আমার ভালোলাগা ও ভালোবাসার ক্যাম্পাস

আনিসুর রহমান এরশাদ
বিশেষ প্রতিবেদক

শুধু আমি কেন, বেশিরভাগ মানুষেরই নতুন অফিসে নিজকে মানিয়ে নেয়া নিয়ে শংকা থাকে। নতুন কর্মস্থল কেমন, বস কেমন, সহকর্মী কেমন এগুলো নিয়ে মনে থাকে অজানা শংকা। অনেক দিনের একটি পরিবেশ থেকে এসে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেয়া আসলেই সহজ নয়। পুকুরে যখন মাছের পোনা ছাড়া হয়, তখন পুকুরের পানির তাপমাত্রার সাথে সমন্বয় করেই পোনা ছাড়া হয়; তা না হলে পোনা মারা যাওয়ার আশংকা থাকে। বিদেশি গরু যখন গোয়ালে তোলা হয়, তখন ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়। একদিনের মুরগির বাচ্চার জন্যও ব্যবস্থা করা হয় তাপের। কিন্তু নতুন কর্মক্ষেত্রে মানুষের জন্য তেমন কিছু সাধারণত থাকে না। এদিক থেকে ক্যাম্পাস অফিস আসলেই ব্যতিক্রম। তাইতো বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবে ক্যাম্পাস’র সাথে সম্পৃক্ত হয়েছি, ক’দিন আগে। শুরু থেকেই এখানকার কর্মীগণ নতুন আমাকে উৎসাহিত করছেন এবং সহায়তা করছেন। ফলে ক্যাম্পাস পরিবারের নতুন সদস্য হয়েও এখানকার পরিবেশের সাথে একাত্ম হয়ে গেছি।
ক্যাম্পাস এ সবাই আপন, কেউ নয় পর
স্বল্প সময়েই ক্যাম্পাস ও এর সাথে সম্পৃক্তরা আমার খুব আপন হয়ে গেছে। আমাকেও তারা আপন করে নিয়েছে। সম্ভবত এখানে যারাই আসে, তারাই এমন আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশ পেয়ে মুগ্ধ, আশান্বিত ও উদ্বুদ্ধ হয়। ক্যাম্পাস অফিসে হাসিখুশি থাকতে পারি, সহকর্মীদের কর্মব্যস্ততা এবং ঊর্ধ্বতনের আন্তরিক আচরণ দেখে ভালো লাগে, কর্মপ্রেরণা জাগে। সপরিবারে উপস্থিত থেকে সম্পাদক মহোদয়ের সবার মাঝে নাস্তা পরিবেশনের দরদপূর্ণ ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করে। ক্যাম্পাস’র মুরুব্বী ৭৭ বছর বয়সি চাচা যখন বলেন, আমরা কাজের সময় প্রয়োজন ছাড়া কথা বলি না; তখন এই বয়সেও তাঁর এমন কর্মপাগল মন ও মনোযোগ আমাকে কর্মোদ্দীপ্ত করে।
ক্যাম্পাস অফিসঃ কাজের আনন্দময় পরিবেশ
আনন্দময় ও কর্মবান্ধব পরিবেশ গড়ে ওঠায় কর্মক্ষেত্র হিসেবে ক্যাম্পাস যেকোনো রুচিশীল ও মননশীল মানুষেরই পছন্দ হবে। আমি বিশ্বাস করি, একনিষ্ঠতা ও পরিশ্রমপ্রিয়তা না থাকলে সৃজনশীল চিন্তা ও গঠনমূলক কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করা যায় না। আর কাজের প্রতি মনোযোগ ও স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ তখনই থাকে, যখন কর্ম ও কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ পছন্দ হয়। সমালোচনা, তিরস্কারের চাইতে প্রশংসায় অনেক সময় কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। ভালো কাজের জন্য পুরস্কার এবং মন্দ কাজের জন্য তিরস্কার ক্যাম্পাস’র এই ব্যতিক্রমী রীতির কথা আমি জেনেছি। ক্যাম্পাস তার ব্যবস্থাপনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি ব্যবহার করে চলেছে। ফলে এখানে আনন্দময় কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে, যার ফলে আউটপুট হচ্ছে আশাতীত।
