ক্যাম্পাস’র সাথে আমার পথচলা
রিমেল বড়ুয়া
ওয়েব ডেভেলপার এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনার
ওপেন সিসমি, মনে মনে আওড়ালাম। আলিবাবার গুপ্তধনের গুহার বন্ধ দরজা সিসেম না খুললেও ক্যাম্পাস অফিসে পৌঁছানোর জন্য আমি যে লিফটে উঠেছি, সেটার দরজা খুলে গেল। সামনে বিপুল ধনসম্পদ দেখতে না পেলেও যা খুঁজে পেলাম, সেটা আলীবাবার গুপ্তধনের চাইতে কোনো অংশে কম নয়।
লিফট খুলতেই সামনে দেখি ক্যাম্পাস’র বিশাল ব্যানার, যেখানে লেখা; ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে দেয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের বর্ণনা যেমন ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিং, ফ্রি ইংলিশ কোর্স, ফ্রি মেডিটেশন, প্রোএকটিভ এটিচিউড প্রোগ্রাম ইত্যাদি। জ্ঞানের চাইতে বড় সম্পদতো পৃথিবীতে নেই। নিঃসন্দেহে আলীবাবার গুপ্তধনও এর কাছে কিছুই না।
ইন্টারভিউ দিতে এসে তাই খুশিই হলাম এরকম একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরিচিত হতে পারছি ভেবে। চাকরি না হলেও সমস্যা নাই, ভিন্ন একটা এক্সপেরিয়েন্সতো হবে। তাই চটপট অফিসে ঢুকে পড়লাম গেটে সাইন করে। আমাকে সামান্য অবাক করে গিয়ে চেয়ার টেনে বসতে দিল গার্ড, কোনো কিছু বলার আগেই মাথার উপর ফ্যানও ছেড়ে দিল। গরম লাগছিল বটে, মিরপুর থেকে বেশ বড়সড় যানজট পেরিয়ে এসেছি পুরানা পল্টনে। অন্য অফিসে এরকম সরল আতিথেয়তা খুব কমই পাওয়া যায়, যা দরকার সাধারণত তা চেয়ে নিতে হয়। বলতে হয়, ভাই ফ্যানটা একটু ছেড়ে দেয়া যায়?
সেন্ট্রাল ঢাকার তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজা, ১৩ তলায় অবস্থিত ক্যাম্পাস অফিসটাও খুব সুন্দর লাগল, গাছ-গাছালী আর লতা-পাতায় ভরা। একটু কল্পনা শক্তি খাটিয়ে ভাবতে পারেন, আমাজানের জঙ্গলে কোনো একটা লম্বা গাছের চূড়ায় বসে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখছেন। পড়ন্ত বিকেলের আলোয় ঢাকার বেশ বড় একটা অংশ দেখতে পেলাম সামনের সুপ্রশস্ত কাঁচের দেয়ালের ওপারে। কয়েকটা শঙ্খচিল আমার খুব কাছ দিয়ে উড়েও গেল, যেন হাত বাড়ালেই ধরা যাবে।
একসময় ডাক পড়ল ইন্টারভিউ রুমে; ওটা আসলে ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক মহোদয়ের রুম। আগে কখনো কোনো সম্পাদককে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়নি, সম্পাদকের রুম কেমন হয় সেটা জানাতো পরের কথা। ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এম হেলাল স্যারকে দেখে আমার সে সাধ পূর্ণ হয়ে গেল। বুঝলাম, মানুষকে বোঝানোর এবং সৃষ্টিশীল অসাধারণ এক ক্ষমতা উনার মধ্যে আছে। দেশ ও মানবজাতির উন্নয়নে ও কল্যাণে এমন অনেক ব্যতিক্রমী কিছু চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা তাঁর রয়েছে, যেটা আসলে দেশের হাই কমান্ডে যারা আছেন তাদের থাকা কিংবা করা উচিত।
