অসহযোগিতা পাইনি।
প্রধানমন্ত্রী-ভবনের বাইরে বিশাল ফুল বাগান; চারিদিকে সবুজ-লাল-হলুদ-বেগুনী কত রকম গাছ আর ফুলের মেলা। দেখে আমার মন ভরে গেল। দিনশেষে যখন আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসি, তখন আমি মনে মনে ভাবলছিলাম ইস্ যদি একদিন এই অফিসের প্রধান আমি হতে পারতাম! কে জানে এই স্বপ্ন সত্যিওতো হতে পারে! আমার মা-বাবা সবসময় বলেন তুমি তত বড়, তোমার স্বপ্ন যত বড়। তাই বড় বড় কার্যালয়ে ঘুরে এসে আমার বর্ণিল স্বপ্নগুলো আরো রঙিন হলো। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন আমার স্বপ্ন সত্য হয় এবং আমি দেশ ও দশের সেবা করে আমার দেশমাতাকে বিশ্বের বুকে আরও বড় করতে পারি।
প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৫