কর্ম ও কর্মক্ষেত্রের প্রতি স্টাফদের সম্মান
ক্যাম্পাস কর্মীদের পারস্পরিক মতবিনিময়ে মনে হয়েছে কর্মজীবনে তারা খুশি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নিজের কাজটাকে যদি বিনোদনের মতো আনন্দদায়ক হিসেবে নেয়া যায়, সবার জন্য আনন্দ-সঞ্চারী ও প্রশান্তিদায়ক পরিবেশ সুনিশ্চিত করা যায়, অন্যদের কাজে সহায়তার মাধ্যমে তৃপ্তি বোধ করা যায়; তবে এই ধরনের মনোভঙ্গি কর্মজীবনকে আনন্দময় করে তুলতে সহায়তা করে। ক্যাম্পাস’র কয়েকটি মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে আমি বুঝেছি, কর্ম ও কর্মক্ষেত্রের প্রতি সম্মান দেখানোর ক্ষেত্রে এখানকার কর্মীরা যথেষ্ট আন্তরিক।
পারস্পরিক সম্মানবোধ ও ইতিবাচক মনোভাব
পারস্পরিক সম্মানবোধ ক্যাম্পাস স্টাফদের আচার-আচরণে সুস্পষ্ট। কর্মক্ষেত্রটি আনন্দময় করে তুলতে সবাই সচেষ্ট। আমার মনে হয়েছে এখানকার সংস্কৃতিই এমন যে, কর্মক্ষেত্রে নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে চিন্তা না করে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে সবাই। তাই ক্যাম্পাস এ রয়েছে সুন্দর কর্মবান্ধব পরিবেশ। এখানকার সহকর্মীরা চমৎকার মন-মানসিকতার এবং ঊর্ধ্বতনরা সুবিবেচক, আন্তরিক; কর্মরতদের জন্য কাজের উপযুক্ত ব্যবস্থা, আরাম-আয়েশ ও প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে যতœশীল।
মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে ক্যাম্পাস’র দৃষ্টি
ক্যাম্পাস’র সম্পাদক এম হেলাল স্যার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সততা, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। মানুষের সংকীর্ণতা, সীমাবদ্ধতা ও অক্ষমতার দিকে বেশি দৃষ্টি না দিয়ে অফুরন্ত সম্ভাবনার বিকাশের দিকেই তাঁর বেশি মনোযোগ। তিনি বলেন কাউকে ২/১টি দোষের কারণে বরখাস্ত করা হলে তার অন্য ১০টি গুণ অকেজো হয়ে যায়; দোষের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা জরিমানা করা যায়, কিন্তু বরখাস্ত করা তার রিজিকের উপর হস্তক্ষেপ স্বরূপ। ক্যাম্পাস’র কর্মকর্তা-কর্মচারি-শিক্ষানবিশ-স্বেচ্ছাসেবক সবাইকে এই ধারণা দেয়া হয় যে প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চতর ডিগ্রি যথেষ্ট নয়, জীবনব্যাপী শিখতে হবে। সম্পাদক মহোদয়ের কথা হচ্ছে, স্বশিক্ষিত মানুষও সুশিক্ষিত ও অনুকরণীয় হতে পারে; আবার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত মানুষও অশিক্ষিত কিংবা পরিত্যাজ্য হয়।
ক্যাম্পাস কাজের গুণগত মান বজায় রাখে
