ড. এম হেলালঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য সৃষ্টি

আলাউদ্দিন আসগর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র

স্কুল ও কলেজ জীবন পেরিয়ে ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হই। মনে হয় যেন এইতো সেদিনের কথা, অথচ সময় থেমে নেই। এক এক করে আঠাশটি বছর পার হয়ে গেল। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ছিল অত্যন্ত মধুর ও আনন্দময়। আমি ছিলাম সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র। এ হলের ছাত্ররাই পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনীতি, প্রশাসন ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন এবং এখনও রাখছেন। সলিমুল্লাহ হলে আমার সাথে পরিচয় হয় হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র ও বিশিষ্ট ছাত্রনেতা এস এম হলের তৎকালীন নির্বাচিত সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এম হেলালের সাথে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমার জীবনের সর্বাপেক্ষা সোনালি ও গৌরবময় অংশটি জড়িত। আমার জীবনে যা কিছু অর্জন ও প্রাপ্তি তার ভিত্তিমূল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পাশাপাশি ক্যাম্পাস এবং হেলাল ভাইয়ের অবদানও অনেক। ক্যাম্পাস’র সান্নিধ্যে এসে আমার শিক্ষাজীবন সার্থক ও অর্থপূর্ণ হয়। তাঁরই অনুসারী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হই। পাশাপাশি লেখালেখি, সাংবাদিকতা, ডিবেটিং, স্কাউটিং ও বিএনসিসি করতাম। ক্যাম্পাস’র কর্ণধার হেলাল ভাই একজন মহৎ হৃদয়ের মানুষ। অনেক সময় তাঁর সাথে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারিনি; তা সত্ত্বেও সেই ছাত্রজীবন থেকে আজ পর্যন্ত তাঁর স্নেহ থেকে এতটুকু বঞ্চিত হইনি। তাঁর একটি মহৎগুণ তিনি সবসময় সবাইকে ভালো কাজে উৎসাহিত করেন এবং Sorry বললেই সব ভুল ক্ষমা করে দেন।
কবি বলেছেন
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে,
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।
আমার দৃষ্টিতে ক্যাম্পাস’র সম্পাদক হেলাল ভাই এমনই একজন, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে সে প্রমাণ রেখে চলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ও বিশিষ্ট ছাত্রনেতা হয়েও তিনি সরকারি চাকরিতে যোগদান করেননি; নিবেদিত হয়েছেন দেশ ও জাতি উন্নয়নের কঠিন কর্মযজ্ঞে। এদেশের অগণিত শিক্ষিত বেকার ছাত্র-যুবকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করছেন তিনি।
শিক্ষা ও যুব উন্নয়নে নিবেদিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার মাধ্যমে তিনি দেশের শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে সেসবের সমাধানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন শিক্ষা সুযোগ নয়, অধিকার। ঢাকা মহানগরীতে ব্যতিক্রম ধারার গুণগত শিক্ষার যে পথপ্রদর্শক ঢাকা কমার্স কলেজ, সেই কলেজের অন্যতম উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা হেলাল ভাই। এরূপ বিশেষায়িত কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কাছে তিনিই প্রথম আবেদনকারী। ৮০’র দশকের শেষের দিকে কলেজ প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন মিটিংয়ে তাঁর সাথে আমিও গিয়েছি। বহু বছর তিনি এই কলেজ পরিচালনা পরিষদে থেকে ব্যতিক্রমী ধারার গুণগত শিক্ষা উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। কলেজ গভর্নিং-বডির মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে তিনি যে টাকা পেতেন, তা তিনি নিজ পকেটে ঢুকালেও অন্যদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন। তাঁর সরল কথা হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরাতো দেশ ও সমাজকে দিতে এসেছি, নিতে আসিনি। হেলাল ভাইয়ের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে ন্যায়ভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং আলোকিত জাতি গঠন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনে বিএনসিসি, ডিবেটিং, নাটক ও লেখালেখির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি সলিমুল্লাহ হলের বার্ষিক ম্যাগাজিন দুইবার অত্যন্ত সাফল্যের সাথে সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। সত্যিকথা বলতে কি, হেলাল ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনন্য সৃষ্টি।
তাঁর সহধর্মিণী ড. নাজনীন আহমেদও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স করেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনের সর্বস্তরে স্কলারশীপ প্রাপ্ত এবং সকল পাবলিক পরীক্ষায় শীর্ষস্থান অধিকারী। হেলাল ভাই এক কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক; তাঁর কন্যা আনতারা রাইসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, স্কাউট লিডার, কলামিস্ট। পুত্র মাহীর হেলালও স্কাউট লিডার এবং শিশু কলামিস্ট। তাদের দু’জনের লেখা দু’টি বই প্রকাশিত হয়েছে। ছোট ছেলে ওয়াসির খুব শীঘ্রই হয়ত লেখার কলম ধরবে। সত্যি কথা বলতে কি, এমন পরিবার ও ক্যাম্পাস’র কর্ম নিয়ে হেলাল ভাইয়ের জীবন বর্ণাঢ্য। তাই কবির ভাষায় বলতে হয়
উদয়ের পথে শুনি কার বাণী
ভয় নাই ওরে ভয় নাই,
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।
পরিশেষে হেলাল ভাইয়ের সৃষ্টি ক্যাম্পাস’র উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করি। ক্যাম্পাস আরও বড় হোক, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আর্ন্তাজিক পরিমন্ডলে প্রসারিত হোক। দেশ ও জাতির উন্নয়নে হোক গর্বিত অংশীদার।
প্রথম প্রকাশঃ জানুয়ারি ২০১৪