ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠান থেকে যা পেয়েছি
ম্রাচিং মারমা
ক্যাম্পাস’র শিক্ষানবিশ
কম্পিউটার যে আমার কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিল তা নয়; দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকায় আসার পর প্রায় দু’বছর ধরে কম্পিউটার ব্যবহার করছি। যদিও তা সামান্য কম্পোজ করা কিংবা বিভিন্ন ধরনের গেম খেলা, গান শোনা বা মুভি দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র পরিচালিত কম্পিউটার কোর্সে প্রশিক্ষণ নিতে এসে প্রথম অনুধাবন করলাম কম্পিউটার কী এবং কত বিশাল এর পরিব্যাপ্তি। ক্যাম্পাসই আমাকে শেখাল কম্পিউটার কীভাবে একজন মানুষের জীবন বদলে দেয়।
আজ আমি নিঃশঙ্কচিত্তে বলতে পারি, ক্যাম্পাস’র কম্পিউটার কোর্স একজন মানুষের জীবন সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে; বিশেষত সে যদি হয় পরিশ্রমী, ইতিবাচক দৃষ্টি-ভঙ্গিসম্পন্ন আর তার মাঝে থাকে দেশ গড়ার প্রত্যয়। কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের সূত্রে ক্যাম্পাস ছাত্র-যুবকদের আইটি ট্রেনিং ছাড়াও জীবন ও চরিত্র গঠনের যা যা শেখায় তা তার জীবন চলার পথে পাথেয়, দিক নির্দেশক ও আলোক বর্তিকা হয়ে থাকবে।
কম্পিউটার-জ্ঞান তথা তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের জীবনে সমৃদ্ধি ও দক্ষতা বৃদ্ধি, বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দেশের ব্যাপক জনশক্তিকে দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করা এ সকল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পরিচালিত হচ্ছে ক্যাম্পাস’র ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিং কর্মসূচি। ২০০৪ সালে শুরু হওয়া এ ট্রেনিং আজ শততম ব্যাচ ছাড়িয়ে সম্মুখে এগিয়ে; যা কিছু সাধারণ ও সহৃদয় মানুষের অসামান্য প্রচেষ্টার ফল।
বেসিক কম্পিউটার কোর্সের মাধ্যমে ক্যাম্পাস’র সাথে আমার পরিচয়। এরপর শুধু এগিয়ে চলা। কম্পিউটারের খুঁটি-নাটি সকল বিষয়ে দ্রুত এবং গভীর জ্ঞান অর্জনের সেরা মাধ্যম এই কোর্স। ক্যাম্পাস’র কম্পিউটার ট্রেনিং সম্পর্কে কিছু বলতে হলে প্রথমেই আমি বলব ট্রেনিংয়ের পেছনের সদাহাস্যময় কিছু মানুষের কথা, যারা সমাজের জন্য কিছু করতে সংঘবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ।
ক্যাম্পাস এ অতি সাধারণ একজন ট্রেইনি থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষকর্তা সবার যেন একটাই পরিচয় মানুষ; নেই কোন ভেদাভেদ। সবার হাস্যোজ্জ্বল মুখের মাঝে লুকিয়ে আছে দৃঢ় প্রত্যয়। সমাজ পরিবর্তন, দেশ থেকে দুর্নীতি-অনাচার-বৈষম্য দূর করে সকল নেতিবাচক চিন্তা-চেতনা-কর্ম থেকে দেশকে মুক্ত করে আগামীর পথে, অগ্রযাত্রার পথে, উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়ার অবিচল সংকল্প।
কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের মধ্য দিয়ে এখানকার উদারমনা প্রত্যয়ী মানুষগুলোর সঙ্গে মিশে আমি উপলব্ধি করলাম ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র যেন দেশনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিন বদলের সনদ বাস্তবায়নের আদর্শ হাতিয়ার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে ভিশন “রূপকল্প ২০২১” তা বাস্তবে রূপদান করতে বাংলার আপামর মানুষের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের যা যা করণীয় তাই একাগ্রচিত্তে করে যাচ্ছে ক্যাম্পাস। দেশের ছাত্রছাত্রী, বেকার-যুবক সবার মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে জ্ঞানের আলো; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির স্পর্শে তাদের করে তুলছে আগামীর স্বনিভর্র বাংলাদেশের উপযুক্ত নাগরিক।
ক্যাম্পাস বিনামূল্যে ছাত্র-যুবকদের মাঝে বিতরণ করছে কম্পিউটার জ্ঞান। তথ্য প্রযুক্তিতে তাদের করে তুলছে দক্ষ। পরবর্তীতে যুবসমাজের এই বেকাররা স্বকর্মসংস্থানের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করে তুলবে নিজেদেরকে। এভাবেই দেশের বেকার, যুব-সম্প্রদায় একদিন থাকবে না আর কর্মহীন। দেশের বিশাল এই জনশক্তি পরিণত হবে সুদক্ষ জনসম্পদে। ফলশ্রুতিতে বাড়বে দেশের প্রবৃদ্ধি; উন্নত থেকে উন্নততর হবে দেশ এ কোনো রূপকথা নয়। দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রীর দেখানো স্বপ্নের বাস্তব রূপদানের কারখানা যেন ক্যাম্পাস’র আপাত ছোট্ট পরিসর। পরিসর ছোট হলেও প্রতিটা কক্ষ থেকে শুরু করে শীর্ষ কর্মকর্তার বিশাল হৃদয় জুড়ে বয়ে চলেছে স্বতঃস্ফূর্ত কর্ম-প্রেরণার ফল্গুধারা এগিয়ে নিতে হবে নিজকে, এগিয়ে নিতে হবে নিজ প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসকে আর তার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে দেশের নতুন প্রজন্ম তথা জাতি। পরিশেষে বলব, ক্যাম্পাস’র প্রত্যেকের ভদ্র-নম্র-আন্তরিক ও বন্ধুসুলভ আচরণ আমাকে শুধু মুগ্ধই করেনি আমার ভেতরের ‘আমি’কে করে তুলেছে জাগ্রত।
কম্পিউটার ট্রেনিং ছাড়াও ক্যাম্পাস’র সামাজিক ও উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে আমি আমার ভেতরের জড়তা, সংকোচ, দ্বিধা, সকল প্রকার নেতিবাচক ধ্যান-ধারণা ত্যাগ করতে পেরেছি। ধীরে ধীরে হয়ে উঠছি একজন প্রোএকটিভ মানুষ। বস্তুত ক্যাম্পাস’র মাধ্যমে আমি তথ্য-প্রযুক্তির নতুন বিশ্বকে জানতে পেরেছি, বুঝতে পেরেছি। ক্যাম্পাস পরিবারের একজন সদস্য হতে পেরে আমি আজ গর্বিত। আমি এ প্রতিষ্ঠানের সমৃদ্ধি কামনা করি।
প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২০১১