ক্যাম্পাস অফিসের পরিবেশ অনেকের চেয়ে এগিয়ে এবং ব্যতিক্রম। সম্পাদক স্যার মনে করেন, ‘মন আর শরীর যদি চাঙা থাকে, সুস্থ থাকে তাহলে মানুষ এমনিতেই সৃজনশীল হয়ে ওঠে, তার কাজটা হয় পছন্দনীয়। পদ্ধতির অনুসরণই নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চাহিদামতো কাজটি সম্পন্ন হচ্ছে কিনা’। তাই স্যার আমাকে কাজের গুণগত মান বজায় রাখার ব্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহিত করেন এবং নির্দিষ্ট কাজ দেন। এরপর সময়মতো তা সম্পাদন করার চেষ্টা করি। শরীর আর মন সুস্থ রাখার এই মন্ত্রে আমি উজ্জীবিত।
জ্ঞানভিত্তিক ও জ্ঞান বৃদ্ধির সংগঠন ক্যাম্পাস
ক্যাম্পাস ইতোমধ্যেই একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার সংগঠন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই সংগঠনটি বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা ও গবেষণা কর্ম প্রকাশনার মাধ্যমে জ্ঞানের স্তর উন্নতকরণে সচেষ্ট রয়েছে। ক্যাম্পাস’র সাথে সম্পৃক্তরা অন্যদের কাছ থেকে শিখতে এবং নিজের জানা বিষয় অন্যকে অবহিত করতে তৎপর। সভা, সিম্পোজিয়াম, সেমিনারের মাধ্যমে এসব Common knowledge ছড়িয়ে দেয় ক্যাম্পাস যা সচেতন নাগরিক তৈরিতে ভূমিকা রাখে। সম্পাদক স্যারের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও তাঁর চিন্তাধারার সাথে পরিচিত হয়ে আমার মনে হয়েছে, শুধু সম্মানজনক জীবন যাপন ও মানসম্মত জীবিকা লাভের জন্যেই Knowledgeable হওয়া নয়, জীবনের সাথে জগতের উন্নত সমন্বয়ের স্বার্থেও জ্ঞানসম্পন্ন ও বুদ্ধিমান মানুষের দরকার।
ক্যাম্পাস’র কার্যক্রম বিস্তৃত পরিসরে
ক্যাম্পাস এ জ্ঞানের রূপান্তরের ২টি ধরন দেখা যায়। একটি হচ্ছে নীরবে সম্পাদিত, যেমন মেডিটেশন। আরেকটি হচ্ছে স্পষ্টভাবে সরবে সম্পাদিত, যেমন বিভিন্ন প্রকাশনা ও প্রশিক্ষণমূলক প্রোগ্রাম। এখানে জ্ঞান সৃষ্টি, জ্ঞান বিতরণ, জ্ঞানের আবিষ্কার, জ্ঞানের উন্নতি সাধনে কার্যকর ভূমিকা রেখে চলছে ক্যাম্পাস। বিভিন্ন কর্মসফল, অনুকরণীয় মানুষের সক্রিয় যোগাযোগ, ক্যাম্পাস স্টাফদের বিশ্বাস, চিন্তার স্বাধীনতাকে উজ্জীবিত করার মতো সুস্থ পরিবেশ গড়ে উঠছে। স্যারের সুযোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানের যে ভিশন ও কৌশল ঠিক করেছে, তা দেশ ও জাতির উন্নতিকেই ত্বরান্বিত করছে। নতুন প্রজন্মের জ্ঞানের উন্নতিতে সহায়তা প্রদান এবং জ্ঞান প্রসারে প্রবীণ প্রজন্মের অভিজ্ঞতার সমন্বয় করে এগিয়ে যাচ্ছে ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস নামের বৃক্ষটি তার শাখা-প্রশাখা আরো বিস্তৃত করায় সচেষ্ট রয়েছে। জ্ঞান উৎপাদন, জ্ঞান বিতরণের সাথে জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবানদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি ও জ্ঞানের দ্রুত বিস্তার ঘটাতে কাজ করে যাচ্ছে।