ইন্টারভিউ বোর্ডে ছিলেন, ড. নাজনীন আহমেদ, ক্যাম্পাস’র অনারারি রিসার্চ ডিরেক্টর। উনাকে দেখলেই বোঝা যায় গান করেন বা মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু উনার সাথে যে পিএইচডি’র মতো বড় ডিগ্রিও আছে, পরে জানতে পেরে বেশ ভালো লেগেছিল। তার উপর উনি এসএসসি, এইচএসসি দু’টোতেই ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে বোর্ডে ফার্স্ট, বিশাল ব্যাপার বটে। ছোটবেলায় শুনতাম, অমুকে এক/দুই নাম্বারের জন্য স্টার/স্ট্যান্ড মিস করেছে। পত্রিকায় বোর্ডে ফার্স্ট সেকেন্ডদের ছবিসহ সাক্ষাৎকার সুন্দর করে ছাপাত। আমি ভাবতাম, অজপাড়াগাঁয়ে থাকি, বোর্ডে ফার্স্ট/সেকেন্ড হওয়া কারুর সাথে দেখা হবে না; তারা কেমন, কীভাবে পড়ালেখা করে, তারা দেখতে কেমন...! ড. নাজনীন ম্যাডামকে দেখে সেই আফসোস পূর্ণ হলো।
ইন্টারভিউ শেষে জানি না আমার মধ্যে কী দেখে সম্পাদক মহোদয় ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে আমাকে সিলেক্ট করলেন এবং আমি আরো পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেলাম ক্যাম্পাস’র সাথে।
বাস্তব জগতে আমরা থ্রিডি বা তিন মাত্রার সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু ক্যাম্পাস’র মাত্রা বাস্তব জগতেই কয়েকগুণ বেশি, এক কথায় মাল্টিডায়মেনশনাল। ছাত্র-যুবকদের উন্নয়নে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ক্যাম্পাস কত প্রকার কাজ যে করে যাচ্ছে, তা শুধু লিফলেট দেখে বা ক্যাম্পাস’র কার্যবিবরণী পড়ে বোঝা যাবে না। কিছু জিনিস আছে এগুলো একদিনে বোঝা কিংবা বোঝানোও সম্ভব নয়। যেমন ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিং বা ফ্রি ইংলিশ কোর্সের ব্যাপারটা কমবেশি সবাই বুঝতে পারেন। কিন্তু এর বাইরে আত্মউন্নয়নে যে মেডিটেশন বা প্রোএকটিভ প্রোগ্রাম এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তীব্র, সেটা বোঝানো আমার জন্য বেশ দুরূহ বটে এবং যথারীতি অনেকেই বুঝতে পারেন না। সম্পাদক মহোদয়কে প্রায় সময় দেখি নিজেই বোঝাতে শুরু করেন মেডিটেশন এবং প্রোএকটিভ এটিচিউডের উপকারিতা সম্পর্কে এবং তিনি মেডিটেশনকে ছাত্র যুবকদের জন্য রেখেছেন এক নম্বরে, কম্পিউটার আর ইংরেজি শিক্ষারও উপরে। ক্যাম্পাস’র এধরনের আরো কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে ভিজিট করতে পারেন campus.org.bd তে।
ন্যায়ভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ক্যাম্পাস বলতে গেলে একক প্রচেষ্টায় অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। সাথে পেয়েছে কিছু সৎ, দেশপ্রেমী, মানবপ্রেমী, কল্যাণকামী, যোগ্য, সুনাগরিককে। ক্যাম্পাসকে দেখি অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত না করতে, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি ও সুশাসন চর্চার সত্যিকার প্ল্যাটফরম ক্যাম্পাস। আমি এখানে শিখছি অনেক কিছু, পেয়েছি সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।
ক্যাম্পাস যেন এক পরশ পাথর, যার ছোঁয়ায় সাধারণ ছাত্র তরুণরাও অসাধারণ হওয়ার স্বপ্ন দেখে, দেখে বিশ্ব জয় করার স্বপ্ন। এখানে কোনো ভয় নেই, কারণ সত্যের পথ যত বন্ধুরই হোক না কেন, তা ভয়শূন্য, একসময় আপনাকে লক্ষ্যে নিয়ে যাবেই। জ্ঞানের আলো যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, সেই আলো থেকে আরো দশজন আলোকিত করতে পারবে নিজেকে।
প্রথম প্রকাশঃ জুলাই ২০১৫