ক্যাম্পাস পত্রিকা অফিসে একদিন

পারভীন আক্তার পপি
সহকারী শিক্ষিকা রেনেসাঁ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ

ক্যাম্পাস নামটা শুনলে প্রথমেই মনে হয় এটি হয়ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যদিও এখানে পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে কোনো শিক্ষা দেয়া হয় না, তবুও আমি বলব আসলেই এটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ক্যাম্পাস’র সাথে জড়িত হলেই একজন মানুষ নিজেকে চিনতে শিখে, বুঝতে পারে নিজের অস্তিত্বকে, নিজের মধ্যে লুকায়িত ক্ষমতা সম্পর্কে জানে এবং তার সঠিক ব্যবহার করতে শিখে। মানুষের মনের মধ্যকার বিভিন্ন রকম জড়তা, হীনম্মন্যতা দূর করতে হলে অবশ্যই ক্যাম্পাস এ আসতে হবে, মিশতে হবে এখানকার কর্মীদের সাথে। তাই ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক কিছুই শেখার রয়েছে বলে এটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতোই। এখান থেকে যে কেউই জীবনের অনেক কিছু শিক্ষালাভ করতে পারে, প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার।  আমি যদিও ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র (সিএসডিসি) এর কোনো কর্মী নই, তবুও স্বামীর চাকরির সুবাদে ক্যাম্পাস পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আমার স্বামীর চাকরির সুবাদে ক্যাম্পাস এ আমি যাই।
সেদিন ক্যাম্পাস’র একটি সাধারণ সভায় আমি ছিলাম আমন্ত্রিত। শুধুমাত্র কৌতুহল মেটানোর জন্যই যাওয়া। কিন্তু সেখানে গিয়ে সবার সাথে পরিচিত হয়ে ও আলাপ করে আমার মনে হয়নি যে, এটা আমার জন্য এক অপরিচিত জায়গা। ক্যাম্পাস’র সকলের আন্তরিক ব্যবহার আমাকে এত মুগ্ধ করেছিল যে, আমি যেন এক অন্য মানুষ হয়ে গিয়েছিলাম। এখানকার সবাই এমন সহজ ও স্বতঃস্ফূর্ত মনে হয়েছিল যেন এরা আমার অনেক দিনের চেনা। অনুষ্ঠানে আমাদের দেশের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি, লেখক, সাহিত্যিক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এমন বিখ্যাত ও শিক্ষিত জনদের মাঝে উপস্থিত হতে পেরে সেদিন সত্যিই খুব ভালো লেগেছিল। এমন চমৎকার অনুভূতি হয়েছিল আমি যেন দেশের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট স্থানটিতে উপস্থিত রয়েছি।
অনেক অফিস আছে, যেখানে গেলে গাছ দেখা যায়। তারা ঐ গাছগুলি ভাড়া করে আনে অফিস ডেকোরেশনের জন্য। প্রথম দেখায় ক্যাম্পাসকেও তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু পরে জানতে পারলাম, এ সবই ক্যাম্পাস’র নিজস্ব চর্চায় লালিত গাছ। ছোটবেলা থেকেই আমি গাছ-গাছালি পছন্দ করি। প্রকৃতির এই সবুজ রংটির প্রতি আমার আকর্ষণ দুর্বার। বাসায় টবে আমি অনেক গাছ লাগিয়েছি। কিন্তু ক্যাম্পাস অফিসে গিয়ে আমার মনে হয়েছিল আমি যেন এক সবুজ অরণ্যে প্রবেশ করেছি, এই বুঝি মাথার উপর দিয়ে এক ঝাঁক টিয়ে পাখি উড়ে যাবে। স্কুল শিক্ষিকা হিসেবে বই পড়ানো আমার পেশা আর বই পড়া আমার নেশা। ক্যাম্পাস’র নিজস্ব লাইব্রেরি দেখে আমিতো মুগ্ধ, এ যেন বইয়ের এক মহাসমুদ্র। রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন, গল্প, উপন্যাস, কবিতা কি বই যে নেই! কোনো অফিসে এত সুন্দর লাইব্রেরি থাকতে পারে এটা আমার ভাবনায় ছিল না। ক্যাম্পাস লাইব্রেরি থেকে স্বামীর নামে ইস্যু করিয়ে আমি অনেক বই পড়েছি এবং আশা করি আরও পড়ব।
ক্যাম্পাস বিভিন্ন সেবামুলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিং। বর্তমান স্যাটেলাইটের যুগে কম্পিউটার ছাড়া মানুষের জীবনযাত্রা কল্পনাও করা যায় না। সেখানে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দানের মাধ্যমে দেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে ক্যাম্পাস। এখানে কর্মীদের কর্মস্পৃহা বাড়ানোর জন্য রয়েছে যুগোপযোগী ও ব্যতিক্রমী বিভিন্ন ওয়ার্কশপ ও সেমিনার। আমাদের দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে এ জাতীয় উদ্যোগ খুঁজে পাওয়া যায় না। আমি যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, সেখানে ক্যাম্পাস’র এ জাতীয় বহুমুখী কার্যক্রম সম্পর্কে অনেকের সাথে আলোচনা করেছি। সবাই ক্যাম্পাস কার্যক্রমের প্রশংসা করেছে, দেখার আগ্রহও প্রকাশ করেছে।
আমি ক্যাম্পাসকে ভালোবাসি। ভালোবাসি ক্যাম্পাস’র সকল কর্মী, গাছ-লতা-পাতা ও লাইব্রেরিকে। হেলাল ভাইয়া ও ড. নাজনীন ম্যাডামকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ ক্যাম্পাস তাদের হাত ধরে এত দূর উঠে এসেছে। তাই ক্যাম্পাস’র যত প্রাপ্তি সব কিছুর মূলে রয়েছেন জনাব হেলাল এবং নাজনীন ম্যাডাম। তবে হ্যাঁ যারা পর্দার আড়ালে থেকে ক্যাম্পাস’র সাফল্যের জন্য নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছে, তারা হচ্ছে ক্যাম্পাস’র সম্মানিত স্টাফ। তাই আমি মনে করি যে প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের এমন নির্ভেজাল ভালোবাসা, সে প্রতিষ্ঠান অবশ্যই দেশের এক নম্বর প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাবে। আমি ক্যাম্পাস’র সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।
প্রথম প্রকাশঃ এপ্রিল ২০১০