ক্যাম্পাস’র নিজস্ব সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস এমন একটি সংগঠন, যেখানে বুদ্ধিমত্তা ও সফলতার সাথে সাংগঠনিক পরিসরে শিক্ষা আদান-প্রদান এবং জ্ঞান সৃষ্টি-সংগ্রহ-বিতরণের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। ক্যাম্পাস তার স্বকীয়তা বা স্বাতন্ত্র্য অক্ষুণœ রেখেই নিজস্ব জ্ঞানকে বৃহত্তর কল্যাণে ব্যবহার করছে। সংশ্লিষ্টদের চিন্তাভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি ও রুচিবোধ দারুণভাবে প্রভাবিত হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের পরিবেশে। এখানে সময়দান ও পরিশ্রমই শুধু গুরুত্ব পায় এমনটি নয়, কৌশল ও বুদ্ধিমত্তাকেও বিবেচনায় নেয়া হয়। কাজ সম্পাদন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করে ক্যাম্পাস। সেজন্য ডক্যুমেন্টেশন ও প্রেজেন্টেশনে আধুনিক উপায়-উপকরণ ব্যবহার করা হয়। সার্বিক দিক দেখলে মনে হয় ক্যাম্পাস’র নিজস্ব একটি সংস্কৃতি আছে এবং এই সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে উপযুক্ত নিয়মনীতিও আছে। পরিবেশনা বা উপস্থাপনার সাথে বাস্তবতার হুবহু মিল তথা নীতির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকরণে ঊর্ধ্বতনদের তৎপর দেখেছি। প্রয়োজনীয় আবিষ্কার বা উদ্ভাবনে এবং পরীক্ষণ বা অনুশীলনে ব্যক্তি স্বাধীনতা বজায় রাখতে ঊর্ধ্বতনরা খেয়াল রাখেন।
ক্যাম্পাস’র রয়েছে নিজস্ব কর্ম প্রক্রিয়া
ক্যাম্পাস জনমানুষকে বেশি কর্মক্ষম তথা শক্তিশালী করে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে সচেষ্ট রয়েছে। জ্ঞানের উন্মেষ ও বিকাশের জন্য সুসংহত ও সুবিন্যস্ত পদ্ধতি প্রতিষ্ঠায় ক্যাম্পাস স্টাডি সেন্টার নির্মাণের মহতী উদ্যোগ রয়েছে। ক্যাম্পাস শুধু সমস্যা ও সীমাবদ্ধতাকে না দেখে অফুরন্ত সম্ভাবনার দিকেও নজর দেয় এবং মানুষের ভেতরের শক্তি তথা চিত্ত শক্তিকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান মনে করে। ক্যাম্পাস খুব ভালোভাবেই বোঝে, বৃহত্তর জনমানুষের জ্ঞানগত দক্ষতা ও সচেতনতা বাড়াতে পারলেই দেশ ও জাতি প্রকৃত অর্থে শক্তিশালী হয়ে উঠবে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, ক্যাম্পাস আমাদের প্রাণের প্রতিষ্ঠান। কিছু দেশপ্রেমিক ও নিবেদিত মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগে এটি গড়ে উঠেছে। ক্যাম্পাসকে আরো বেশি গতিশীল ও প্রাণবন্ত করার দায়িত্ব এর সাথে সংশ্লিষ্ট আমার আপনার সবার। ক্যাম্পাস থাকুক বিশ্বাসে, চেতনায়, হৃদয়ে চিরদিন অমলিন। ক্যাম্পাস এগিয়ে যাবে, এর সাথে সংশ্লিষ্টরা তাদের সুনিপুণ কর্মগুণে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এর চেতনাকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবে, এমনটাই আমার প্রত্যাশা। ক্যাম্পাস দীর্ঘজীবী হোক। জয় হোক সত্য ও সুন্দরের!!
প্রথম প্রকাশঃ ডিসেম্বর ২০১৫