মধ্য আয়ের বাংলাদেশ এবং ক্যাম্পাস’র জাতি জাগরণী কার্যক্রম

রাইসা হেলাল
ক্যাম্পাস’র শিক্ষানবিশ

গত পহেলা জুলাই বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে ঘোষণা করে। এটলাস নামক এক বিশেষ পদ্ধতিতে মাথাপিছু জাতীয় আয়ের হিসাব-নিকাশের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাংক এ ঘোষণা দেয়। এটি আমাদের জন্য একটি আনন্দের খবর। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ হয়ে ওঠা আমাদের সাফল্যের স্বীকৃতি বৈকি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং অনেক অর্থনীতিবিদ আশা করেন, বাংলাদেশ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। কিন্তু উন্নয়নের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পাশাপাশি যখন অতি সাধারণ খেটে খাওয়া নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনযাপন দেখি, তখন বিশ্বাস হতে চায় না যে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ। এ দেশের মাথাপিছু আয়ের যাই পরিবর্তন হোক, এই মানুষগুলোর জীবনযাত্রার মানের তেমন পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তনটা শুধু মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তদের মধ্যেই এসেছে, নয় কি?
যে দেশের সাক্ষরতার হার মাত্র ৬৭%, তাকে কি করে আমরা নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ বলে মানতে পারি? তাছাড়া “নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ” এই স্বীকৃতিটুকু পেলেই কি চলবে? উন্নত দেশের মতো আমাদেরও পরিবর্তন আনতে হবে মানব-উন্নয়নের নানা সূচকে। নাহলে এরূপ স্বীকৃতি হয়ত আমরা বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারব না। অথবা সত্যিকার অর্থে আমরা উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারব না। তাই নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের উপযুক্ত জীবনমান সবার জন্য দরকার। আর পরিবর্তনের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে শিক্ষার বিষয়টি। আমাদের দেশের মানুষ যত শিক্ষিত হবে, তত তাদের মধ্যে সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ বাড়বে।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমাদের দেশের বহু মানুষ বিভিন্ন আইন লঙ্ঘন করে। তারা এসব আইন সম্পর্কে, অন্যের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয় বলেই এগুলো মানছে না। আজও এ দেশের অধিকাংশ মানুষ রাস্তা পারাপারে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করে না, জেব্রাক্রসের ধার ধারে না। অনেকেই রাস্তার পাশে মল-মূত্র ত্যাগ করে; যত্রতত্র থুথু ফেলে, ময়লা ফেলে। অনেকেই ট্রাফিক আইন মানে না; লালবাতি জ্বলা অবস্থায় দ্রুতবেগে গাড়ি হাঁকিয়ে চলে যায়। ওভারটেক করা কিছু চালকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ফলে রাস্তায় যানজট, দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকে।
ঘর থেকে বের হয়ে যখন এসব ঘটনা প্রতিনিয়তই চোখের সামনে ঘটতে দেখি, তখন আর এদেশকে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ বলে মানতে ইচ্ছা হয় না। যতদিন পর্যন্ত না জাতিগতভাবে জীবন-মানের দিক থেকে উন্নত হতে পারছি, ততদিন পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত নই যে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের স্বীকৃতি আমরা ধরে রাখতে পারব। আমরা যখন নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছি, তখন আমাদের চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, চিন্তায় ও জীবন-যাত্রায় এর প্রতিফলন জরুরি। এরূপ উন্নততর দেশে যুক্তিভিত্তিক চিন্তা ও কর্ম থাকা দরকার, সমাজ হওয়া দরকার জ্ঞানভিত্তিক। তাইতো ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা বহুকাল থেকে যুক্তিভিত্তিক, ন্যায়ভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সমাজের সর্বস্তরে স্বচ্ছতা-জবাবদিহি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ক্যাম্পাস’র দাবি, আন্দোলন ও কার্যক্রম দীর্ঘদিনের। ক্যাম্পাস’র এসব দর্শন যদি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে সত্যিকার অর্থেই আমরা শুধু মধ্যম আয়ের নয় বরং উন্নত জাতিতে পরিণত হব, উন্নত দেশের সারিতে স্থান করে নেব।
আমরা যারা ছাত্র-তরুণ, তাদেরকে আগামীর যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। ক্যাম্পাস’র শিক্ষানবিশ কর্মসূচির আওতায় জীবনমুখী যেসব শিক্ষা দেয়া হয়, সেগুলো যদি সরকার এবং সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনুসরণ করে তাহলে চৌকস, পরিশ্রমী, ধীর-স্থির, আত্মপ্রত্যয়ী, দক্ষ এক জনশক্তি গড়ে উঠবে; যারা এই বাংলাদেশকে নিশ্চিতভাবে উন্নত দেশে পরিণত করবে। তাই চলুন, আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশকে একটি সুন্দর ও উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি এবং ক্যাম্পাস’র পতাকাতলে সামিল হয়ে এরূপ জাতি জাগরণী কার্যক্রমে অংশ নিই।
প্রথম প্রকাশঃ আগস্ট ২০১৫